যশোরে ২০ কলেজের একজনও শিক্ষার্থী পাস হয়নি


এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কলেজগুলোর ফলাফলে চরম বিপর্যয় ঘটেছে। কমেছে জিপিও ৫, এ বোর্ডের অধীনে ২০টি কলেজ থেকে একজনও পরীক্ষার্থী পাস করেনি।
জানা গেছে, গত বছর (২০২৪) যশোর বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ; জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। এ বছর যশোর বোর্ডের আওতায় ১০ জেলা থেকে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এদের মধ্যে কৃতকার্য হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৯ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ২১ হাজার ১৮০ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৫ হাজার ৯৩১, মানবিক বিভাগে ৭৮ হাজার ৯৯৯ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩৪ হাজার তিন ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ১২ হাজার ৩৯৫ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৬ হাজার ৫৭৫ জন। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৯৯৫ জন।
এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ৩৮১, মানবিক বিভাগে ২ হাজার ১৭৯ ও ব্যবসা শিক্ষা বিভাগে ৪৩৫ জন রয়েছে। জিপিএ-৪ থেকে ৫ এর নীচে ১৯ হাজার ৩০, জিপিএ-৩.৫ থেকে ৪ এর নীচে ১৪ হাজার ৩৬, জিপিএ-৩ থেকে ৩.৫ এর নীচে ১১ হাজার ১৫৪, জিপিএ-২ থেকে ৩ এর নীচে ছয় হাজার ১৫৮ এবং জিপিএ-১ থেকে ২ এর নীচে ১৩৬ জন রয়েছে।
জেলা পর্যায়ে পাসের হারে এবার শীর্ষে রয়েছে যশোর। যশোর জেলায় পাস করেছে ৫৮.২৫ শতাংশ। এছাড়া, খুলনায় ৫৩.৯৮, বাগেরহাটে ৪১.৮৫, সাতক্ষীরায় ৫২.৬৪, কুষ্টিয়ায় ৪৮.৮৫, চুয়াডাঙ্গায় ৫০.৩৫, মেহেরপুরে ৪৮.৫১, নড়াইলে ৪৬.৪৬, ঝিনাইদহে ৪৫.০৭ ও মাগুরায় সর্বনিম্ন ৩৭.৪৬ শতাংশ পাস করেছে। ফলাফলের দিক দিয়ে এ শিক্ষাবোর্ড ৮ম স্থানে আছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রকাশিত ফলাফলে যশোর বোর্ডের এই চিত্র উঠে এসেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদৈর রাজপথে থাকা এবং ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের হার বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোসাম্মৎ আসমা বেগম বলেন, “বিগত জুলাই আন্দোলনে এই শিক্ষার্থী দীর্ঘ সময় রাজপথে ছিল। এ কারণে তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। পাশাপাশি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৪৫ দশমিক ১৮ শতাংশ ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে। এই প্রভাব পড়েছে সার্বিক ফলাফলে। আগামীতে বোর্ডের ফলাফল ভাল করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, ইতোপূর্বে পাসের হার বেশি দেখানোর জন্য বোর্ডগুলোর মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল। এখন তা নেই। আগে অতিমূল্যায়ন, অবমূল্যায়ন হতো। এখন তা হচ্ছে না। ফলে এটিই ফলাফলের প্রকৃত চিত্র।
তবে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর বোর্ডের ২০ কলেজের কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি। তাদের মধ্যে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বিএন কলেজ থেকে ১১ জন, ডুমুরিয়া মডেল কলেজ থেকে ১ জন, সদরের হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে ১ জন, পাইকগাছার কপিলমনি সহচারী বিদ্যা মন্দির থেকে ৫ জন, তেরখাদার আর্দশ শিক্ষা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করতে পারেননি।
অন্যদিকে, মাগুরা সদর উপজেলার বুজরুক শ্রীকুন্ডি কলেজ থেকে ৮ জন, রাওতারা এইচ এন সেকেন্ডারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৪ জন, মোহাম্মদপুর উপজেলার কানাইনগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস কলেজ থেকে ৯ জন এবং বিরেন সিকদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১১ জন পরীক্ষার্থীয় অংশ নিয়েছিলেন। তাদের কেউই পাস করতে পারেননি।
অনুরূপভাবে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার সিংজোর গোপালপুর কলেজ ১৮ জন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ইসলামীয়া মহিলা কলেজ ৯ জন, আখড়াখোলা আদর্শ কলেজ থেকে ৯ জন এবং সাতক্ষীরা কমার্স কলেজ থেকে ২ জন এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একজনও পাশ করতে পারেননি।
শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় আরও রয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া হাজিরবাগ আইডিয়াল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ (পরীক্ষার্থী ৭ জন), চৌগাছা উপজেলার মাড়ুয়া ইউসুফ খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, (২৬ জন), অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়ন কলেজ (৭ জন), কেশবপুর উপজেলার বুরুলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১০ জন), কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দুল গণি কলেজ (৪ জন), ঝিনাইদহ সদরের মুনুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৫ জন) এবং নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাকরাইল করিম কালেক সুলাইমান ইনস্টিটিউট (৩৫ জন)। এসব কলেজ থেকে শতভাগ পরীক্ষার্থী ফেল করেছে।
ভিওডি বাংলা-জুবায়ের হোসেন/জা