• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

স্বৈরাচারকে আশ্রয়

ভারত বিরাগভাজন হলে আমাদের কিছু করার নেই

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:২০ পি.এম.
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি-সংগৃহীত

ভারত যদি স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিবিসি বাংলার তরফে প্রশ্ন ছিল, একটা বিষয় যদি বলি, পাঁচই আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এবং আপনিও জানেন যে, শেখ হাসিনা দিল্লিতে গেছেন এবং সেখানে আছেন। ভারতের সঙ্গে একটা সম্পর্কের শীতলতা দেখা গেছে, গত এক বছর ধরে। যেমন ধরুন সেটি যাওয়া আসার ক্ষেত্রে ব্যবসার ক্ষেত্রে নানা রকম, সেই ক্ষেত্রে কী কোন পরিবর্তন আপনার সরকারে আসলে হবে বা পরিবর্তনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন, এমন কোন চিন্তা কি আপনাদের আছে?

তারেক রহমান বলেন, এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সঙ্গে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সঙ্গেই থাকতে হবে।

বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে যেই সম্পর্ক ছিল, সেটা নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। তো ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আপনাদের নীতি কী হবে?

তারেক রহমান বলেন, আমার মনে হয়, আপনি একটু আগে যে প্রশ্নগুলো করেছেন, সেখানে বোধহয় আমি ক্লিয়ার করেছি পুরো ব্যাপারটা। সবার আগে বাংলাদেশ। এখানে তো আপনি পার্টিকুলার (সুনির্দিষ্ট) একটি দেশের কথা বলেছেন। এখানে ওই দেশ বা অন্য দেশ তো বিষয় না। বিষয় তো হচ্ছে, ভাই বাংলাদেশ আমার কাছে আমার স্বার্থ, আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখবো, আমার দেশের স্বার্থ দেখবো। ওটাকে আমি রেখে আপহোল্ড করে আমি যা যা করতে পারবো, আমি তাই করবো।বাংলাদেশ ভ্রমণ প্যাকেজ

বিবিসি বাংলা আরও প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের স্বার্থ আপনারা সবার আগে নেবেন, সেটা আপনি পরিষ্কার করেছেন। ভারতের কথা বিশেষভাবে আসছে যেহেতু সেটি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ এবং বাংলাদেশের তিন পাশেই এই দেশটির সীমান্ত রয়েছে। এবং এটি নিয়ে আপনিও জানেন যে, বিভিন্ন সময়ে কথা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তো সম্পর্ক নিয়ে বললামই সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত বা কেমন থাকা প্রয়োজন- এ নিয়ে আপনার চিন্তা কি?

তারেক রহমান বলেন, অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাইনা না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নেবো না।

বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে তারেক রহমানের কাছে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের স্বার্থের প্রসঙ্গে আপনি বলছেন যে, পানির হিস্যা চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যার বিষয়টি নিয়ে আপনারা সোচ্চার থাকবেন?

তারেক রহমান এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, না না, আমি উদাহরণ দিয়ে বললাম। দুটো উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম আপনাকে, যে আমাদের স্ট্যান্ডটা কি হবে। আমরা আমাদের পানির হিস্যা চাই। অর্থাৎ আমার দেশের হিস্যা, মানুষের হিস্যা আমি চাই, হিসাব আমি চাই। আমার যেটা ন্যায্য সেটা আমি চাই। অবশ্যই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে, আমার মানুষের উপরে আঘাত আসলে অবশ্যই সেই আঘাতকে এভাবে আমি মেনে নেবো না।

বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, কূটনীতির প্রসঙ্গে আসি, বিএনপি যদি সরকার গঠন করে তবে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?

তারেক রহমান বলেন, গুড কোশ্চেন। বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির নীতি সবার আগে বাংলাদেশ। আমার জনগণ, আমার দেশ, আমার সার্বভৌমত্ব। এটিকে অক্ষুন্ন রেখে, এটি স্বার্থ বিবেচনা করে, এই স্বার্থকে অটুট রেখে বাকি সবকিছু।

বিবিসি বাংলার আরও প্রশ্ন ছিল, এটাকে বৈশ্বিক রাজনীতির একটা প্রভাব বলা যায়? কারণ আপনি যদি বিভিন্ন দেশে দেখেন, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পও আমেরিকা ফার্স্ট একটা স্লোগান দিয়ে এসেছিলেন?

তারেক রহমান বলেন, না, ওদেরটা ওরা বলেছে, আমি ভাই বাংলাদেশি। আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বড়, আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বড়। কাজেই কে কি বললো... সবার আগে বাংলাদেশ, সিম্পল, কমপ্লিকেট (জটিল) করার কিছু নেই, এটা সিম্পল ব্যাপার।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিষয়টি রাজনৈতিক এটি কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়। আমরা চাই অন্তর্বরতীকালীন সরকার সফল হোক। অর্থাৎ এখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হলো সংস্কার, আরেকটি প্রত্যাশিত সুষ্ঠু নির্বাচন। কিছু সংস্কার যেগুলো না করলেই নয় এসব করাসহ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করাই এই সরকারের মূল লক্ষ্য। আমরা প্রত্যাশা করি ওনাদের ওপর মূল যে দায়িত্ব সেটি তারা সঠিকভাবে পালন করবেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে এটাই আমাদের ওনাদের কাছে চাওয়া। আমরা প্রত্যাশা রাখি সেটি ওনারা সঠিকভাবে করবেন। এই কাজটি কতটুকো ভালো বা মন্দভাবে করতে পারছেন তার ওপরেই মনে হয় সম্পর্কের উষ্ণতা বা শীতলতা নির্ভর করবে।

উপস্থাপক প্রশ্ন করেন, আপনি একটি বক্তব্যে বলেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেছিলাম তিনি বলেছিলেন আপনার (তারেক রহমান) মনে সন্দেহ রয়েছে কী না তা তিনি জানতে চান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যখন এই কথাটি বলেছিলাম সেই সময় পর্যন্ত ওনারা নির্বাচনের সময় বা এ বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু বলেননি। সে কারণেই শুধু আমার মনের মধ্যে নয়, আমরা যদি সেই সময়ে বিভিন্ন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব দেখি যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রায় সকলের মনের মধ্যেই সন্দেহ ছিল। আমরা যখন দেখলাম অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করলেন এবং পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার উনি ওনার সিদ্ধান্তে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তারপর থেকে সন্দেহটি বহু মানুষের মন থেকে চলে যেতে শুরু করেছে।

লন্ডনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে নির্বাচনের বাইরে আর কী কথা হয়েছে ?

 এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিজ্ঞ মানুষ। সৌজন্যতামূলক অনেক কথা হয়েছে। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন জনগণ যদি আপনাদের সুযোগ দেয় তাহলে আপনারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমার কিছু চিন্তা ভাবনা যদি সুযোগ পাই দেশের মানুষ সুযোগ দেন সেই বিষয়ে কিছুকিছু আলোচনা হয়েছে।

এক এগারোর সরকার বা সেনাসমর্থিত সরকার নিয়ে তারেক রহমানের মূল্যায়ন জানতে চাইলে বলেন, এক বাক্যে যদি বলতে হয় এটি একটি অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সরকার ছিল। আমরা দেশে ঘাঁত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে দেশে যতটুকোই রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে উঠেছিল, ভুল ত্রুটির মধ্যে দিয়েই। সবকিছু তারা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। বিরাজনিতীকরণ করতে চেয়েছিল। দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

বিএনপি ক্ষমতায় এলে কূটনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির মূলনীতি কী হবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির মূলনীতি একটাই, সবার আগে বাংলাদেশ। সবার আগে আমার জনগণ, দেশ, সার্বভৌমত্ব। এটিকে বিবেচনা করে বাকি সবকিছু।

বিগত সরকারের সময় ভারতের সাথে যেমন সম্পর্ক ছিল সেটা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। ভারতের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে বিএনপির নীতি নিয়ে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি আগের প্রশ্নেই বলেছি সবার আগে বাংলাদেশ। আমি আগে আমার দেশের মানুষের স্বার্থ দেখবো তারপর বাকি সব।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে- সিইসি
অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে- সিইসি
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নয়: সালাউদ্দিন
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নয়: সালাউদ্দিন
অনেক হাসপাতাল মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেয়নি: শিক্ষার্থী সৈকত
অনেক হাসপাতাল মৃত্যুর সার্টিফিকেট দেয়নি: শিক্ষার্থী সৈকত