• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ধানের পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতির সুফল পাচ্ছে কৃষক

রাজশাহী ব্যুরো    ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:১৯ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

জয়পুরহাটের কালাইয়ে চলতি মৌসুমে যথাসময়ে কৃষকরা রোপাআমন ধান রোপন করেছেন। প্রাকৃতিক ভাবে কোন দুর্যোগ না হওয়া ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার উপজেলায় ১২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে যথাসময়ে রোপাআমন ধানের চারা রোপন করেছেন। ওইসব জমিতে রোপনকৃত চারাগুলো বড় হয়ে এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে কালাইয়ের অধিকাংশ কৃষক এবারে ধান ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। পরিবেশ বান্ধব এবং লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একদিকে কৃষকরা যেমন কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষা করতে পারছেন, তেমনি আর্থিক ভাবেও লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়া কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগের পরিশ্রম এবং মজুরের পারিশমিক থেকেও রক্ষা পাচ্ছেন।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলায় এবার রোপাআমন ধান ক্ষেতে পোকা দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে। উপজেলার কৃষকরা ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারে আগের চেয়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠেছেন।

কৃষকরা তাদের ফসলি জমিতে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাস ফড়িং ও পাতা ফড়িং, কারেন্ট পোকাসহ নানা ধরণের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার করছেন। পার্চিং পদ্ধতি হচ্ছে, পাখির মাধ্যমে ফসলের পোকা দমনে ভালো ব্যবস্থা।

কৃষকরা তাদের রোপাআমন ক্ষেতের মধ্যে প্রতি ১০ থেকে ১২ হাত পরপর বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল এবং ধইঞ্চা পুঁতে দিচ্ছেন। ওইসব বাঁশের আগা, কঞ্চি ও ধইঞ্চার ডালে উড়ে এসে বসছে শালিক, ফিঙে, বক, বুলবুলি সহ নানা জাতের পাখি। সেখানে কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি ধান গাছের মধ্যে ঢুকে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলছে এবং পরে ওইসব পাখি পার্চিংয়ে বসে ক্ষণিক সময়ের বিশ্রামও নিচ্ছে।

এতেকরে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছ রক্ষা পাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি কম খরচে বেশি লাভ হচ্ছেন এ উপজেলার কৃষকরা।
কালাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পৌর এলাকাসহ সহ উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, পুনট, জিন্দারপুর ও আহম্মেদাবাদ ওই ৫টি ইউনিয়নে এবার চলতি রোপাআমন মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে রোপাআমন চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রোপাআমন ফসল রক্ষায় পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এ পার্চিং দুই প্রকার-একটি ডেড পার্চিং আর অন্যটি লাইভ পার্চিং।

বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি ও মরা গাছের ডাল পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং এবং ধঞ্চে, কলাগাছ ইত্যাদি জীবন্ত পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং। এ বছর ধানক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে কীটনাশকের অযাচিত ব্যবহার কমছে, সেই সঙ্গে ফসলের উৎপাদনও বাড়বে বলে কৃষকদের আশা।

উপজেলার নওয়ানা গ্রামের কৃষক সামছুল আলম বলেন, এবার ৬ বিঘা জমিতে উফশী জাতের ধান রোপন করেছি। ধানের ক্ষতিকর পোকা দমনে বিশেষ করে মাজরা পোকা দমনে নির্দিষ্ট ব্যবধানে বাঁশের কঞ্চি ও ধইঞ্চাগাছ পুঁতে রেখেছি। এতে উপকার পাচ্ছি এবং ধানও ভালো ফলন হয়েছে। এসব কঞ্চিতে ফিঙে বসছে। আর পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকা মাকড় ধরে খাচ্ছে। এ বছর আমার ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়নি।

বহুতী গ্রামের আরেক কৃষক আনিসুর বলেন, গত দুই বছর আগে আমাদের এই মাঠের ধান ক্ষেতে অনেক পোকায় আক্রমণ করত। পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করেও তেমন কাজ হতোনা। এরপর কালাই কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করায় এখন সুফল পাচ্ছি।

উপজেলার মাত্রাই গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ধানের চারা রোপণের পর পরই বাঁশের আগা, ধইঞ্চা ও গাছের ডাল প্রভৃতি জমিতে পুঁতে রাখলে জমিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করা যায়। এ বছর আমরা পার্চিং পদ্ধতিতে ধান চাষ করে লাভবান হচ্ছি। আমার মতো অনেকেই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। এলাকায় খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পার্চিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ।

কালাই উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার বলেন, পার্চিং পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকা বিশেষ করে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাস ফড়িং ও পাতা ফড়িং দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এই পদ্ধতি পরিবেশ বান্ধব। পোকা দমনে কীটনাশক না দেওয়ায় এতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়ও কম হয়। ধানের ফলনও বেশি হয়। ফলে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

কালাই উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষকরা গত ২-৩ বছর আগেও ধানক্ষেতের পোকা দমনের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করতো। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে শত্রু পোকা নিধনের সঙ্গে বন্ধু পোকাও মারা যায়। ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর ব্যবস্থা।

এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার একেবারেই কমে যাবে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কম হয় ফলে উৎপাদিত ফসলে লাভ বেশি হয়। এ ছাড়া পার্চিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসল বালাই নাশকের ক্ষতিকর প্রভাব মুক্ত থাকে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ডাসারে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
ডাসারে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
মহাকাশ গবেষণায়-পাবনা ভাঙ্গুড়ার কৃতিসন্তান
মহাকাশ গবেষণায়-পাবনা ভাঙ্গুড়ার কৃতিসন্তান
রাজবাড়ীতে ৪০ হাজার মিটার জাল ও ইলিশ মাছ জব্দ
রাজবাড়ীতে ৪০ হাজার মিটার জাল ও ইলিশ মাছ জব্দ