পদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের বাকি ৪৩ দিন
বিএনপিতে থাকছেন কি ফজলুর?

প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। এর আগে তিনি দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। পদ স্থগিত হওয়ার পর থেকে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করতে পারছেন না আলোচিত এই রাজনীতিবিদ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে এক বক্তব্যের জেরে ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ গত ২৬ আগস্ট স্থগিত ঘোষণা করে বিএনপি।
নিয়ম অনুযায়ী আগামী ২৬ নভেম্বর তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের কথা। কিন্তু পদ স্থগিত হওয়ার পরও ফজলুর রহমান গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বিভিন্ন টকশোতে জোরালো বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যে বিএনপির সিদ্ধান্তে নাখোশ সেটিও বারবার তার বক্তব্যে উঠে এসেছে। এমতাবস্থায় অনেকের মনেই প্রশ্ন ওঠেছে ফজলুর রহমানের স্থগিতাদেশ কি প্রত্যাহার করা হবে? তিনি কি দলে ফিরতে পারবেন?
পদ স্থগিতের পর সম্প্রতি তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে অতিথি করা হয়নি আলোচিত নেতা ফজলুর রহমানকে। সম্মেলনে তাকে রাখার জন্য তিনি তার দলকে আহ্বান করেছিলেন। তবে এতো কিছুর পরেও বিএনপির পক্ষ থেকে তার বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যামে চাউর হয়েছিল যে, ফজলুর রহমানকে দলে না নেওয়া হলে তিনি নিজেই একটি দল গঠন করবেন।
এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক বক্তব্যে ফজলুর রহমান বলেছেন, আমি আবারও বলে দিলাম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একটা দল হবে। এই দলটা যদি নির্বাচন করে, এই দলটা কিন্তু দাঁড়াবে। ইমরান খানের মতো দল হিসাবে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, আমাকে বলে আমি বাতিল হয়ে গেছি, কিশোরগঞ্জ সম্মেলনে যেতে পারব না। কে সহ্য করতে পারে এগুলো। আমিও তো মানুষ, এই দলের জন্য কি-না করেছি। জেল খেটেছি, নির্বাসনে রয়েছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নামে ৩০০ বক্তব্য দিয়েছি। যেটি বিশ্ব রেকর্ড।
তিনি আরও বলেন, আমার নেত্রী এখন সুস্থ, উনি জানেন না এটা। তারেক রহমান সাহেবের নামে আমি যে বক্তৃতা করি, বিএনপির নেতাদের চাঁদাবাজি, ধান্দাবাজির বিরুদ্ধে আমি যে বক্তৃতা করি, এই বক্তৃতা কেউ করে না। একটা কথার জন্য আমাকে তিন মাসের জন্য দলের সব প্রকার কর্মকাণ্ড থেকে স্থগিত করা হয়েছে। আদেশ দিয়েছেন আমি খুশি হয়েছি। এখন আপনাদের অনুরোধ করি এটি তুলে দেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দল গঠনের বিষয়ে ফজলুর রহমান বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে দেশে দল হবে। আপনি থাকবেন, আমি থাকব কিনা সেটা দেখা যাবে পরে।
পদ স্থগিত হওয়ার পরে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ঠিকানা টকশোতে গয়েশ্বরকে প্রশ্ন করেন, বিএনপিতে কি মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত হচ্ছেন? ফজলুর রহমান সম্প্রতি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন এমন সুরে তিনি আগেও কথা বলেছেন। এখন কেন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো।
তখন গয়েশ্বর রায় বলেছিলেন, ফজলুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তার আলাদা মর্যাদা রয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা বলে কোনো অপরাধ করলে তার বিচার করবেন না? ফজলুর রহমানের বক্তব্যের ভেতরে গত কয়েকমাস ধরে আক্রমণাত্মক শব্দপ্রয়োগ দেখছি। তার সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমি মনে করি তিনি সুন্দর সুন্দর ভাষায় বক্তব্য দিতে পারেন। সেখানে আপত্তিকর শব্দ উচ্চারণ না করলে মনে হয় ভালো হতো।
পদ স্থগিত হওয়ার পর ফজলুর রহমানকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ও কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভির বারী হামিম এক টকশোতে বলেছিলেন, ওয়ান্স এ আওয়ামী লীগ অলওয়েজ আওয়ামী লীগ। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ফজলুর রহমান আজকে বিএনপিতে এসেছেন, দু-তিনবার দল থেকে এমপিও হয়েছেন, এর আগে তিনি আওয়ামী লীগেরও এমপি ছিলেন। তিনি ৫ আগস্টকে ছোট করেছেন। তিনি বলেছেন- ৫ আগস্ট কালো শক্তি।
তবে বিএনপির অনেক নেতাই বলছেন, ফজলুর রহমানের অবদান দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধের জন্য অনেক। তাকে দলে ধারণ করতে পারলে বিএনপিই উপকৃত হবে।
এদিকে ফজলুর রহমানের পদ স্থগিতের চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ আগস্ট ২০২৫ (সূত্র নং-বিএনপি/সাধারণ/৭৭/১৪৭/২০২৫) স্মারকে আপনার নামে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়। আপনি কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব না দিয়ে সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করেন। আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট (সূত্র নং-বিএনপি/সাধারণ/৭৭/১৪৮/২০২৫) স্মারকে কারণ দর্শানোর নোটিশের লিখিত জবাব প্রদানের জন্য পুনরায় ২৪ ঘণ্টার সময় বর্ধিত করা হয়। আপনি আজ (২৬ আগস্ট) কারণ দর্শানোর নোটিশের যে জবাব দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়।’
এতে বলা হয়, ‘তথাপিও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে আপনার অবদান বিবেচনা করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আপনার দলীয় প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ তিন মাসের জন্য নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘এখন থেকে আপনি টকশো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুণ্ন না হয় এবং দেশের জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকবেন।’
ভিওডি বাংলা/ এমপি