টাঙ্গাইলে দীর্ঘদিন পর ক্লু-লেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন


টাঙ্গাইলের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই) ঘটনার দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর একটি নৃশংস হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
টাঙ্গাইল পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন তালুকদার লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় মামুন মিয়া নামে এক ব্যক্তি ধনবাড়ী উপজেলার নাথেরপাড়া গ্রামে টাইলস মিস্ত্রি রফিকুল ইসলামের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মর্গে পাঠায়। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি রফিকুল ইসলামের মা ছাহেরা বেওয়া ধনবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য তদন্ত শুরু করলেও অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২২ সালের ২৫ জুলাই মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হয়।
পিবিআই টিমের তদন্তের সূত্র ধরে পুলিশ সুপার জানান, রফিকুল কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ছিলেন। তিনি পরিবার ও প্রতিবেশিদের মান্য করতেন না এবং চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহও ছিল। এছাড়া মামা ও মামাতো ভাইদের সঙ্গে তার জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। একই সঙ্গে রফিকুলের সঙ্গে তার ভাই হাফিজুরেরও জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। রফিকুলের বোনের স্বামী মকবুল তাদের বাড়িতে বসবাস করতেন। ঘটনার কিছুদিন আগে রফিকুল তার বোনের স্বামী মকবুলের ঘর ভেঙে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পিবিআইয়ের এসআই আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে একটি চৌকষ টিম দীর্ঘদিন ধরে রফিকুলের পরিবারের লোকদের উপর নজরদারি করছিল এবং হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনে চেষ্টা চালাচ্ছিল। অবশেষে রোববার (১২ অক্টোবর) রাতে নাথেরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিকুলের বোনের স্বামী মকবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মকবুল হত্যার কথা স্বীকার করে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) তাকে আদালতে পাঠানো হলে স্বেচ্ছায় তিনি রফিকুল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন এবং ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিষয়ে তথ্য দেয়। পরে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে আদালতকে মকবুল জানান, রফিকুলের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে ঘটনার কয়েকদিন আগে রফিকুলের মামা রেহানের বাড়িতে মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল, সেকান্দার ও আলম মিলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে রফিকুলের মামাতো ভাই আলম তাকে মাদক সেবনের কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে পাশের একটি জমিতে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল ও সেকান্দার ওই জমির দক্ষিণ পাশে লুকিয়ে ছিল। তাদের হাতে বাঁঁেশর লাঠি ছিল। রফিকুল সেখানে পৌঁছামাত্রই মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল ও সেকান্দার লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে তাকে মারপিট করে এবং আলম মাথায় ও মুখে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সবাই মিলে রফিকুলের রক্তাক্ত মরদেহ তার বাড়ির পাশে স্থানীয় মামুন গংদের বিরোধপূর্ণ জমিতে ফেলে রেখে আসে। পরে আদালত মকবুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা সহ বিভিন্ন প্রিণ্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ