মারখালীতে দেড় লাখ ঘনমিটার বালু লুট, থানায় জিডি


কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গড়াই নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজিং করা ইজারাকৃত প্রায় দেড় লাখ ঘনমিটার বালু লুটের অভিযোগ উঠেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা মৌজায় বালু লুটের এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে ইজারাকৃত প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম থানায় এক সাধারণ ডায়েরী ( জিডি) করেছেন। জিডি নম্বর ১৩৪।
শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কয়ার রায়ডাঙ্গা গোরস্তানের পিছন দিকে অবস্থিত গড়াই নদী। সেখানে নদীতে বসানো রয়েছে দুইটি অবৈধ ড্রেজার। পাইপের সাহায্যে বালু ফেলা হচ্ছে গোরস্তান সংলগ্ন সৌদি প্রবাসী সাইদুল ইসলামের আমবাগানে। ভরাট করা হয়েছে রায়ডাঙ্গা ঈদগাহ মাঠ।
থানায় করা জিডি, স্থানীয় ও একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৩ জুন গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গড়াই নদীর ড্রেজিংকৃত বালু বিক্রয়ের জন্য কারিগরি উপকমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গড়াই নদীর কয়া ও রায়ডাঙ্গা মৌজায় ৬ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার বালু বিক্রয় করে অপসারণের দরপত্র আহবান করে পাউবো। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পাঁচ কোটি ১৭ লাখ টাকায় ইজারা পাই কয়ার মেসার্স প্রিয়াংকা ব্রিকস। প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা জমা প্রদান শর্তে ইজারাদার বালু বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হলে ১২ সেপ্টেম্বরর বালু বিক্রি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করে এবং বালু অপসারন কাজ বন্ধ করে দেয়।
এরপর স্থানীয় প্রভাবশালীদের হুমকি ও কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ঠিকাদার এসকেবেটর, পেলোডার, ড্রাম ট্রাক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেই। আর ঠিকাদারের অনুপস্থিতিতে রায়ডাঙ্গা মৌজায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা ড্রেজার বসিয়ে বালু লুট শুরু করেন।
আরো জানা গেছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ ঘন মিটার বালু লুট করে কয়া ইউনিয়নের রায়াডাঙ্গা ইদগাহ, রায়ভাগা গোরস্থানে এবং বানিজ্যিক ভাবে অন্যত্র বিক্রি করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা।
এ সময় ড্রেজার পরিচালনাকারী স্থানীয় হাসেম আলী বলেন, মাসখানেক হল নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছি। এতোদিন ঈদগাহ ও গোরস্তানে দিছিলাম। প্রতি ফিট ৪টাকা দরে দুই দিন ধরে সাইদুলের আমবাগানে দেওয়া হচ্ছে। তার ভাষ্য, গেল একমাসে তিনি প্রায় ২৫ হাজার ঘন ফিট বালু বিক্রি করেছেন।
কয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি মাসুদ রানা বলেন, এতোদিন আমরায় বালু তোলার বিরোধীতা করেছি। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বালু তোলা হচ্ছে।
প্রিয়াংকা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা ব্যক্তিগত সুবিধা না পেয়ে ১২ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে বালু বিক্রি বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু তারাই এখন ইজারাকৃত বালু লুট করে বিক্রি করছে। এতোদিনে প্রায় দেড় লাখ ঘনমিটার বালু লুট করেছে প্রভাবশালীরা। যার বাজার মূল্য ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। তবে তিনি কোনো প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ করেননি।
বালুর ঘটনায় লিখিত জিডির কথা স্বীকার করেছেন কুমারখালী থানার ওসি খন্দকর জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, বালুর ইজারা দিয়েছে পাউবো। বালু লুটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ