কিশোরগঞ্জে তিন যুগ ধরে বুক দিয়ে তেলের ঘানি টানেন দম্পতি


বয়সের ভারে ন্যুজ শরীর। হাঁপিয়ে ওঠেন একটু টান দিলেই। তবু থামেননি মোস্তাকিন আলী ৬৫) বৃদ্ধ দম্পতি। তিন যুগ ধরে সংসার চালাতে বুক দিয়ে টানছেন তেলের ঘানি। গরু কেনার সামর্থ্য হয়নি কোনোদিন।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুরাকুটি পাগলাটারি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাকিন আলী। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘তেলী’ নামে। ভোরে ঘুম ভাঙে তার। দিনের শুরু হয় সরিষা সংগ্রহ দিয়ে। আশপাশের গ্রাম ঘুরে ৭০ টাকা কেজি দরে সরিষা কিনে আনেন। দুপুর নাগাদ বাড়ি ফিরে শুরু হয় ঘানি টানা। কাঠের গুঁড়ি আর ভারি পাথরের সঙ্গে বুকের জোরে চলে এই সংগ্রাম। পাশে থাকেন স্ত্রী ছকিনা বেগমও।
দিনে পাঁচ কেজি সরিষা ভেঙে শোয়া লিটার তেল আর তিন কেজির মতো খৈল পাওয়া যায়। বিকেলে বাজারে গিয়ে কেজি প্রতি ২০০ টাকায় তেল বিক্রি করেন। খরচ বাদে হাতে থাকে দিনে দুই থেকে আড়াইশ টাকা। এই আয় দিয়েই চলে সংসার। তবে বয়সের ভারে এখন ঘানি টানা আর আগের মতো হয় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, মোস্তাকিন আলীর বাড়ির আঙিনায় জোড়াতালি দেওয়া টিনের ছাপড়ার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে কাঠের ঘানি। বুকের ঘামে ভিজে প্রতিদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘানি টেনে চলেন এ বৃদ্ধ দম্পতি। তাদের একমাত্র ভরসা এই ঘানি। তবে বাড়ির টিনের ঘরটিও ঝুপঝাপ বৃষ্টিতে চুইয়ে পড়ে। ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমিজমা নেই।
মোস্তাকিন আলী বলেন, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঘানি টানা শুরু করি। এখন প্রায় তিন যুগ ধরে এভাবে সংসার চালাচ্ছি। কিন্তু বয়সের কারণে শরীর আর সায় দেয় না। হাঁপিয়ে যাই। কেউ যদি একটা গরু কিনে দিত, তাহলে সেই গরু দিয়েই ঘানি টেনে সংসারটা ভালোভাবে চালাতে পারতাম। আমার গরু কেনার টাকা নাই, তাই বুক দিয়েই টানতে হয়।
স্ত্রী ছকিনা বেগম বলেন, আমরা বিয়ের পর থেকে একসঙ্গে বুক দিয়ে ঘানি টেনে তেল বানাই। বয়স হয়েছে, শরীর আর পারছে না। তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। যদি একটা গরু পাওয়া যেত, তাহলে আমাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি তারা এভাবে বুক দিয়ে ঘানি টানেন। তারা আমাদের এলাকার মধ্যে সবথেকে গরীব এভাবেই চলে তাদের সংসার। আমরা এলাকাবাসী মাঝেমধ্যে সহায়তা করার চেষ্টা করি। তবে তাদের কেউ একটা গরু দিয়ে সহায়তা করলে তাদের জন্য ভালো হবে।
আরেক বাসিন্দা হালিম মিয়া বলেন, বর্তমান সময়ে বুক দিয়ে ঘানি টানা খুবই কষ্টদায়ক। তারা বয়স্ক হয়েছে তাদের এখন বয়স হয়েছে বুক দিয়ে তাদের পক্ষে ঘানি টানা সম্ভব হয়না। আমি দীর্ঘ সময় ধরে দেখছি তারা এভাবে ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দ্রুতই তাদের সরকারি সুবিধার আওতায় আনার চেষ্টা করব।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ