সৈয়দপুরে দোকানে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে গণসমাবেশ


আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে নীলফামারীর সৈয়দপুরে দোকানে হামলা ও টাকা লুট করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে গত রবিবার রাতে শহরের মুন্সিপাড়ায় গণসমাবেশ ও সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সচেতন ওয়ার্ডবাসী আয়োজিত ওই সমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য বলেন আরিফ হোসেন।
ওই বক্তব্যে বলা হয়, বিগত ২০২৩ সালের ১০ মে শেরে বাংলা সড়কের পশ্চিম পাশে রেলওয়ের জায়গার পজেশন ও অবকাঠামো পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত মালিক রাশিদ সিদ্দিকীর কাছ থেকে ক্রয় করেন ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন। ক্রয়কৃত পজেশনের আয়তন ৪৫০ বর্গফুট। যার বিনিময় মূল্য ২৫ লাখ টাকা। পরে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশীর বিভাগীয় ভূ-সম্পদ অফিস থেকে তা বন্দোবস্ত নেয়া হয়। যথারীতি রেলওয়ের বিধি মতে জমির ভাড়াও পরিশোধ করা হয়। আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ভাড়াও পরিশোধ আছে বলে এই অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
এরপর আশরাফ হোসেন তার ক্রয়কৃত দোকানঘর ও পজেশন আমমোক্তারনামা মালিক মূলে ছেলে আওয়ান আশরাফ ও চাচাতো ভাই রুবেল হোসেনের নামে করে দেয়। এই চুক্তিনামা হয় এ বছরের ১০ আগস্ট। মালিকানা পেয়ে এরা যথানিয়মে ওই দোকান ঘরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এদিকে বাড়তি লোভ চরিতার্থ করতে বিক্রেতা রাশিদ সিদ্দিকী ও তার পরিবারের সদস্যরা বিক্রিত পজেশন ও অবকাঠামো বেদখল করার পায়তারা শুরু করে। ফলে ভোগদখলীয় ব্যক্তিরা ঘটনার বিষয়ে সৈয়দপুর সিনিয়র সহকারি জজ আদালত নীলফামারীতে নিষেধাজ্ঞার দাবিতে মামলা করে। মামলা নং ১৭৭/২৫। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আদালত বাদী ও বিবাদীর উভয় পক্ষের নিযুক্তিয় বিজ্ঞ কৌশলীর মাধ্যমে বক্তব্য পেশ করেন। শুনানি অন্তে বিজ্ঞ আদালত বাদী বরাবরে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও স্থিতিবস্থার আদেশ দেন। এর আগেও নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিবাদীদের বিরুদ্ধে একই স্থানের জন্য ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করেন।
এ গণসমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকদের লিখিতভাবে আরো জানানো হয়, জজ আদালত নিষেধাজ্ঞা জারির ৯ দিন পর বিবাদী রাশিদ সিদ্দিকী, খালেদ সিদ্দিকী, সাঈদ সিদ্দিকী, বোন মাহমুদা খাতুন, রাশিদ সিদ্দিকীর স্ত্রী সীমা সিদ্দিকী ও সাফতারা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১৫/২০ জন মিলে গত ৮ অক্টোবর দিনের বেলা দুপুরে প্রকাশ্যে অতর্কিত হামলা চালায় দোকানে। এসময় হামলার শিকার হয় দোকান মালিক আওয়ান আশরাফ ও রুবেল হোসেন। হামলাকারীরা এদের শুধু মারপিট করেই ক্ষান্ত হয়নি, নিয়ে গেছে ক্যাশ বাক্স থেকে এক লাখ তিন হাজার টাকাও। হামলা ও দোকান থেকে টাকা লুটের বিষয়ে সৈয়দপুর থানায় অভিযোগ করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ মুঠোফোনে জানান।
এদিকে ৮ অক্টোবর হামলার পরদিন ৯ অক্টোবর রাতে মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাশিদ সিদ্দিকী তার বৃদ্ধ মাতা সাফতারা বেগমকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দোকান মালিক আওয়ান আশরাফের বাবা আশরাফ হোসেন, জ্যাঠা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকু ও প্রতিবেশী ওষুধ ব্যবসায়ী রাজনীতিক আবু নাসিম মিঠুর নামে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে রেল কোয়ার্টার দখল, চঁাদাবাজি, রেলওয়ের ভূ-সম্পদ দখল করে বিক্রি, আওয়ামী ট্যাগ ও হেলমেট বাহিনীর হোতা। এসব ব্যক্তিরা রোববার রাতে (১২ অক্টোবর) গণসমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে বিবাদীদের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের দোসর না।
এমনকি আমরা কোন দখলবাজ ও হেলমেট বাহিনী লালন পালন করি না। বরঞ্চ তারাই বট বাহিনী ও হাসিনার দোসরদের ব্যবহার করেছে ৮ অক্টোবর।রাশিদ সিদ্দিকী ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার থেকে বাঁচতে পিতামাতাহীন এতিম ব্যবসায়ী রুবেল হাসেন ও অসহায় আওয়ান আশরাফ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। গণসমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকু, হার্ডওয়্যার ও রং ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশরাফ হোসেন, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী আবু নাসিম মিঠু প্রমুখ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ