রাজবাড়ীর ৪ কলেজে শতভাগ ফেল: হতাশ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা


রাজবাড়ী জেলায় এ বছর উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় চারটি কলেজ থেকে অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেমে এসেছে হতাশার ছায়া।
শতভাগ ফেল করা কলেজগুলো হলো—রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ভাকলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গোয়ালন্দ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার কলেজ, আব্দুল হালিম মিঞা কলেজ এবং কালুখালী উপজেলার নূর নেছা কলেজ।
বরাট ভাকলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে ৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে ৭ জন এবং হালিম মিঞা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে ৫ জন অংশগ্রহণকারীও কেউ পাস করতে পারেনি। অন্যদিকে, কালুখালীর নূর নেছা কলেজের মানবিক বিভাগে ১১ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৪ জনসহ মোট ১৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও কেউ পাস করেনি।
বৃহস্পতিবার(১৬ অক্টোবর) দুপুরে বরাট ভাগলা স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজ শাখায় কোনো শিক্ষার্থী নেই। অফিসকক্ষ খোলা থাকলেও শ্রেণিকক্ষগুলো ফাঁকা।
কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী জাহিদুল ইসলাম ইকরাম বলেন, “আমাদের কলেজ শাখা চালু হয় ২০১৫ সালে। ২০১৬ সালে পাঠদানের অনুমতি পাই, আর ২০১৭ সালে প্রথমবার ৬৯ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৬৮ জন পাস করে উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। কয়েক বছর ভালো ফলাফল ছিল। কিন্তু কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা অন্যত্র চাকরি নেন। ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যায়, আর ফলাফলও খারাপ হতে থাকে। এবছর যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তারা সবাই অনিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। তবে এখন নতুনভাবে কলেজটি চালু করা হয়েছে; মানবিক শাখায় নতুন ৩১ জন ভর্তি হয়েছে। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ভালো ফল আসবে।”
এরপর গোয়ালন্দ উপজেলার আব্দুল হালিম মিঞা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজটি তালাবদ্ধ। একতলা ভবনের পাশে দুটি টিনের ঘর সাইনবোর্ডে লেখা, “প্রতিষ্ঠা ২০১৪”। এবছর ৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
একই উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার কলেজে গিয়েও তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। এখানেও কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
কালুখালীর নূর নেছা কলেজের শতভাগ ফেল করার কারণ জানতে কলেজটির অধ্যক্ষ মাহমুদুর রশিদ ইমনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে রাজবাড়ী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শংকর চন্দ্র বৈদ্যের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মতে, এমপিওভুক্ত না হওয়া, শিক্ষক সংকট, অনিয়মিত ক্লাস, শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি এবং একাডেমিক তদারকির অভাবই এমন ফলাফলের মূল কারণ।
রাজবাড়ী জেলার শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক দুরবস্থা চিহ্নিত করে জরুরি উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী বছরও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
ভিওডি বাংলা/কামাল হোসেন/এম