ভারত নিয়ে তারেকের মন্তব্যে বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ভারতের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন, যা নতুন করে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তারেক মূলত আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, তারেক ভোটারদের কাছে একটি বার্তা পাঠাতে চেয়েছেন এবং তার বক্তব্যকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখা উচিত।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবেন। তিনি বলেন, “আমি পানির হিস্যা চাই, মানুষের হিস্যা চাই; আরেক ফেলানী ঝুলে থাকলে সেটা চাই না।” এছাড়া, তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বলেন, “যদি ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দেয় এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি বিরাগ প্রদর্শন করে, তবে তা তাদের স্বার্থ, তবে বাংলাদেশের মানুষ নিজের সিদ্ধান্ত নেবে।”
ভারতের বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া
ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত মন্তব্য করেন, “তারেক রহমান তার নির্বাচনী কনস্টিটুয়েন্সির কথা ভেবে এই মন্তব্য করেছেন। এটি একটি জনমোহিনী বা পপুলিস্ট মনোভাব। তার বক্তব্য মূলত সমর্থকদের খুশি করার জন্য।”
অবসরপ্রাপ্ত লেফটোন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “তারেকের বাবা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ১৯৭১ সালের আগে তার সম্পর্ক ছিল। খালেদা জিয়ার শাসনকালে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল হলেও খুব খারাপ ছিল না। বর্তমানে নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তারেককে কিছুটা আক্রমণাত্মক মনোভাব নিতে হবে।”
সাবেক কাস্টমস অ্যান্ড এক্সাইজ বোর্ড চেয়ারম্যান সুমিত দত্ত মজুমদার বলেন, “প্রতিটি দেশই নিজের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়। ক্ষমতায় আসা দলগুলোর ভূরাজনীতি বিষয়ক নীতিই মূল। এটি নতুন কিছু নয়।”
সীমান্ত ও জলবিষয়ক মন্তব্য উৎপল ভট্টাচার্য সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে বলেন, “সীমান্তে দুই দেশের ফোর্সের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এটি দু’পক্ষের ভুল। সীমান্তে গুলি চলা এবং মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানও বাস্তবতা।”
শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “তিস্তা ব্যতীত আর জলবিষয়ক বড় সমস্যা নেই। তবে নির্বাচনের আগে ভারতের বিরোধী মন্তব্য প্রত্যাশিত।”
সুমিত দত্ত মজুমদার বলেন, “তিস্তা চুক্তির আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে ভারতের প্রধান বিষয় হলো, তারেক ও বিএনপির কট্টরপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে।”
উৎপল ভট্টাচার্য আরও বলেন, “বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক রীতি অনুসরণের কথা বলে। অতীতে ভারতের আশ্রয় নেওয়া রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও বাংলাদেশে ফিরতে পেরেছেন।”
শেখ হাসিনার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া মানবিক বিষয়। রাজনীতির বাইরে, ভারতের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। তিনি উত্তর-পূর্বের চরমপন্থিদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেননি।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সম্প্রতি বলেছেন, “দিল্লি কেবল নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কথা বলবে।” অর্থাৎ নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় আসার পরই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গতিপথ স্পষ্ট হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের আক্রমণাত্মক মনোভাব স্বাভাবিক। তারেক যে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি উল্লেখ করেছেন, সেটিও প্রত্যাশিত। তাই তারেকের মন্তব্যকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সামগ্রিকভাবে ভারতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তারেক রহমানের মন্তব্য নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে জনমোহিনী কৌশল। সীমান্ত হত্যা, জলবণ্টন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক-এসব বিষয় নিয়ে তার বক্তব্য মূলত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনী সময় রাজনৈতিক নেতাদের এমন আক্রমণাত্মক মনোভাবকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, তা নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় আসার পরেই স্পষ্ট হবে।
ভিওডি বাংলা/জা