• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১
টপ নিউজ
ছনুয়া ইউনিয়নে নিজ উদ্যোগে রাস্তাঘাট মেরামত কিশোরগঞ্জে দূর্গামন্ডপ পরিদর্শন করলেন সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম পুলপাড় রায়ের বাজার মন্দির পরিদর্শনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মালদ্বীপে রফিকুল আলম মজনুকে সংবর্ধনা শারদীয় দুর্গাপূঁজা উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী মন্দির পূঁজা মন্ডপ পরিদর্শনে বিএনপি চীফ প্রসিকিউটর বনাম শেখ হাসিনার মামলার ৫৪তম সাক্ষ্যগ্রহণ আজ মেধা কাজে লাগালে বিশ্বে স্বনামধন্য হওয়া যায় - আবদুস সালাম হোয়াটসঅ্যাপের নতুন চমক ‘শিডিউল কল’ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের পূজা প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের দায়িত্ব রাষ্ট্র নেবে: আমিনুল হক

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০২ পি.এম.

এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া

খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করেছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা এটি দিবালোকে মত স্পষ্ট। পাহাড় তথা পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘ সময় ধরেই। যে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড় উত্তপ্ত করার চেষ্টা হয়েছে তা ডিবশ্লেষন করে দেখা যায় যে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মামলার এজাহারে উল্লেখিত সময়ে গ্রেপ্তারকৃত শয়ন শীল খাগড়াছড়ি বাজারের বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটা করছিলেন। এছাড়া এ ঘটনায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক ডা. জয়া চাকমা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, "ওই ছাত্রীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এমনকি সে ধর্ষণের শিকারও হয়নি।" প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের সবকটিই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগ প্রক্রিয়া না মেনে সুসংগঠিতভাবে অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, ঘরবাড়ি পোড়ানো, পর্যটক হয়রানি এবং একে জাতিগত সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া দুঃখজনক। পরবর্তীতে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতে আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা এবং তৈইচিং মারমা নামে তিনজন নাগরিক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ডাকসু পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত হামলা, সশস্ত্র সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য উদঘাটন করতে হবে। মনে রাখতে হবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে দীর্ঘ দিন যাবতই। বিভিন্ন স্থান থেকে এ বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করা হলেও দুঃখজনকভাবে প্রশাসন কিংবা সরকার সে দিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। আর সেই অবহেলার ফলেই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের প্রতি এমন উদাসীনতা কখনোই কাম্য ছিল না। এই ষড়যন্ত্রকে কোনভাবেই সফল হতে দেয়া যাবে না। সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে হালকা কথা-বার্তা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলে হবে না। অখণ্ড বাংলাদেশ ও সবাই বাংলাদেশি এই পরিচয়কে ধারণ করতে হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে এই বক্তব্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতিকে বিভক্ত করা আমাদের কাম্য হতে পারে না। আমরা কেউই স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এটা কামনা করতে পারি না। বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই জাতিকে বিভক্ত করার মানসিকতা দেখেছি। এখানে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যে বাণিজ্য হয়েছে, রাজনীতিকরণ হয়েছে, রাজনৈতিকভাবে বাণিজ্য হয়েছে, চেতনা বিক্রি করতে করতে যে বিভক্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে সবাই সশস্ত্র সংগ্রামে না থাকলেও মানসিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল এবং দেশের সব মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অনেক আগে থেকেই একটি আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা চালু রয়েছে, সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সাম্প্রতিককালে কুকিচিনের ঘটনা দেশবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনীকেও চিন্তিত করেছে। যেটা আমরা সাদা চোখে দেখছি, সেটার পেছনেও পর্দার অন্তরালের কারণ আছে। এখানে আমাদের পার্বত্য অঞ্চল ও ভারতের একটি অঞ্চল, মিয়ানমারের একটি অঞ্চল নিয়ে আরেকটি বৈশ্বিক কোনো কোনো শক্তির পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই ভূখণ্ডকে হয়তোবা তারা অন্যভাবে সাজাতে চায় বলেই ভূ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারনা। সে জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে; যাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেকোনো এ রকম পরিকল্পনা আমাদের ভূখন্ডকে নিয়ে সফল হতে না পারে। আমাদের সকল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী, উপজাতি ও আধা উপজাতি- সব জনসমষ্টি, সব সত্তাকে বাংলাদেশি হতে হবে একটি ঐক্যবদ্ধ নেশন (জাতি) তৈরিতে। সেই ঐক্যবদ্ধ জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্যই আমরা একাত্তরের পর চব্বিশে আবার রক্ত দিয়েছি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নিকট ‘তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব’ দাবির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত বিক্ষোভণ্ডসমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ইউপিডিএফকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত নিষিদ্ধ করার দাবি বিক্ষোভকারীরা। দলটির অন্যতম নেতা মাইকেল চাকমা, যার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যাকাণ্ড, মানুষ অপহরণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার দল ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন যাবৎ পাহাড়ে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা কাজে জড়িত। পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছে না। সেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা হবে আত্মঘাতি। পাহাড়ের অধিতকাংশ জনগোষ্টি অনেকেই মনে করেন যে, দেশদ্রোহী মাইকেল চাকমা, সন্তু লারমা, প্রসীত খীসা, প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, দেবাশীষ রায়, ইয়েন ইয়েনসহ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সব গডফাদারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে এ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সংঘাত সংঘর্ষও হয়েছে। গত ২০ জুলাই খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবি ও ইউপিডিএফের মধ্য গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। পরে অভিযান চালিয়ে কয়েক রকমের অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে বিজিবি।

চলতি বছরের ১৫, ২১,২৩ জানুয়ারি ইউপিডিএফ (মূল) দলের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নানারকম অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এর মধ্য রয়েছে- মরণঘাতী অস্ত্র, বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র এবং লকেট লাঞ্চার, গ্রেনেড, এ কে ৪৭, ম্যাগজিন, এমণ্ড৪ কার্বাইন, ৪০ এমএম গ্রেনেড লঞ্চার, চায়না রাইফেল, নাইন এমএম পিস্তল, এসএলআর, এসএমজি, এলজি, বিমানবিধ্বংসী রিমোট কন্ট্রোল বোমা, গ্রেনেড, হেভি মেশিনগান, জি-৩ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল। এসব অত্যাধুনিক প্রাণঘাতী অস্ত্রের মজুত রয়েছে দেশের তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে থাকা পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব অস্ত্রের জন্য খাগড়াছড়ির মণিপুরের তারাবন এলাকায় রয়েছে অস্ত্রের গুদাম। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, অপহরণ আর আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব অস্ত্র। অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের মজুত, চাঁদাবাজি আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীরা এখন স্বপ্ন দেখছে তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার। তিন পার্বত্য জেলায় কাজ করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মাধ্যমে জানা যায়, তাদের দাবি-দাওয়ার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি ‘জুম্মল্যান্ড’ গঠনের অন্তর্নিহিত ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্যের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানচিত্র যোগ করে কল্পিত ‘জুম্মল্যান্ড’-এর মানচিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে। তারা জানান, ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চারটি আঞ্চলিক সংগঠনের সশস্ত্র গ্রুপের রয়েছে আর্ম ক্যাডার ও সেমি আর্ম ক্যাডার বাহিনী। এর মধ্যে আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। অন্যদিকে সেমি আর্ম ক্যাডারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। সেমি আর্ম ক্যাডাররা অস্ত্রে প্রশিক্ষিত। তারা ভবিষ্যতে সংগঠনগুলোর জন্য কাজে লাগে। এসব সন্ত্রাসীর কাছে কয়েক হাজার আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।

দীর্ঘ সময় দলেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছে প্রতিবেশী দেশসহ ষড়যন্ত্রকারী আর্ন্তজাতিক গোষ্টি। কোন এক অজ্ঞাত কারণেই বিগত ফ্রাসীবাদী সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সেনা চৌকিগুলো উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, ফলে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। সবচয়ে আশংকাজনক ও ভয়ঙ্কর দুঃসংবাদ হচ্ছে, এই উগ্রবাদী পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পাহাড়িদের সঙ্গে মিশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কেনার জন্য লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। এতে করে স্থানীয় লোকজনের মধ্য ভয় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। এ সমস্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের কারণে পাহাড়ি কৃষকরা ঝুম চাষ, গাছ-বাগান পরিচর্যা, কৃষি খামার, মৎস্য ও গরু-মহিশের খামার এবং ফলের বাগান পরিচর্যার জন্য পাহাড়ে যেতে পারছে না। সাধারণ মানুষ আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার মধ্য জীবনযাপন করতেছে। এমতাবস্থায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবিলম্বে পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে পাহাড়ি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিতে হবে। পার্বত্য এলাকা নিয়ে বিদেশিরা দীর্ঘদিন ধরে একটি খ্রিষ্টান রাজ্য বানানোর চেষ্টা অব্যাহত আছে। অন্যদিকে ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব দাবির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্য বার্মার আরাকান আর্মিকে করিডোর দেওয়ার ভয়াবহ চিন্তাও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ হবে। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ছাত্র জনতার প্রতিরোধের মুখে নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারকে বেকায়দায় ফেলা এবং দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির যে নানামুখী অপচেষ্টা তারই অংশ হিসাবে পাহাড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির রক্ষে একের পর এক চক্রান্ত চলছে। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ও মিথ্যাচার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে বলে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই সকল অপপ্রচারের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রমকে ব্যাহত করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতির অপব্যবহার। দুষ্কৃতিকারী দমনে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত যেকোনো অভিযানকে ঐ স্থানের ধর্মীয় উপাসনালয়, কিয়াংঘর কিংবা ভাবনা কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক আক্রমণ বা পবিত্রতা লঙ্ঘনের তকমা দিয়ে তারা স্থানীয় ধর্মভীরু জনসাধারণের মনে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সাথে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলেও এ সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর ভাবমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে। একটি চিহ্নিত মহল দাবি করে সেনাবাহিনী যমচুগ এ অবস্থিত ভাবনাকেন্দ্র অবমাননা করেছে, ভাবনাকেন্দ্র দখল করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনা করছে এবং জোরপূর্বক স্থানীয় লোকজনকে উচ্ছেদ করছে। তাদের আবদার নিরাপত্তা বাহিনী যেন ঐ সকল স্থানে অবস্থান না নেয়। স্থানীয়দের সূত্রমতে, ভূ-প্রকৃতি গত কারণে বন্দুকভাঙ্গা এলাকাটি দুষ্কৃতি সহায়ক তথা অপরাধপ্রবণ এলাকা। উক্ত এলাকার দুর্গমতার সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত জেএসএস ও ইউপিডিএফ নামধারী আঞ্চলিক দলগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এলাকাটিকে সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করে রেখেছে। এমনকি ঐ স্থানের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে গত কয়েক বছরে নিহত হয়েছে প্রায় ২০-২৫ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী। মূলত একারণেই সেনাবাহিনী ঐ অঞ্চলে সন্ত্রাস নির্মূলে উক্ত অভিযান পরিচালনা করে। আর সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্মীয় উপাসনালয়ে ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি নিতান্তই দুষ্কৃতিকারীদের ঐ অঞ্চল থেকে দ্রুত নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে পুনরায় তাদের আধিপত্য বিস্তারের একটি অপকৌশল বলেও গবেষকরা মনে করেন। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এটি অনেকটাই দিবালোকের মত স্পষ্ট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে এবং স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, পাহাড়কে অশান্ত করতে একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। যার যার অবস্থান থেকে দল-মত-নির্বিশেষে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, তাতে ষড়যন্ত্র রোধ করা কঠিন। বেশি প্রয়োজন ধৈর্য ও ঐক্যের। আমাদের বাংলাদেশি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।  উগ্র সন্ত্রাসীদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চিরতরে বিতাড়িত ও নিষিদ্ধ করতে হবে, এ অঞ্চলে দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করে ন্যায় ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, একই সাথে বাঙালি ও উপজাতি—উভয়ের জন্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সকলকে মনে রাখতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু উপজাতিদের জন্য নয়, শুধু বাঙালিদের জন্যও নয়। এটি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ—এটি সবার, সমগ্র জাতির সম্পদ। তাই সরকারের উচিত হবে, এই ষড়যন্ত্রকে রুখে দিতে হবে জাতীয ঐক্যের মাধ্যমে,  বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামের এই সংকট আপাতদৃষ্টিতে সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াই মনে হলেও এটি মূলত আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের অংশ, যা এই অঞ্চলের মানুষের জনজীবনকে বিপন্ন করার পাশাপাশি অনগ্রসর এলাকার উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বপ্নকেও বাধাগ্রস্ত করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতা তৈরি হলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রভাব পড়বে খুব সহজেই। অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক কৌশল আর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাবে সমতলে অস্থিরতা তৈরিতে সুবিধা করতে না পেরে এবার পার্বত্য চট্টগ্রামকে টার্গেট করেছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এটা শুধু গোপনে নয়, প্রকাশ্যেই করা হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে প্রচার করা উসকানিমূলক তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলেই এই অভিযোগের সত্যতা মিলবে। ভারতের এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হলে শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। সেখানে বসবাস করা বাঙালি ছাড়াও ১৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে আস্থায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে সরকারকে।

লেখক : রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক 

ভিওডি বাংলা/ এমএইচপি

[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়]


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন থেকে কি শিক্ষা ও করণীয় নির্ণয় হবে?
৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন থেকে কি শিক্ষা ও করণীয় নির্ণয় হবে?
তারিখটা বদলায়নি, কিন্তু সকালটা আগের মতো নেই !
তারিখটা বদলায়নি, কিন্তু সকালটা আগের মতো নেই !
দলটি কিসের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়ায়? বঙ্গবন্ধুর, নাকি শুধুই ক্ষমতার
দলটি কিসের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়ায়? বঙ্গবন্ধুর, নাকি শুধুই ক্ষমতার