• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে ১৭ বছরে কমেছে ৯০ হাজার হেক্টর ফসলী জমি

রাজশাহী ব্যুরো    ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫০ এ.এম.
ছবি-ভিওডি বাংলা

বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মাঠগুলো একসময় ছিল বিস্তীর্ণ ধানের সবুজ খেতের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ওই সব মাঠে ধানের পরিবর্তে নানা ধরনের স্থাপনা, শিল্পকারখানা, ইটভাটা, পুকুর এবং আবাসন দেখা যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তিন ফসলী আবাদি জমি কমছে দিন দিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে এই চার জেলায় তিন ফসলী আবাদি জমি প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর কমেছে। এর মধ্যে শুধু রাজশাহী জেলায় ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১,৯১,৭৮০ হেক্টর, যা ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েছে ১,৫৫,৭৫৮ হেক্টর। অর্থাৎ ১৭ বছরে রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩৬,০২২ হেক্টর। ২০২৫ সালে এ পরিমাণ ৪০ হাজার হেক্টর পৌঁছেছে।

নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আবাদি জমি ২০১০ সালে ছিল ৪,৬৬,০০০ হেক্টরের উপরে, যা ২০২৪ সালে কমে ৪,০২,০০০ হেক্টর হয়েছে। এই ১৪ বছরে শুধু এই তিন জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার হেক্টর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে।

ফসলী জমি কমার মূল কারণ

বরেন্দ্র অঞ্চলে জমির উপর মানুষের দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে:

অপরিকল্পিত আবাসন-নদী ভাঙন বা জমি কম দামের কারণে মানুষ নতুন স্থায়ী বসতি তৈরি করছে।
শিল্প ও ইটভাটা- রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোরের বিভিন্ন অঞ্চলে শতাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
পুকুর খনন-সম্প্রতি পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়ায় তিনটি নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৪০ বিঘা আবাদি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

বাগান ও বাণিজ্যিক চাষ-ধানের পাশাপাশি আম বাগান তৈরির প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর-ডাঙ্গাপাড়ায় এক সময় নদী ভাঙনের কারণে বসতবাড়ি হারানো প্রায় ১,৫০০ পরিবার এখন নতুন বসতি গড়ে তুলেছে। এসব এলাকার মানুষ জীবিকার তাগিদে ফসলী জমি দখল করে স্থায়ী বসতি ও ইটভাটা তৈরি করছে।

ফসলী জমি কমার ফলে খাদ্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষকেরা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আবাদি জমি হারানো ফলে ধান, ভুট্টা, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও সবজি উৎপাদন কমে গেছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা আরও ক্ষতি ডেকে আনছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভূমি জোনিং প্রকল্পের জরিপ অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২২০ হেক্টর কৃষি জমি অপরিকল্পিত ব্যবহার ও স্থাপনা নির্মাণের কারণে হারাচ্ছে। বর্তমান মাথাপিছু কৃষিজমির পরিমাণ দেশে ১৪ শতাংশ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে কমে ৬.২০ শতাংশ পৌঁছাতে পারে। তুলনায়, ১৯৭২ সালে মাথাপিছু চাষাবাদের জমি ছিল ৩৫ শতাংশ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, "কৃষিজমি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রতি বছরই কিছু পরিমাণ আবাদি জমি বসতবাড়ি, ইটভাটা, রাস্তাঘাট বা পুকুর খননের কারণে অনাবাদী হয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে এই সংখ্যা আরও বাড়ছে। বিদ্যমান জমিতে খাদ্য উৎপাদন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।"

ভূমি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ লাখ টাকার জরিমানাসহ কৃষিজমি সুরক্ষা আইন খসড়া করেছে। এই আইন অনুযায়ী, সকল কৃষিজমি শুধু কৃষি কাজেই ব্যবহার করতে হবে, এবং স্থাপনা নির্মাণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। তবে আইন মানছেন না অনেকেই।

রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাটা, পুকুর খনন ও আবাসন নির্মাণ অব্যাহত থাকায় ফসলী জমির উপর চাপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে, বরেন্দ্র অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদন এবং কৃষকের জীবিকা রক্ষা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে।

বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি জমি ও খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অবিলম্বে প্রশাসনকে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা নিতে হবে। অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ ও পুকুর খনন রোধ করতে কৃষি বিভাগ, ভূমি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নাহলে, আগামী ২০–৩০ বছরে এই অঞ্চলের ফসলী জমি প্রায় অর্ধেক কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

ভিওডি বাংলা/জা

 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কুমারখালীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেলো পথচারীর
কুমারখালীতে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেলো পথচারীর
শিবচরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য, ইলিশ শিকারকালে ৭ জেলে আটক
শিবচরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য, ইলিশ শিকারকালে ৭ জেলে আটক
বিএনপি ৪০ টেলিভিশন-পত্রিকায় প্রভাব খাটাচ্ছে: সারজিস আলম
বিএনপি ৪০ টেলিভিশন-পত্রিকায় প্রভাব খাটাচ্ছে: সারজিস আলম