মহাকাশ গবেষণায়-পাবনা ভাঙ্গুড়ার কৃতিসন্তান


মানুষের জ্ঞানপিপাসা সীমাহীন।সেই জানার তৃষ্ণাই মানুষকে ছুটিয়ে নিয়ে যায় পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে,ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে একসাথে বসিয়ে শেখায় নতুন কিছু জানার জিজ্ঞাসা,আনন্দ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই দ্রুত পরিবর্তনের যুগে মহাকাশ গবেষণা এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আজ বিশ্বের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি। আর সেই অগ্রযাত্রায় নির্বাচিত হওয়া নিঃসন্দেহে এক বিরল সৌভাগ্য, এক অনন্য অর্জন।
জাতিসংঘ অনুমোদিত Centre for Space Science and Technology Education in Asia and the Pacific (CSSTEAP)–এর মর্যাদাপূর্ণ Post Graduate Course on “Satellite Meteorology and Global Climate”–এ উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া উপজেলার গর্ব, কৃতি সন্তান মোঃ জয়নুল আবেদীন, পিতা মোঃ শাজাহান আলী, গ্রাম কলকতি, থানা ভাঙ্গুড়া, জেলা পাবনা।
এ অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়-বরং বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার মাইলফলক। আমরা তার এই অসাধারণ সাফল্যে গর্বিত,আনন্দিত এবং আশাবাদী। স্যাটেলাইট প্রযুক্তি কী ও কেন গুরুত্বপূর্ণ “উপগ্রহ” শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Satellite—অর্থাৎ উপগ্রহ প্রযুক্তি এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি একই বিষয়।
স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এমন এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন যার মাধ্যমে যোগাযোগ, পরিবহন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এবং মহাকাশ থেকে তথ্য প্রেরণ-সবই সম্ভব হচ্ছে।
আজ আধুনিক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আমাদের জলবায়ু, সম্পদ ও বৈশ্বিক ঘটনাবলীর রিয়েল-টাইম তথ্য দিচ্ছে, ফলে পৃথিবী হয়ে উঠছে আরও সংযুক্ত, নিরাপদ ও বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ (smart)।
এটি কেবল নিরাপত্তা বা তথ্য বিনিময়ের জন্য নয়—বরং পৃথিবীর পরিবর্তিত জলবায়ু ব্যবস্থাকে বুঝতে, ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে এবং মানবজীবনকে টেকসই করতে এক অপরিহার্য হাতিয়ার।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অবদান স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এখন চিকিৎসাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাক্তাররা এখন দূরবর্তী বা প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন, অনলাইনে চিকিৎসা পরামর্শ দিতে পারেন, এমনকি জরুরি মুহূর্তে তাৎক্ষণিক নির্দেশনাও দিতে পারেন।
উপগ্রহের মাধ্যমে জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে ম্যালেরিয়া, কলেরা বা অন্যান্য সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব আগেই শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় স্যাটেলাইট যোগাযোগ হাসপাতাল, উদ্ধার দল ও সহায়তা সংস্থাগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত রাখে-ফলে দ্রুত চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো যায়।
অর্থাৎ, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আজ জীবন বাঁচানোর এক নিরব বিপ্লব।জাতীয় নিরাপত্তায় স্যাটেলাইটের ভূমিকা- যুদ্ধক্ষেত্রেও স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। এটি সামরিক বাহিনীকে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ, নেভিগেশন ও নজরদারি সুবিধা দেয়।
রিকনাইসেন্স স্যাটেলাইটের মাধ্যমে শত্রুপক্ষের অবস্থানের উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি পাওয়া যায়,জিপিএস স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অস্ত্র ও সৈন্যদের নিখুঁতভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়।
উপগ্রহভিত্তিক প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ শনাক্ত করতে পারে, মহাকাশ থেকে দ্বন্দ্বপূর্ণ অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে জাতীয় নিরাপত্তা জোরদার করে।
এইভাবে, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি আজ স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও শান্তির রক্ষক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশের গর্ব,ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা- আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণার অঙ্গনে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির উপর উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে মোঃ জয়নুল আবেদীন শুধু নিজের নয়, বাংলাদেশেরও মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন।
আমরা বিশ্বাস করি-তার এই পথচলা আরও বহু তরুণ গবেষক ও শিক্ষার্থীকে অনুপ্রাণিত করবে, যারা একদিন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বিশ্বের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।
মোঃ জয়নুল আবেদীন এর এই সাফল্য হোক বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রার এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি যেন বাংলাদেশের জন্য আরও সম্মান, আরও সাফল্য বয়ে আনেন -এই প্রত্যাশা ও আন্তরিক প্রার্থনা রইলো।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ