• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বগুড়ায় খেরুয়া মসজিদ-মুসলিম

স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন

বগুড়া প্রতিনিধি:    ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৪ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

বগুড়ার শেরপুরে প্রাচীন মুঘল-সুলতানি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ। অবস্থানগত দিক থেকে এটি শেরপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে  শাহ-বন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলায় অবস্থিত। 

স্থাপ ফার্সি শিলালিপিতে লেখা আছে নবাব মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে । তবে সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রনে নির্মিত মসজিদটির নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। আবুল কালাম মোহাম্মদ জাকারি বাংলাদেশের বইতে উল্লেখ করেছেন gসজিদটি খেরুয়া বলে নামকরণের কারণ সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। আরবি ভাষায় খেরুয়া বলে কোনো শব্দ নেই। তবে ফার্সিতে Lvয়ের গাn বলে একটি শব্দ আছে। যার স্থানের ভেতরে। রাজা মানসিংহ যখন বাংলার সুবাদার তখন তিনি শেরপুরে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গের কোনো অস্তিত্ব এখন নেই। তবে মসজিদটি যদি শেরপুর দুর্গের ভেতরে নির্মিত হয়ে থাকে, তবে খেরুয়া নাম হতে পারে বলে অনুমান করা। 

সবুজ ঘাসে পরিবেষ্ঠিত মসজিদের চারপাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। ৫৯ শতাংশ ভূমি নিয়ে গঠিত মসজিদের পুরো অংশ। ইটের দেয়ালের ওপরটা লোহার রেলিং দিয়ে দেওয়া। মূল গেটের কাছেই রয়েছে বেশ বড় একটি সাইনবোর্ড। বাংলা ও ইংরেজিতে এতে লেখা আছে মসজিদের ইতিহাস। মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলা‡gi ঐতিহ্যের স্বরূপ এবং অধ্যক্ষ মুহম্মদ  রোস্তম আjxi শেরপুরের ইতিহাস (অতীত থেকে পাওয়া যায় মসজিদটির সংক্ষিপ্ত নির্মাণ ইতিহাস। তখন ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দ। স্থানীয় বুজুর্গ ফকির আবদুস সামাদ একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার চিন্তা করেন। সে সময়ে এখানকার প্রাদেশিক জায়গিরদার মির্জা মুরাদ খান কাকশালের পৃষ্ঠপোষকতায় মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। দিল্লির মসনদে তখন আসীন মোগল সম্রাট জালাল উদ্দিন আকবর। ১৫৮২ সালে তিনি দ্বীনে এলাহি প্রতিষ্ঠা করলে বাংলার কিছু অঞ্চলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়। মির্জা মুরাদ খান কাকশালও যোগ দেন সম্রাটের বিদ্রোহীদের দলে। এই বিদ্রোহের সময় বন্ধ থাকে মসজিদ নির্মাণের কাজ। শেষ পর্যন্ত মুরাদ খান সম্রাটের প্রতি আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য হন। সম্রাটের আনুগত্য  মেনে নেওয়ার পর আবারও শুরু হয় খেরুয়া মসজিদের নির্মাণকাজ। ফলে প্রায় পাঁচ বছর লেগে যায় মসজিদটির নির্মাণ প্রক্রিয়া।

মসজিদটি একটি আয়তাকার স্থাপত্য। এর দৈর্ঘ্যের পরিমাণ ১৭.৬৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৬২ মিটার; দেয়ালের পুরুত্ব ১.৯৫ মিটার। মসজিদটির  দিকে তিনটি প্রবেশদ্বার আছে। কেন্দ্রীয় প্রবেশদ্বারটি অন্য প্রবেশদ্বারের তুলনায় বড় ও প্রশস্ত। প্রতিটি প্রবেশপথ একেবারে সুস্পষ্ট। মসজিদের অভ্যন্তরে পyiæ দেয়ালের প্রবেশদ্বারের সঙ্গে মিল রেখে তিনটি মিহরাব আছে। আয়তাকার ফ্রেমের মধ্যে অর্ধগোলাকার মিহরাবগুলো স্থাপিত। মিহরাবের কারুকার্যগুলো মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই সুন্দর। মসজিদের চতুর্দিকে চারটি অষ্টাভুজ আকৃতির মিনার আছে। এগুলো মসজিদের কাঠামো আরো সুদূঢ় করেছে। এই মসজিদের কার্নিসগুলো সুলতানি আমলের স্থাপত্যের মতোই বাঁকানো। কার্নিসেও ছোট ছোট  পোড়ামাটির তৈরি কারুকাe¨ লক্ষ করা যায়। অর্ধগোলাকৃতির গম্বুজগুলোর কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। এ ছাড়া মসজিদের চার কোণে রয়েছে আট কোনা আকৃতির চারটি মিনার। মসজিদের অভ্যন্তরভাগ তিন অংশে বিভক্ত। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি অর্ধগোলাকার কারুকাR বিশিষ্ট মিহরাব। মূল মিহরাবের দুপাশে আকারে ছোট দুটি মিহরাব রয়েছে। সাদৃশ্য রক্ষার্থেই সেগুলো বানানো হয়েছে। মসজিদের মোট কাতারসংখ্যা তিন। মসজিদটি নির্মাণে চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা হয়েছে ইট। এতে বৃহদাকার কৃষ্ণ পাথরও ব্যবহার করা হয়েছে। ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেলের মাধ্যমে নান্দনিক বৈচিত্র্য তৈরি করা হয়েছে মসজিদটিতে। এর দেয়ালের গাঁথুনিগুলো অসম্ভব নান্দনিক। মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনি এবং ফুল, লতাপাতার নকশার কারণে পুরো মসজিদই নজর কাড়ে।

খেরুয়া মসজিদের খাদেম আব্দুস সামাদ বলেন, মসজিদটি পরিদর্শনে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষরা আসেন। দর্শনার্থীরা মুসলিম স্থাপত্য সর্ম্পকে ধারণা নিতে পারেন। তবে মসজিদে আসার সড়ক মেরামত আর আশপাশে বড় বড় ভবন নির্মাণ বন্ধ করা গেলে টকদের আকর্ষণ আরও বাড়বে।

মসজিদের মোয়াজ্জেম জোবায়ের বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি মসজিদে এখন তারাবির নামাজ ও ঈদের জামাত হয়ে থাকে। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মসজিদ সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। 

প্রায় সাড়ে চারশ বছর আগে নির্মিত এই খেরুয়া মসজিদের বর্তমানে পুন-সংস্কারের বিশেষ প্রয়োজন। টক ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সু-ব্যবস্থা করতে পারলে  খেরুয়া মসজিদটি অনেকে খুব কাছে থেকে দেখার ও জানার সুযোগ পাবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ


   

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টাঙ্গাইলে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
টাঙ্গাইলে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ ধ্বসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলায় ১৩৬ জনের নামে চার্জশিট
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র হত্যা মামলায় ১৩৬ জনের নামে চার্জশিট
দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা চাইলেন
দেশবাসীর কাছে দোয়া ও ক্ষমা চাইলেন