পিআর পদ্ধতি দলীয় কিছু আসন বৃদ্ধি ছাড়া জনগণের কোনো সুবিধা নেই

পিআর পদ্ধতি দলীয় কিছু আসন বৃদ্ধি ছাড়া জনগণের জন্য কোনো সুবিধা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
তিনি বলেন, ‘আমি কেন পিআর চাচ্ছি? একটু যদি আমরা খোলাখুলি যদি বলি, পিআরটা চাচ্ছি এই কারণে যে, আমি পার্লামেন্টে কিছু বেশি সিট(আসন) পাবো, এর বাইরে কিছু নাই। এখন আমি পার্লামেন্টে অধিকতর ক্ষমতাবান হবো, অধিক সিট পাবো সেই কারণে মানুষের মৌলিক যে দাবি সেটাকে আমি অগ্রাহ্য করব…. এটা তো গণতন্ত্রের ভাষা নয়। কাজেই সেই দিক থেকে এটা সেলফ কনট্রাডিক্টরি। আসুন, আমরা মানুষের কল্যাণ আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করি, এখানে খোলা নিয়ে কাজ করতে হবে।’
শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এসব কথা বলেন। রাজধানীর মৌচাকে কসমস সেন্টারে কসমস গ্রুপ ও ইউনাইটেড নিউজ এজেন্সি অব বাংলাদেশশ এর যৌথ উদ্যোগে ‘ইলেশন ২০২৬ : এ ক্রিটিকাল লুক এট প্রোপশনাল রিপ্রেজেনটেশন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের মামুন আল মোস্তফা।
আবদুল মঈন খান বলেন, ‘দেখুন, পিআর করার অর্থটা কি? পিআর হচ্ছে আপনি ব্যক্তির যে অবস্থান সেটাকে দুর্বল করে দলের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করে দিচ্ছে অর্থাৎ মানুষ ভোট দিবে দলকে এবং দল নির্ধারণ করে দেবে কে প্রার্থী হবেন। তাহলে কি হচ্ছে? আমাদের যে মৌলিক চিন্তাধারা যে, জনগণ তাদের প্রতিনিধি থাকবে এবং জনগণের প্রতিনিধিরা সরাসরি জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে সেইটা তো তাহলে আর থাকছে না। এবং দলকে শক্তিশালী করে দিলে ব্যক্তিকে এখানে আমরা জনপ্রতিনিধিকে দুর্বল করে দিয়ে সেখানে একটি দলকে যদি আমরা শক্তিশালী করে দেই তাহলে কিন্তু মানুষের যে সিস্টেমটা তৈরি হবে সেটাও কিন্তু একটা সেলফ কন্ট্রাডিকশন…. সেলফ কন্ট্রাডিকশন এই কারণে যে মানুষ সাধারণ মানুষের যে প্রত্যাশা… সেটা হচ্ছে এই. দল যেন অতিরিক্ত শক্তিশালী না হয় বিশেষ করে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক ইতিহাস আমরা বিগত ৫৪ বছরে দেখেছি…. যখনই দল বেশি শক্তিশালী হয়ে গেছে তখনই কিন্তু জনগণের জন্য দুর্যোগ নেমে এসেছে।’
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে গণভোট করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকে কে দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘পিআরের জন্য আমাকে গণভোটে যেতে হবে কেন? আমাদের তো… প্রত্যেকটি দলের অনেকগুলো ইস্যু আছে যেগুলো ঐক্যমত হয় নাই। তাহলে ওই যদি গণভোটের প্রক্রিয়া আপনি যেতে চান আগামী দুই বছর যাবত আপনাকে গণভোটই করতে হবে। ফাস্ট অফ অল এই দায়িত্ব আমাদেরকে কে দিয়েছে? আমাদেরকে জনগণ গণভোট করা এই দায়িত্ব দেয় নাই।’
আমির খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে কিসের ভিত্তিতে? সংবিধানের ভিত্তিতে হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতেই সরকার চলছে। সুতরাং বর্তমান সংবিধানের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার চলে, আমাদের গণতান্ত্রিক অর্ডারকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয় এবং পরবর্তীতে পরিবর্তন করতে হয় প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের বর্তমান সংবিধানের আওতায় নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক অর্ডারে আমাকে আসতে হবে আগে। আপনি ডেমোক্রেটিক অর্ডারে আসার পরে পাবলিক ডিসকাস বলেন, পার্লামেন্টারি ডিবেটে বলেন, পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে বহু আলোচনার একটা গণতান্ত্রিক দেশে ফেরত যাবেন। এখন তো আপনি গণতান্ত্রিক অর্ডারের মধ্যে নাই। ১৪ মাস ধরে একটা সরকার আছে যে সরকার সেটা জনগণের নির্বাচিত কোনো সরকার না। তাই আগে আমার একটি নির্বাচিত সরকার, নির্বাচিত সংসদ গঠন করতে হবে… তারপর প্রত্যেকটি দলে অধিকার আছে তাদের বিষয়গুলো নিয়ে জনমত সৃষ্টি করার, জনগণের কাছে যাওয়ার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ডেমোক্রেসি ইজ এ কারেশন প্রসেস।’
তিনি বলেন, ‘মান্না ভাই(মাহমুদুর রহমান মান্না) বললেন, জনগণ কিছুই জানে না পিআর সম্বন্ধে। যারা পিআরের পক্ষে এটা তাদের দায়িত্ব হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এনে জনগণের কাছে নিয়ে জনগণের ম্যান্ডেট নিতে হবে। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে যেটা কনসেন্সাসে হয়েছে অর্থাৎ যতটুকু ঐক্যমত হবে আমরা সে নিয়ে এগুবো। আর সেটাতে ঐক্যমত হবে সেটা ক্লোজ করার দরকার নাই… সেটা প্রত্যেকটি দলকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে, ম্যান্ডেট নিতে হবে। এবার ঐক্যমত্য যেসব হয়েছে সেটাও তো ম্যান্ডেট লাগবে.. বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ২০/৩০ টা রাজনৈতিক দলকে কোন দায়িত্ব তো দেয় নাই যে আপনারা বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন। হু আর ইউ? বাংলাদেশের মানুষ কী এই কমিশনকে বা ২০/৩০ টা রাজনৈতিক দলকে দায়িত্ব দিয়েছে যে, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র কী হবে, গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে… এটা তো জনগণ দেয় নাই।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্রেসি হচ্ছে, কনভারসেশন, ডায়লগ, ইন্টারেকশন ইজ দা প্রসেন… ওটার মাধ্যমে এই কাজটা আমরা করছি। সুতরাং ওই লিমিটেশনটা আমাদের বুঝতে হবে যে, এখানে কিন্তু সব জায়গায় ঐক্যমত্য হবে না… আমরা তো বাকশাল করছি না। আমরা সকলে আলোচনা করছি, আমরা ভিন্ন ভিন্ন দল করছি। সুতরাং এই ঐক্যমত কমিশন যে সবকিছু ডিসাইড করে দিতে পারবে এটা বোঝার কোন কারণ নাই। যতটুকু কনসেন্সাস বা ঐক্যমত হবে ততটুকু ক্লোজ করে বাকিটা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাবো ম্যান্ডেট নিতে।এটা ছাড়া তো হবে না।’
কসমস গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েতউল্লাহ খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন স্থানাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণঅধিকারের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, নির্বাচন কমিশনরে সাবেক সচিব সম জকরিয়া প্রমূথ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি