• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

নিষিদ্ধ জালে হুমকির মুখে আশুরার বিল মৎস্য অভয়াশ্রম

নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি    ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৪৩ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার গোপালগঞ্জ ইউনিয়নে ২৩৮ হেক্টর এলাকাজুড়ে আশুরার বিল। মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয় মৎস্য অভয়াশ্রম। তবে সে অভয়াশ্রমে অবাধে চলছে দখল ও দূষণ। বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহার করে অবাধে চলছে মাছ শিকার। বিলের পানি শুকিয়ে সেখানে ধান চাষ করা হচ্ছে, আবার পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগের কারণে মাছ মরে যাচ্ছে। বিল সংস্কার না করায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বিলের জীববৈচিত্র্য।

স্থানীয়রা বলছেন, বিলে আগে বাটা, চেলা, তাপসী, তপতী, বাইন, কৈ, কুঁচিয়া, পুঁটি, রুই, চিংড়ি, টাকি, শিং, মাগুর, টেংরা, চোপড়া, পাঙ্গাস, আইড়, কালিবাউশ, বালিয়া, গুলশা, শোল, মলা, পাবদা, কাতল, ডারকা, ঢেলা, খলিশা, গজার, বোয়ালসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন জেলেসহ স্থানীয়রা। তবে দখল-দূষণ আর অবাধ শিকারের কারণে আগের মতো মাছ মিলছে না বিলে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আশুরার বিল বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত। বিলটিতে আগে বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। যার মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় অনেক দেশীয় মাছ বিলে পাওয়া যেত। বিভিন্ন কারণে বিল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সংস্কার না করায় বিলের পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে অভয়াশ্রমও হুমকির মুখে পড়েছে। বিলটি যদি খনন করা হয়, তাহলে অভয়াশ্রমটি রক্ষা পাবে। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের উৎপাদনও বাড়বে।’

আব্দুল করিম নামে আরেকজন বলেন, ‘আগে বিলে প্রচুর দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিল। জেলেসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বিলের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই, মাছও নেই আগের মতো।’

মৎস্য অভয়াশ্রম উল্লেখ করে বিলে একটি সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অভয়াশ্রমের কোনো নমুনা চোখে পড়েনি। চারিদিকে কচুরিপানা ভরা। বিলটি পরিষ্কার ও খনন করা হলে মাছের বংশবিস্তার আরো বাড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আশুরার বিলে আগে অনেক মাছ থাকলেও এখন বিলের পানি শুকিয়ে ধান চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে বিলে মাছ নেই বললেই চলে। ধানে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিলের পানি দূষিত হয়ে ছোট ছোট অনেক মাছ মরে যাচ্ছে।’

বিলে ধান চাষ করা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বিলে পানি আটকে রাখা হতো। এ কারণে ওই সময়ে বিলে ধান চাষ হতো না। এখন আবারো আমরা বিলে ধান চাষ করছি। ২০-৩০ হাজার মানুষ ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল। এখানে তো মাছ চাষ করা যাবে না, মাছ চাষ করলে তো আমরা ধান চাষ করতে পারব না।’

এটিকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওটা বুড়িরদহে মাছের অভয়াশ্রম করা হয়েছে, এখানে নয়। বন্যার সময় ওখানে মাছের অভয়াশ্রম থাকবে, আর ধান চাষের সময় আমরা আবাদ করব।’

এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হানিফ উদ্দীন বলেন, ‘মৎস্য অভয়াশ্রম রক্ষায় আমরা নিয়মিত নজরদারি করছি। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে সচেতনতামূলক সভা করা হচ্ছে। এসবের ব্যবহার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানাসহ নিষিদ্ধ জাল ধ্বংস করা হচ্ছে। সম্প্রতি আবারো বিভিন্ন ধরনের জাল ব্যবহারের অভিযোগ আসছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রাকৃতিকভাবেই অনেকটা এ অঞ্চলের পানির লেয়ার নিচে চলে যাচ্ছে। আশুরার বিল একটি প্রাকৃতিক জলাভুমি। এখানে পানি সরবরাহ করে রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। তবে বিগত সময়ে বিলের একপাশে রাবার ড্যাম করে পানি সংরক্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু ভৌগলিক কিছু সমস্যার কারণে সেটি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই রকম একটি ড্যাম স্থাপন ও বিল খনন করা গেলে পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে।’


ভিওডি বাংলা/ এমএইচ


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাউল ও গীতিকার আব্দুস সালামের পাশে জেলা প্রশাসন
বাউল ও গীতিকার আব্দুস সালামের পাশে জেলা প্রশাসন
পদ-পদবি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে বিবেচনা করা চলবে না : সারজিস
পদ-পদবি কিংবা প্রতিষ্ঠানের নাম দেখে বিবেচনা করা চলবে না : সারজিস
কুড়িগ্রামে শিশু অধিকার সপ্তাহ পালিত
কুড়িগ্রামে শিশু অধিকার সপ্তাহ পালিত