• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

গণভোট আমাদের সংবিধানে নেই- মির্জা ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৭ পি.এম.
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি-সংগৃহীত

তারেক রহমানের দেশে ফেরা, জামায়াতে ইসলামীর পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দাবি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণ, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘ সফরসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

কেমন আছেন আপনি? শরীর কেমন?

মির্জা ফখরুল : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

নির্বাচন ঘিরে বিএনপি এখন কী করছে? প্রস্তুতি কেমন?

মির্জা ফখরুল : ভালো। এজন্য আমরা সবই করছি, একটা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রস্তুতি দরকার। আর বিএনপি নির্বাচনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। বিএনপির কাজটাই হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক।

প্রার্থী বাছাই কীভাবে করছেন? অক্টোবরের মাঝামাঝিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংকেত দেওয়ার কথা বলেছেন।

মির্জা ফখরুল : আমাদের দলের যে নিয়ম আছে, সেই নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে। যাদের আপনার, তৃণমূল থেকে মতামত দেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বলুন মিডিয়া বলুন বা আমাদের নিজস্ব যে সার্ভে (জরিপ) করার যে সিস্টেম আছে সেই সিস্টেমে আমরা করছি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন?

মির্জা ফখরুল : মোটামুটিভাবে স্টেবল আছেন এখন। 

খালেদা জিয়া কি এবারের নির্বাচনে কোনো আসনে প্রার্থী হবেন? 

মির্জা ফখরুল : এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যাপারটা নির্ভর করবে তার (খালেদা জিয়ার) স্বাস্থ্যের ওপর। সম্ভাব্য কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন- সেটা তো বলা মুশকিল এই মুহূর্তে। কারণ তিনি যে আসন থেকে দাঁড়াবেন সেখানেই জিতবেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে ফিরবেন?

মির্জা ফখরুল : খুবই শিগগিরই তিনি ফিরবেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় বছর পরে বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দলের মহাসচিব হিসেবে কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল : আমাদের বিএনপির জন্য, দেশের জন্য এটা আনন্দের কথা। তিনি (তারেক রহমান) তার ভাষণে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, এগুলো জনগণ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। 

জুলাই সনদ নিয়ে বেশ তর্কবিতর্ক চলছিল। অবশেষে সনদ প্রণয়নে গণভোটে রাজি হলো বিএনপি। শুরুর দিক থেকে বিএনপির একটু আপত্তি ছিল গণভোটের বিষয়ে। গণভোটে রাজি হতে এত সময় লাগল কেন?

মির্জা ফখরুল : সময় লাগার কারণ হচ্ছে গণভোট আর নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। তা ছাড়া গণভোট আমাদের সংবিধানে নেই। এই জিনিসগুলোকে বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর একটা মতৈক্যের স্বার্থে এ বিষয়টায় বিএনপি বড় দল হিসেবে মেনে নিয়েছে। যাতে সমস্যাগুলো সমাধানের নির্বাচনটা তাড়াতাড়ি হয়।

জুলাই সনদের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্পর্কটা কী?

মির্জা ফখরুল : কিছুটা তো অবশ্যই আছে। সবচেয়ে বেশি আছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা নির্ভর করবে এই পুরো পলিটিক্যাল স্ট্রাকচারটা, যেখানে কী কী বিষয়গুলো নতুনভাবে আসছে এবং মানুষ কীভাবে সেগুলোকে নিচ্ছে। তার পরই আপনার নির্বাচনটা হবে। সুতরাং কিছু কিছু বিষয়ে যদিও আগেই একমত হয়ে যায় রাজনৈতিক দলগুলো, তাহলে সেগুলো পরে সমস্যা হয়ে থাকবে না। আমরা তো ৩১ দফা দিয়েছি সেই কারণেই। আমরা মনে করি যে, এই রাষ্ট্রের কাঠামোর পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

ফেব্রুয়ারিতে অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

মির্জা ফখরুল : আমি সম্পূর্ণভাবে আশাবাদী। তবে অংশগ্রহণমূলক বলতে যদি আপনারা এখন আওয়ামী লীগ বোঝান তাহলে তো হবে না। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ আছে। বাকি তো আমরা মনে করি সবই অংশগ্রহণমূলক হবে।

প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন। অনেকেই ব্যতিক্রমী সফর বলছে। আপনি কী মনে করেন?

মির্জা ফখরুল : এটা ব্যতিক্রমী সফর এই জন্য যে, প্রথমবারের মতো বোধহয় (নিশ্চিত নয়) যে, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সেদিক থেকে এটা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী সফর।

নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের হেনস্থা করেছে। এমনকি ডিম ছুড়ে মেরেছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল : দুঃখের সঙ্গে বলছি কিছু মনে করবেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা ব্যাড কালচার। এটা অতীতেও তারা করেছে। আর আওয়ামী লীগের এটা চরিত্র। তারা ওটা করেই থাকে। সুতরাং এটা নিয়ে খুব বেশি কনসার্ন হওয়ার কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।

আপনি নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রশংসা করায় কেউ কেউ সমালোচনা করে বলছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে ফেভার করছে। আপনি সে কারণে কি প্রশংসা করেছেন?

মির্জা ফখরুল : এগুলো হচ্ছে আপনাদের অলীক কল্পনা। আমার নেতা হচ্ছেন আমাদের দলের ফাউন্ডার, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার সুরে যদি কেউ কথা বলে সে কথাটাকে বলাটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। তাতে করে আমার নেতাকেই আমি ওপরে নিয়ে যাই। সেটুকুই বুঝতে হবে এবং সেটা বুঝতে হবে। এটাকে ভিন্নভাবে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরে বাংলাদেশের অর্জন কী? দল হিসেবে বিএনপি কী পেল?

মির্জা ফখরুল : এখানে বিএনপির দুটো জিনিস পেয়েছে। সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা সেটা হচ্ছে যে, দল হিসেবে জাতিসংঘে এইভাবে যাওয়া। প্রথমবারের মতো তো বলব না। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ১৫-১৬ বছর পরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। দুই নম্বর হচ্ছে- আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক। তিন নম্বর হচ্ছে- সেখানে সাইডলাইনে আমরা অনেকগুলো মিটিং করতে পেরেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে, তাদের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এবং ইউএস-বাংলাদেশ যে বিজনেস ফোরাম আছে সেখানে থাকার সুযোগ হয়েছে। তাদের কথা বলা ও তাদের সঙ্গে আমার কথাগুলো বলার সুযোগ হয়েছে। এগুলো তো বড় অর্জন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের মেয়াদের এখন শেষভাগ চলছে। এই দীর্ঘ সময় সরকারের কার্যক্রম কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মির্জা ফখরুল : এটা তো একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার কার্যভার গ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন যে, প্রায় দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের পর ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিগত সরকারের পতনের পরে আমরা সবাই মিলেই এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি। বিগত ১৫ বছরে তারা (আওয়ামী লীগ) রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক যে কাঠামোগুলো ছিল সবগুলোকে ভেঙে ফেলেছিল। বিশেষ করে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে, রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। জিরো থেকে শুরু করা এবং কতগুলো নেগেটিভ জায়গা থেকে শুরু করা, এটা এই সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। মূল কারণটাই ছিল যে, গত সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা। এটা ছিল একটা কারণ। দুই নম্বর হলো যে, অর্থনৈতিক দিক থেকেও ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল, তারা লুটপাটের অর্থনৈতিক আইন করেছিল। সেগুলোকে আপনার আর একটা সিস্টেমের মধ্য নিয়ে আসার ব্যাপারে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) অনেকটাই সাকসেসফুল হয়েছে, কাজ করতে পেরেছে।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বিয়ের মেহেদী হাতেই প্ল্যাকার্ড ধরেছি, খেয়েছি টিয়ারশেল: লামিয়া
বিয়ের মেহেদী হাতেই প্ল্যাকার্ড ধরেছি, খেয়েছি টিয়ারশেল: লামিয়া
অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে- সিইসি
অনেকে তো আমাকে জামায়াতও বলে- সিইসি
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নয়: সালাউদ্দিন
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নয়: সালাউদ্দিন