অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে?

বাংলাদেশে গুম খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেনাবাহিনীর ১৫ জন কর্মরত কর্মকর্তাসহ ২৫জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সোমবার ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
এমন অবস্থায় সেনা হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশে আলোচিত হচ্ছে।
অভিযুক্তদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া কী?
গত ৮ই অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আগামী ২২শে অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরই গত ১১ই অক্টোবর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাবেক ও এলপিআরে যাওয়া ১৫ কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায়।
সোমবার সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছে সেখানেই রাখা হতে পারে হেফাজতে নেওয়া সেনা কর্মকর্তাদের। এরপরই তাদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। এই প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলছে- অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে ট্রাইব্যুনালের আইনেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, পরবর্তী প্রক্রিয়া হবে যেভাবেই হোক অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালের সামনে আসতে হবে। এরপর তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর তাদেরকে ট্রাইব্যুনাল জেলখানায় পাঠাবে। তারা জামিনও চাইতে পারে, ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাদের জামিনও দিতে পারে।
ট্রাইব্যুনাল বলছে, পরবর্তীতে ওই কর্মকর্তাদের অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হবে। অভিযোগ গঠন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের পর এ নিয়ে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা হবে, পরবর্তীতে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
প্রশ্ন ছিল, বিচার চলাকালে যদি আসামিরা আদালতে হাজির না হয়, কিংবা কেউ যদি পলাতক অবস্থায় থাকে তাহলে তাদের বিচার কোন প্রক্রিয়ায় হবে?
এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, "যদি তারা (গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া কর্মকর্তারা) ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয় অথবা তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে"।
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, যদি তাদের খুঁজে না পাওয়া যায় কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার না করতে পারে তখন এ নিয়ে রিপোর্ট প্রদান করতে হবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে।
নিখোঁজ কর্মকর্তার বিচার কীভাবে?
গত শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান জানিয়েছিলেন, গত ৮ই অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টিভি স্ক্রল বা গণমাধ্যম থেকে জানার পরপর সেদিনই এলপিআরের একজনসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সেনা কর্মকর্তা জানান, ওই ১৬জন কর্মকর্তার মধ্যে মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ বাদে বাকিদের সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সেদিন মি. হাকিমুজ্জামান বলেন, নয় তারিখে তিনি (মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ) বাসা থেকে বের হন আইনজীবীর সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত আর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেননি। সে হিসেবে তিনি একটা ইললিগ্যাল অ্যাবসেন্টে আছেন। ইললিগ্যাল অ্যাবসেন্স ঘোষণা করে প্রসিডিউর নেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেনা কর্মকর্তা কবির আহম্মদ যেনো দেশের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সকল স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোতে জানানো হয়েছে। একই সাথে তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় লোক পাঠানো হয়েছে বলেও সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলছে, আইসিটি আইন অনুযায়ী কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলবে।
প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বলেন, "যদি তাদের খুঁজে না পাওয়া যায় তখন কেন তাদের পাওয়া যাচ্ছে না তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রিপোর্ট দিতে বলা হবে"।
এরপর রিপোর্ট আসলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরু হবে। তাদের পক্ষে একজন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হবে, যোগ করেন তামীম। একই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে অনুপস্থিত থাকা অবস্থায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা
ভিওডি বাংলা/ এমএইচপি