সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচন :
সরব আইনজীবীরা, নীরব এডহক কমিটি


সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সবশেষ ২০২৪ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত হয়। ‘বিতর্কিত’ সেই নির্বাচনে সভাপতিসহ চারটি পদে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিজয়ী হন, আর সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় পান আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।
এরপর জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামীপন্থি আইনজীবী নেতারা সুপ্রিম কোর্টে আসা বন্ধ করে দেন। সে সময় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন (এডহক) কমিটি। ২০২৫ সালের মার্চের আগেই নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সেই নির্বাচন হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এডহক কমিটির হাতেই চলছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না অধিকাংশ আইনজীবী।
সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের পর সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। অভিযোগ উঠেছে-অদৃশ্য কারণে এডহক কমিটি নির্বাচন দিতে অনাগ্রহী।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “গত ৬ মে আমি লিখিতভাবে এডহক কমিটিকে জানিয়েছি, অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় বারের গণতান্ত্রিক চরিত্র ব্যাহত হচ্ছে, সাধারণ আইনজীবীদের কাছেও ভুল বার্তা যাচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তলবি সভার মাধ্যমে এডহক কমিটি গঠন করা হয়। আমাকে সম্পাদক করা হলেও আমি অনির্বাচিত কোনো পদে দায়িত্ব নিতে রাজি হইনি। এখন প্রয়োজন দ্রুত নতুন নির্বাচন।”
জামায়াতে ইসলামীপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন হওয়া দরকার। অনেক জেলা বারে ইতোমধ্যে নির্বাচন হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গণতান্ত্রিক চর্চা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত বিষয়টি দেখবেন।”
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেন, “আমরা ১৬ বছর গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের জন্য লড়েছি। অসংখ্য সহকর্মী গুম, নির্যাতন ও কারাবরণ করেছেন। এখন আইনজীবীদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। কেন নির্বাচন হচ্ছে না, এর জবাব দিতে হবে এডহক কমিটিকেই।”
স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “বিগত কয়েক বছরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। চর দখলের মতো জোর করে চেয়ার দখলের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখানে এমন কী আছে যে পদটি কেউ ছাড়তে চায় না?”
তিনি এডহক কমিটির প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, “কোন কর্তৃত্বে এতদিন ধরে দায়িত্বে আছেন? নৈতিকতার জায়গা কোথায়? একবার বলেন রোজার পর নির্বাচন দেবেন, আবার বলেন পরিস্থিতি অনুকূল নয়-এই টালবাহানার কারণ কী? নির্বাচন দিলে হয়তো ব্যক্তিস্বার্থে ধাক্কা লাগবে, তাই বিলম্ব করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এডহক কমিটির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন বলে জানা গেছে।
তবে কিছুদিন আগে সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরাও নির্বাচন দিতে চাই। তবে চারপাশে এখনো মব কালচারের পরিবেশ বিদ্যমান। এ অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া কতটা সমীচীন, সেটি অনেকের মধ্যে প্রশ্ন।”
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপি-সমর্থিত ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং সম্পাদক নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শাহ মঞ্জুরুল হক। ভোট গণনা শুরু হয় ৯ মার্চ বিকেল ৩টার পর, প্রায় ৪৪ ঘণ্টা বিলম্বে। এর আগে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে হট্টগোল ও সংঘর্ষে শাহবাগ থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয়।
পরবর্তীতে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিশেষ সাধারণ সভায় এডহক কমিটি গঠন করা হয়। সভাপতি করা হয় ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে এবং সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। তবে তিনি দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন।
এডহক কমিটির হাতে এখনো চলছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি-তবে কবে হবে নতুন নির্বাচন, তা নিয়ে নীরবতা রয়ে গেছে সর্বোচ্চ আদালতের এই প্রভাবশালী সংগঠনে।
ভিওডি বাংলা/জা