• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে খাদ্য বিভাগের গাফিলতি:

ডিসি ফুড ও আরসি ফুডের ছত্রছায়ায় লুটপাটের অভিযোগ

রাজশাহী ব্যুরো    ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০১ এ.এম.
ছবি-ভিওডি বাংলা

রাজশাহীর খাদ্য বিভাগে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (আরসি ফুড) কার্যালয়ের ছত্রছায়ায় নিম্নমানের, দুর্গন্ধযুক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী চাল সরকারি গুদামে ঢুকিয়ে তা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বিতরণ করা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ এই চাল এখন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে-এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একাধিক অটো রাইস মিল থেকে নিম্নমানের সিদ্ধ চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি গোপনে চাল সরানোরও প্রমাণ মিলেছে।

ইতোমধ্যে ভবানীগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বাচ্চু মিয়াকে নিম্নমানের চাল কেনায় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ-মূল সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে থাকা জেলা ও আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

খাদ্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আরসি ফুড কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন ও ডিসি ফুড ওমর ফারুকের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরেই নিয়োগ-বাণিজ্য, পদোন্নতি, পদায়ন ও সরকারি চাল বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম চলছে। সম্প্রতি নীতিমালা উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগও উঠেছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, দূর্গাপুর, তানোর, বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার খাদ্য গুদাম ঘুরে দেখা গেছে-চালের বস্তায় খুদ মিশ্রণ, বিবর্ণ দানা, ভিন্ন জাতের চালের মিশ্রণ ও দুর্গন্ধ। সরকার নির্ধারিত ১৪% আর্দ্রতার বদলে অনেক চালেই পাওয়া গেছে নিম্নমানের দানা ও আর্দ্রতা ঘাটতি।

ভুয়া তালিকা ও জালিয়াতির অভিযোগ: নিয়ম ভেঙে চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নিম্নমানের চাল সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অনেক মিলারের নামে ভুয়া তালিকা তৈরি করে চাল সরবরাহ দেখানো হয়েছে। বেশ কিছু চালকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন-তাদের নামে চাল সরবরাহ দেখানো হলেও বাস্তবে তারা কোনো চাল দেয়নি।

তদন্তে ধরা পড়েছে দুর্নীতির চিত্র: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের চালের প্রমাণ পেয়েছেন। গোদাগাড়ী ও বাগমারায় নিম্নমানের চাল রাতারাতি বদলে ফেলা হলেও কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দুর্গাপুর উপজেলায় ৮০ মেট্রিক টন চাল খাওয়ার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর তা সরিয়ে নেওয়া হয়।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে-কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য মিলের নামে চাল সরবরাহ করেছেন। মোহনপুর উপজেলার ব্যবসায়ী আতাউর রহমান গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন-নিজের লাইসেন্স না থাকলেও অন্য মিলের নামে ৪২০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করেছেন।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা: ডিসি ফুড ও আরসি ফুড কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”

তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, খাদ্য বিভাগ ও মিলারদের সিন্ডিকেটের যোগসাজশেই এই লুটপাট চলছে।

উল্লেখ্য, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বাড়ি নওগাঁয়, যেখানকার বাসিন্দা ওমর ফারুক। সাবেক মন্ত্রীর আশীর্বাদে তিনি দুই বছর আট মাস আগে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদে বসেন। আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাবেক মন্ত্রী গ্রেপ্তার হলেও ওমর ফারুক এখনো পদে বহাল আছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর দাবি, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল দরিদ্র মানুষের অধিকার। নিম্নমানের চাল সরবরাহ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

তবে অভিযোগ-যারা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতাধর, তারাই এই সিন্ডিকেটের অংশ, তাই এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ভিওডি বাংলা-মো. রমজান আলী/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তাড়াশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান
তাড়াশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান
শিবচরে ছাত্রদলের দুই নেতা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
শিবচরে ছাত্রদলের দুই নেতা সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
জয়পুরহাটে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ
জয়পুরহাটে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ