ঢাকা-১৩ আসনের সমাবেশে আবদুস সালাম
সুবিধাভোগী বা নিজের স্বার্থ না দেখে জনগণের জন্য কাজ করা উচিত: আবদুস সালাম


বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম বলেছেন, সরকার যদি চাল, ডাল, তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে-ন্যায়মূল্যে বিতরণ নিশ্চিত করে-তাহলে গৃহস্থদের খাদ্য সমস্যা দূর হবে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর আদাবর থানায় এক সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রেশন ব্যবস্থার প্রসঙ্গে আবদুস সালাম বলেন, দলভিত্তিক বিতরণ বন্ধ করে সারাদেশের জনগণই যাতে রেশন পায়। কারণ অতীতে রেশন কাটার সময় কেউ পেয়েছে, কেউ পায়নি তাই এখানে যেন রাজনৈতিক ভেদাভেদ না থাকে।
সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও এলাকার কৃতিসন্তানদের সম্মানসূচকভাবে উপস্থাপন করেন।
আবদুস সালামের বক্তৃতার মূল ভাবধারা কেন্দ্রীভূত ছিল জনগণের জীবনমান উন্নয়ন-বিশেষত শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের উপর। তিনি মূলত দুইটি বড় কথা বলেছেন - (১) জনগণই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং (২) জনগণের ট্যাক্সের অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত। তিনি হাইলাইট করেন যে-সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় প্রকল্প নির্মাণ হলেও গরীব মানুষেরই সেই সুবিধা না পৌঁছানোই দিনের বাস্তবতা।
প্রতিটি ছেলে-মেয়েকে শিক্ষার সুযোগ করতে হবে
আবদুস সালামের দাবি, “প্রত্যেকের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। যেখানে স্কুল–কলেজ নেই, সেখানে স্কুল ও কলেজ করা হবে। যেখানে শিক্ষার সুযোগ সীমিত, সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি এক্ষেত্রে আর্থিক বাধা ও বেসরকারি শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণকে একটি বড় বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন। শিক্ষার খরচ বাড়ার ফলে গরীব পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা ছেড়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে তিনি শিক্ষা ব্যবস্থা বাড়াতে বিশেষ জোর দেবেন।
চিকিৎসা এখন ব্যবসা-গরীব মানুষ সেখানে যেতে পারে না
আবদুস সালাম বলেন, বড় বড় হাসপাতাল তৈরি হলেও সাধারণ গরীব মা–বোনেরা সেখানে ভর্তি হতে পারে না। ভর্তি হতে কত হাজার টাকা লাগবে, ডাক্তার দেখাতে কত হাজার টাকা লাগবে - এই টাকা তারা কোথা থেকে পাবে? -এই প্রশ্নটি তিনি বারবার প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি ট্যাক্স থেকে জারী হওয়া অর্থমূলক সেবা যাতে পৌঁছে যায় দরিদ্রদের কাছে, সে ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব বলে মনে করেন। সরকারি ও সস্তার ওষুধ সরবরাহ, দরিদ্রদের জন্য সরকারি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ-এসব তার প্রস্তাবের মূল দিক।
পুরুষ-নারী-সবার জন্য চাকরি নিশ্চিত করা হবে
অর্থনৈতিক দিক থেকে তিনি বলেন, আমাদের পুরুষরা প্রতিটি জায়গায় চাকরি পেলে আর কেউ বেকার থাকবে না। নারীবৃন্দ কর্মসংস্থানে অংশ নিলে পরিবারের রোজগার বাড়বে-এবং মা–বোনেরা শুধু ঘরে বসে নয়, গার্মেন্টসে কাজ করে, অফিসেও কাজ করে-তারা ইনকাম করে। তিনি নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিস্তৃত কর্মসংস্থানের ওপর জোর দেন।
দুর্নীতি, চুরি ও ক্ষমতার অপব্যবহার: জন্মগত সামাজিক সমস্যা
তিনি বলেন, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সবাই কাজ করতে হবে। মন্ত্রী, এমপি বা কাউন্সিলররা ক্ষমতায় গেলে দ্রুত ধনিভবন তৎপর হয়ে ওঠেন; আগে প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও পরে হিসাব-নিকাশ নেই।যারা ক্ষমতায় পৌঁছানোর পর জনগণের সম্পদ দস্যু–দলের মত লুট করে নেয়, তারা কখনই জনগণের বন্ধু হতে পারে না-এর বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছেন তিনি।
আবদুস সালাম বলেন, রাস্তা নির্মাণের বাজেট বাড়ানো, মূল্যের ফাঁক- এসব কৌশলে টাকা জোর বাড়ে; একটা রাস্তা তৈরি করতে হয় ৫০ লাখ টাকা, বাজেট বানায় ১ কোটির মতো, আবার অংশ ভাগ করে নিয়ে যায়”-এই ধরনের কুৎসিত কাজের কারণে প্রকৃত সেবা পৌঁছায় না। আমরা যদি চুরি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাস্তানী বন্ধ করতে পারি এবং জনগণ সচেতন হলে-সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সামাজিক ন্যায়বিচার ও জনকল্যাণ: সরকারের ভূমিকা
রাজনীতি করা, নেতা হওয়া মানে জনগণের সেবা করা; দলের সুবিধাভোগী বা নিজের স্বার্থ না দেখে জনগণের জন্য কাজ করা উচিত। আপনি যদি ন্যায়বান হন, সৎ হন, জনগণের কল্যাণে কাজ করেন-তাইলে শান্তি থাকবে।
ওয়ার্ডভিত্তিক সেবা ও হাসপাতাল-স্কুল নির্মাণ
আবদুস সালাম তার পরিকল্পনায় স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উদ্যোগের কথা বলেন-মোহাম্মদপুর-আদাবরকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভাগ করে ইনশাল্লাহ আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো। যেখানে স্কুল–কলেজ নেই সেগুলো বানিয়ে দেবো।” তিনি নিশ্চিত করেন যে, নির্বাচিত হলে তিনি স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণে তৎপর হবেন এবং দরিদ্রদের জন্য সরকারি ওষুধের ব্যবস্থা করবেন।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় ডাক্তার ও ব্যবসায়ীদেরও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে-মাসে ত্রিশ দিন ব্যবসা করে একদিন দরিদ্রকে দেবে না-এটা চলবে না।” এই অংশটি একটি নৈতিক আহ্বান-সম্পদের পুনর্বণ্টন ও সামাজিক দায়িত্বশীলতার উপর গুরুত্বারোপ।
ভিওডি বাংলা/জা