• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

গৌরবের অধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী ব্যুরো    ৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৮ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

রাজশাহী মহানগরীর উপকন্ঠ বিভাগীয় স্টেডিয়ামের অদুরে সিলিন্দা এলাকায় প্রায় ৬৮ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিকমানের এই ক্যাম্পাসের কাজ শেষে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হলে রাজশাহীতে এক যুগান্তকারি অধ্যায় সৃষ্টির পাশাপাশি অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। শিক্ষা ও গবেষণার সাথে যুক্ত হবে নতুন এক মাত্রা। আনাগোনা বাড়বে দেশ-বিদেশের অনেক শিক্ষার্থী ও গবেষকদের। এমবিবিএস ডাক্তার-শিক্ষার্থী ও নার্সদের একাডেমিক চর্চা ও সেবার মানেও মানোন্নয়ন ঘটবে। জমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ শেষে গত বছরের ১ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হয়েছে। বর্তমানে চলছে দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটকের নির্মাণ কাজ। ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজ অস্থায়ীভাবে চলছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতাল এলাকার বিভিন্ন ভবনে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো কার্যক্রম শেষ হতে ২০২৯ সাল নাগাদ লাগতে পারে।

প্রাতিষ্ঠানিক সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে ১২০০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। ১০টি চিকিৎসা অনুষদের অধীনে ৬৮টি বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া দেয়া হবে এখানে। রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি অনুষদের অধীনে ৮৫টি ডিসিপ্লিনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। 

এছাড়া চিকিৎসা সেবার মানকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে এখানে চলবে গবেষণা কার্যক্রম। সম্প্রতি দৈনিক আমাদের রাজশাহী’র সাথে আলাপচারিতায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাঃ জাওয়াদুল হক বলেন, ‘ইতোমধে দৃশ্যমান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ, কেন্দ্রিয় লাইব্রেরি, ভিসির বাংলো, আবাসিক এলাকা, ডাক্তার ও নার্সিং হোস্টেল, মরচুয়ারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ ২১টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গবেষক-শিক্ষক, বিদেশি অতিথী ও সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের জন্য নির্মিত হবে দশ তলা বিশিষ্ট ‘স্টার’ মান সমতুল্য আন্তর্জাতিকমানের আবাসিক হোটেল। থাকবে ক্যাম্পাসজুড়ে সবুজায়নের আচ্ছাদন, একাধিক সাবস্টেশন, খেলার মাঠ, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আবসনের জন্য কোয়ার্টার, বিশালাকার জলাধার, চতুর্থতলা ভবনে থাকবে স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার। নির্মিত হবে দশ তলা বিশিষ্ট দুটো ডরমেটরিসহ অন্যান্য স্থাপনা। 

এছাড়া থাকবে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা। ভিসি বলেন, ‘রাজশাহীতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টি যেমন রাজশাহীর জন্য আর্শীবাদ, ঠিক তেমনিভাবেই এটি গৌরব করার মতো একটি বিষয়। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান যে শহরে হচ্ছে সেখানের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের গতি বাড়বে স্বাভাবিক কারণেই। দেশ ও বিদেশেও উচ্চারিত হবে বিভাগীয় এই শহরের নাম’।

নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, প্রথমে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮৬৭ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণের ব্যয়সহ পরবর্তীতের নির্মাণ উপকরণের মূল্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির কারণে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছিল। সেখানে পূর্বের সেই প্রকল্প ব্যয়ের সাথে আরও যোগ হয়েছে ৫৩৩ কোটি টাকা। গত ৯-১১-২০২৩ ইং তারিখে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় রামেবির সংশোধিত প্রকল্পে ২৪০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের ১৪ জুন ২০২২ রামেবি স্থাপন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদিত হয়। রাজশাহী মহানগরীর বড়বনগ্রাম এবং পবা উপজেলার বারইপাড়া ও বাজে সিলিন্দা মৌজার প্রায় ৬৮ একর জায়গায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাঃ জাওয়াদুল হক বলেন, ‘আমাকে যেহেতু রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; তাই কাজ করতে গিয়ে ভুলক্রমে বা নিজের অজান্তেই কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে। সেবিষয়গুলো ধরিয়ে দেবার দায়িত্ব সকলের। সকল শ্রেণী পেশার মানুষদের নিয়ে আমি কাজ করতে চাই। ভালো করছি না খারাপ করছি তা দেখভাল করার দায়িত্ব সকলের। আমরা যে কাজ করছি সেটা জনগণ কিভাবে দেখছে; ভালো করছি না খারাপ করছি সেবিষয়ে জনগণের মতামত আমাদের কাম্য। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আমাদের কাজে কোন গ্যাপ হচ্ছেনা। সমাজে অনেক লোক আছেন যারা নিজের কথা না ভেবে সমাজ তথা দেশের কথা ভাবে। এই ধরনের লোক আছে বলেই সমাজের উন্নয়ন হয়। তাই নির্মাণাধীন এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ভাল কোন পরামর্শ থাকলে সেটা আমরা অবশ্যই শুনবো। আমরা কতটুকু কাজ করলাম, কি কাজ করলাম; এটা জনগণের জানার অধিকার আছে’।

জানতে চাইলে নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে উপাচার্য জাওয়াদুল হক বলেন, ‘আমি মূলত একাডেমিক শিক্ষক। দীর্ঘ সময় শিক্ষকতা করেছি। মুলত পেশায় একজন ডাক্তার হলেও; জীবনের প্রথম আট বছর মেডিকেলে কাজ করেছি। পোস্ট গ্রাজুয়েট করার পর পাবলিক হেলথে ধারাবাহিকভাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছি। জাওয়াদুল হক ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে ১৯৯৩ সালে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। 

তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবেও তিনি কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, প্রিভেন্টিভ ও সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা ডিন, নিয়োগ কমিটির সদস্য, সংবিধি কমিটি ও ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কলেজ পরিদর্শক এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করেছেন। ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং পরেরদিন ১০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জীবন বাঁচাতে আকুল আবেদন কফিল উদ্দিনের পরিবারের
জীবন বাঁচাতে আকুল আবেদন কফিল উদ্দিনের পরিবারের
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সম্পন্ন
পাংশায় ৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত
পাংশায় ৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত