• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে কাজ অসম্পুর্ণ রেখেই প্রায় ৫ কোটি টাকার বিল প্রদান

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি    ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৯ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

টাঙ্গাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্তৃপক্ষ মেরামত কাজ ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ বুঝে না নিয়েই প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অগ্রীম বিল প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস নামের এই ঠিকাদারকেই দেওয়া হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। আর এই টাকা ভাগ করে নিয়েছেন জামালপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামান, টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত জেলা সওজের সিন্ডিকেটের মূল হোতা সুমন এবং মনোজ খান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সজিব জানিয়েছেন, তাদের লাইসেন্স ভাড়া নিয়ে টাঙ্গাইলের সুমন এবং মনোজ কাজ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতায় ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাউশি-গোপালপুর সড়কের সংস্কার কাজ পান ফরিদপুরের মোঃ জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর ওই কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের সুমন ও মনোজকে। তবে ওই সড়কে কোন প্রকার কাজ না করেই গত ২৩ জুন কাজ শেষ দেখানো হয়। এরপর জামালপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নির্দেশে টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের সম্পূর্ণ বিল প্রদান করেন। গত ১ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ সমাপ্তির সনদপত্র প্রদান করা হয়। যার স্মারক নং ৪৭৪.৯৯.০০৯.২৫-৩৯৮।

সরেজমিন গোপালপুর-বাউশি সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশেই আগাছা পরিস্কারের কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বুধবার (০৮ অক্টোবার) থেকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কাজ শুরু করেছেন তারা।

সড়কে মাটি পরিস্কার করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শুরুজ আলী খানসহ কয়েকজন জানান, বুধবার থেকে তারা এই সড়কে কাজ শুরু করেছেন। ওই কাজের ঠিকাদার কে, তারা কেউ জানেন না। এসময় শাহীন নামের এক ব্যক্তি এসে শ্রমিকদের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে মানা করেন। শাহিনকে ক্যামেরা ধরার পরে তিনি পালিয়ে যান। ওই সড়কে গত ১০ বছরে কোন কাজই করা হয়নি। 

সড়কের পাশের বাড়ির মাহবুবুল ইসলাম তালুকদার জানান, এই সড়কে গত ১০/১২ বছরে কোন প্রকার কাজ হয়নি। গত বুধবার থেকে (০৮ অক্টোবর) কয়েকজন শ্রমিক সড়কের পাশের ময়লা পরিস্কার করতে দেখতে পান তিনি।

পানতারা গ্রামের আব্দুল হাই আকন্দ জানান, ২০১৫ সালের পর থেকে এই সড়কে কোন ধরনের কাজ হয়নি। পুরো সড়কটিই ভাল থাকলেও কিছু কিছু স্থানে অতি বৃষ্টির কারণে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেটিও মেরামতের জন্য কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত দুইদিন ধরে কয়েকজন শ্রমিক সড়কের দুই পাশে আগাছা ও মাটি পরিস্কারের কাজ শুরু করেছে। কে কাজ করাচ্ছেন তা তিনি জানেন না। একই চিত্র এলাসিন-দেলদুয়ার সড়কের। এই সড়কেও করা হয়নি কোন সংস্কার কাজ। তবে ৮৮ লাখ টাকা বিল প্রদান করা হয়েছে মোঃ জিন্নাত হোসেন বিশ্বাসকে।

 এছাড়া মধুপুর-কালিহাতী সড়কে কোন প্রকার কাজ না করেই ৯০ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছেন একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মির্জাপুর থেকে করটিয়া বাইপাস পর্যন্ত টপড্রেনের কাজ না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। মির্জাপুর সড়কে সিলকোডের কাজ না করেই হাসমত ব্রাদার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তুলে নিয়েছেন ৬০ লাখ টাকা। আর এই সকল কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন সুমন ও মনোজ নামের টাঙ্গাইলের দুই ঠিকাদার।
অপরদিকে পাথর ও ইট সাপ্লাই না করেই আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে ১৮ লাখ, ১২ লাখ এবং ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া পুরাতন মালামাল বিক্রি নামে টাঙ্গাইলে ২২ লাখ, মির্জাপুরে ২৫ লাখ এবং মধুপুর থেকে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকন কর্মকর্তা জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জুন মাসে কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদাররা। আর অফিসিয়ালি কাজ শেষে না দেখালে বিল দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই জামালপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক মনিরুজ্জামানের নির্দেশে নির্বাহী প্রকৌশলী সিনথিয়া আজমিরী খান জুন মাসে কাজগুলো সম্পন্ন দেখিয়ে বিলগুলো উঠিয়ে রেখেছে। এখন পর্যায়ক্রমে ঠিকাদাররা কাজ শুরু করবে।

মোঃ জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুজন আহমেদ  জানান, আমরা আসলে লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে চলি। এ কারণে কোন কাজ সরেজমিন আমরা তদারকি করি না। যারা লাইসেন্স ভাড়া নেন তারাই অফিসের সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ করেন। অফিস কিভাবে কাজ বুঝে না নিয়ে আমাদের বিল প্রদান করলো এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।

মধুপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহেল মাহমুদ জানান, জুনে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল না দিতে পারলে বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হয়। স্যারেরা ঠিকাদারদের অগ্রিম বিল প্রদান করেছেন। এখন ঠিকাদাররা ওইসব সড়কের কাজ শুরু করবেন। তবে এই বিষয়ে স্যারেরা আরো ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান অষ্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
জামালপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ মনিরুজ্জামানের সাথে (০১৭৩০৭৮২৮৬৯) নম্বরে বারবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।


ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সৈয়দপুরে দোকানে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গণসমাবেশ
সৈয়দপুরে দোকানে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গণসমাবেশ
রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টিতেই নেই বর্জ্য ফেলার জায়গা
রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৩টিতেই নেই বর্জ্য ফেলার জায়গা
সোহাগ পরিবহনে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার পিচ ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী আটক
সোহাগ পরিবহনে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার পিচ ইয়াবাসহ ব্যবসায়ী আটক