• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

মাগুরা-১ আসনে কে হচ্ছেন ধানের শীষের কান্ডারী

শ্রীপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি    ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০৯ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত  মাগুরা-১  আসনে  কে হচ্ছেন ধানের শীষের কান্ডারী । জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান নাকি অন্য কেউ, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনায় ঘুরপাক খাচ্ছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য  ছড়িয়ে পড়েছে। নিকটতম প্রার্থীদের সমর্থনে সমর্থকরা বিভিন্ন তথ্য প্রচার করার ফলে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

১৯৮৪  সালে যশোর-১২ আসন থেকে প্রাক্তন যশোর জেলাকে ঝিনাইদহ , যশোর , মাগুরা এবং নড়াইল চারটি জেলায় বিভক্ত করে  মাগুরা সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলার  ৮ টি  ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা -১ (সংসদীয় - ৯১)আসনটি গঠিত হয় । বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি প্রার্থী মেজর জেনারেল মজিদ উল হক ৩ বার (৭৯, ৯১ এবং ৯৬’র ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি) এবং জাতীয় পার্টি প্রার্থী মেজর জেনারেল এমএ মতিন ২ বার (৮৬ এবং ৮৮) এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাকি ৭টি নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামীলীগ।

এরমধ্যে ৭৩ এর প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী সোহরাব হোসেন এবং ১৯৯৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পরপর ৪ বার নির্বাচিত হন আন্তর্জাতিক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার সিরাজুল আকবর। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।

গত ১৬ বছরের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অনেক আগেই এই আসনে মাগুরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির আবদুল মতিনকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলীয় ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে  প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে তিনি এবং তার দলীয় নেতা কর্মীরা।

এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পান মাগুরা জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান। কিন্তু নির্বাচনের আগেই নাশকতার মামলায় তাকে কারা অন্তরিণ থাকা অবস্থায় নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর। আগামী সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন কারা নির্যাতিত বিএনপি নেতা মনোয়ার হোসেন খান। মাগুরা-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও জনসমর্থন, সাংগঠনিক দক্ষতা ও আন্দোলনে সক্রিয় উপস্থিতির কারণে  আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন খান। প্রবীণ এবং  তরুণদের চোখে মাগুরায় তিনি একজন সচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।

মাগুরা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিনাথপুর-আবালপুর গ্রামের এই নেতা মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হন খুলনা বিএল কলেজে। সেখান থেকে পাশ করার পর অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে মনোয়ার হোসেন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়োগ্রাফি বিভাগে ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সাথে পড়াশুনা সম্পন্ন করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১৯৮৬ সালে (জালাল-বাবলু) কমিটিতে তিনি প্রথম কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শহীদুল্লাহ হল ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালে একক জিএম হিসেবে দীর্ঘ দিন সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পরবর্তীতে তিনি রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালের ডিরেক্টর হিসেবে এবং টেকনো ড্রাগসের সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুবাদে বেকার তরুণ এবং যুবকদের কর্মস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে।সেই সুবাদে দু:স্থ, অসুস্থ ও অপেক্ষাকৃত অস্বচ্ছল মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে মনোয়ার খান  আমজনতার হৃদয়ের কিছুটা হলেও স্থান করে নিয়েছেন। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত ব্যাপক গনসংযোগ করছেন।

অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ। সদর উপজেলার রাঘবদাইড় ইউনিয়নে জন্ম নেওয়া এ নেতা ছোটবেলা থেকেই রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। তাঁর পিতা দীর্ঘদিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পিতার জনপ্রিয়তা কে আঁকড়ে ধরে তিনি তিনবার রাঘবদাইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার জন্য।১৯৯০ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে জেলা বিএনপির  সাংগঠনিক সম্পাদক, দুইবার সাধারণ সম্পাদক, সদস্য সচিব ও দুইবার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও রয়েছেন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি নিয়মিত তৃণমূল কর্মীদের সাথে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন

আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাগুরায় ছুটে এসেছেন  সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত এম মজিদুল হকের কন্যা ডাঃ সিমিন এ মজিদ অঞ্জু।

তিনবার বাবার দখলে থাকা আসনটিতে মনোনয়ন পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রাভা হেলথের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. সিমিন। চালাচ্ছেন প্রচার ও প্রচারণা। পিতার জনপ্রিয়তা কে কাজে লাগিয়ে জন সাধারণের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন।চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। 

এছাড়াও  মন্ত্রী এম মজিদ- উল-হকের একান্ত সচিব হিসেবে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পলন করার সুবাদে মাগুরার মানুষের কাছে পরিচিত মুখ। সামছুল আলমের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে। তিনি ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মাগুরা জেলা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মাগুরা জেলার প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব তখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশী সামছুল আলম নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে জনসম্মুখে তাঁর লক্ষ্য ও পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন।

এ ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ রাজনীতিদ আলমগীর হাসান সোহান।  জন্মস্থান মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাতুন্দী গ্রামে। ইতিপূর্বে এই গ্রাম থেকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মেজর জেনারেল এমএ মতিন ২ বার (৮৬ এবং ৮৮)তে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আলমগীর হাসান সোহান রাজনৈতিক জীবন দশায় তিনি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখার সভাপতি ও সিনিয়ন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন । এছাড়াও সভাপতি- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল শাখা,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (মামুন-ফিরোজ কমিটি), যুগ্ম আহ্বায়ক- জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, (মতিন-নাছির কমিটি), সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক-ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ (টুকু-আলীম কমিটি), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ কমিটির দায়িত্ব সুনামের সাথে পালন করেছেন। তাঁর নির্বচনী  এলাকার বিএনপির ত্যাগী রাজনীতিবীদদের এবং একঝাঁক তরুণ দলীয় কর্মীবৃন্দকে সাথে নিয়ে গনসংযোগ করছেন।

মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বদরুল আলম হিরো। তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনবারের আমলসার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন । মাগুরা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির দুইবারের নির্বাচিত সাবেক সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও নেতা কর্মীদের সাথে নিয়োমিত যোগাযোগ করছেন।

মাগুরা-১ আসন জাতীয় সংসদের ৯১ নং আসন। মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত। যেখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪'শ ৯১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৮'শ ৬৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ  ৯৯ হাজার ৬'শ ২৬ জন। এছাড়া ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে।


ভিওডি বাংলা/মোঃ আল আমিন/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চরফ্যাশনে ইয়াবাসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
চরফ্যাশনে ইয়াবাসহ বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
পাংশায় সাংবাদিকদের সাথে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীর মতবিনিময়
পাংশায় সাংবাদিকদের সাথে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীর মতবিনিময়
নাগরপুরের টাইফয়েড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন উদ্বোধন
নাগরপুরের টাইফয়েড ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন উদ্বোধন