দেশের আলোচিত ১০ অগ্নিকাণ্ড

পুরান ঢাকার নিমতলী থেকে চুড়িহাট্টা বা বনানীর এফআর টাওয়ার থেকে বেইলি রোড ট্র্যাজেডির ক্ষতের সঙ্গে প্রতিবছরই আগুনের নতুন নতুন ঘটনা ক্ষত বাড়াচ্ছে। এসব ঘটনার পরপর বিভিন্ন তদন্তে অপরিকল্পিত নগরায়ন, অবৈধ কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের গোডাউন স্থাপন এবং পরিচালনার পাশাপাশি গ্যাস লাইনের ত্রুটির তথ্য উঠে এসেছে।
তবে ত্রুটি সারিয়ে বাসযোগ্য মহানগর এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এর কুফল হিসেবেই মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরে একটি প্রিন্টিং ও পোশাক কারখানায় আগুনের ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা এখন বোমার শহর। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের আশঙ্কা, সতর্ক না হলে ঢাকার অলিগলিতে নীরবে আবার জেগে উঠতে পারে এমন মৃত্যুপুরী। দেশের ১০টি অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর তথ্য থেকে সেই ভয়াবহ চিত্রই পাওয়া যায়।
নিমতলী বিস্ফোরণ, ২০১০
২০১০ সালের ৩ জুন ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১২৪ জন মানুষ৷ একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের ভবনে। নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন।
গাজীপুরে সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে আগুন, ২০১০
একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের ভোগরা এলাকায় ‘গরীব অ্যান্ড গরীব’ সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২১ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। আহত হন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছিল বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে, যা কারখানার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, ২০১২
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরির ৯তলা ভবনে আগুন লেগে প্রাণ হারান ১১২ জন শ্রমিক। তদন্তে জানা যায়, ওই কারখানায় আগুন দেয়া হয়েছিল এবং কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্টরির সব দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে শ্রমিকরা বের হতে না পারে৷
টঙ্গীতে কারখানায় আগুন, ২০১৬
ঢাকার উত্তরে টঙ্গীতে একটি সিগারেট তৈরির কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আগুনের ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর প্রাণ হারান ৩১ জন। ওই ভবনের নীচে ছিল রাসায়নিক গুদাম। এতে আগুন দ্রুতই ছড়িয়ে পড়েছিল।
বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন, ২০১৯
রাজধানীর বনানীর বহুতল বাণ্যিজিক ভবন এফআর টাওয়ারে (ফারুক রূপায়ণ টাওয়ার) ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুপুর ১টায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ২২তলা ভবনের অষ্টম তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় ও ক্রমেই সেটি অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে। ওই আগুনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন ৭০ জন।
চকবাজার ট্র্যাজেডি, ২০১৯
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯। সারাদেশের মানুষ যখন একুশের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে জেগে উঠেছিলেন, ঠিক সে সময় পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার আগুনে ৭৮ জনের মতো প্রাণ হারান। দমকল বাহিনী পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে আগুন, ২০২২
২০২২ সালের ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এক পর্যায়ে মজুদ রাসায়নিকের বিস্ফোরণে চার শতাধিক কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় অন্তত ৪১ জন প্রাণ হারান। আহত হয়েছিলেন ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষ।
বঙ্গবাজারে আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্থানের বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই পুড়ে ছাই হয় প্রায় সব দোকান। বঙ্গবাজার দোকান মালিক সমিতির দাবি, ওই আগুনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার।
বেইলি রোডে আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে একটি ছয়তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ৪৬ জন মারা যানা ভবনটিতে কাচ্চি ভাইসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পোশাক ও মোবাইল ফোনের দোকান ছিল।
সিদ্দিকবাজারে ভবনে বিস্ফোরণ ও আগুন, ২০২৩
২০২৩ সালের ৭ মার্চ রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ আগুনের ঘটনায় ২৬ জন প্রাণ হারান। আহত হন শতাধিক। বিস্ফোরণে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি ভবন পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেইজমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলাও বিধ্বস্ত হয়।
ভিওডি বাংলা/ এমপি