বুধবার ‘শাহবাগ ব্লকেড’ এমপিও শিক্ষকদের

দাবি-দাওয়া আদায়ে সচিবালয়গামী পদযাত্রা হাই কোর্টের মাজার গেইটের সামনে পুলিশ আটকে দিলে রাতে সেখানে অবস্থানের ঘোষণা দিলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলেছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখান থেকে তারা সরে যাচ্ছেন শহীদ মিনারে।
মঙ্গলবার রাতে তারা হাই কোর্টের বদলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রাত সোয়া ৮টার দিকে দলবেঁধে তাদের শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেখা যায়।
এদিকে দাবি আদায়ে অনড় আন্দোলনকারীরা বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি না হলে এরপর ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে জড়ো হওয়া বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের পক্ষে জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী রাত ৮টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “শহীদ মিনার যেহেতু আমাদের আন্দোলনের মূল কেন্দ্র তাই আমরা রাতে সেখানে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করব। এর মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আমরা দুপুর থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে 'শাহবাগ ব্লকেড' কর্মসূচি শুরু করব।”
আন্দোলনকারীদের সামনে তিনি বলেন, “এতেও যদি সরকারের টনক না নড়ে তবে আমরণ অনশন শুরুর পরিকল্পনাও আছে।”
তিনি দ্রুত দাবি দাওয়া মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার ‘একজন ব্যার্থ উপদেষ্টা' বলেও মন্তব্য করেন আন্দোলনকারীদের এই নেতা।
বুধবার শাহবাগে পুলিশ বাধা দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা তা ‘প্রতিহত করবে’ বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পরর্বতী কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতির কর্মসূচি বুধবারও চলবে।”
মঙ্গলবার বিকালে ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে আন্দোলনকারীদের পদযাত্রা হাই কোর্টের মাজার গেইটে আটকে দেয় পুলিশ।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে এ আন্দোলন চালাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে ‘লাগাতার অবস্থান’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষক-কর্মচারীরা মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এদিন বিকাল ৪টায় শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। আধা ঘণ্টা পর পদযাত্রাটি হাই কোর্টের মাজার গেইটের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তা আটকে দেয়। তখন থেকে সেখানে শিক্ষক-কর্মচারীরা ও পুলিশ সদস্যরা মুখোমুখি অবস্থান করছেন।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে 'মার্চ টু সচিবালয়' পালনের কথা থাকলেও সরকারকে আরও কিছুক্ষণ সময় দিয়ে তা বিকালে নেওয়া হয়।
অপরদিকে দুপুর দেড়টায় আন্দোলনকারীরা পুলিশের অনুরোধে প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান ধরে রাখেন।
এদিন দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষকদের ওই অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলতে থাকে। এক পর্যায় পুলিশ পর পর বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে ও লাঠিচার্জ করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়।
এদিকে শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুইটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি