কৃষি অর্থনীতিতে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিএনপির রূপরেখা

কৃষকদের পরিশ্রমে ও ত্যাগে বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে ওঠার কথা উল্লেখ করে আগামীতে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় একটি অংশীদারিত্বভিত্তিক ও আধুনিক ব্যবস্থার রূপরেখা ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই ঘোষণা দেন।
কৃষকদের অবদানে বাংলাদেশের ভিত্তি: তারেক রহমান তাঁর বাণীতে বলেছেন, কৃষকদের পরিশ্রমে বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তাঁদের ত্যাগে পুষ্ট হয়েছে, আর তাঁদের দৃঢ়তায় শক্তি পেয়েছে। তিনি বগুড়ার উর্বর মাঠ থেকে বরিশালের 'ভাসমান বাগান' পর্যন্ত—প্রতিটি শস্যকণাকে কৃষকদের সহনশীলতার গল্প এবং সম্মিলিত ভবিষ্যতের বীজ হিসেবে অভিহিত করেন। বিএনপি বিশ্বাস করে, প্রকৃত খাদ্য নিরাপত্তা সম্ভব সরকার, কৃষক, উদ্যোক্তা এবং সমাজের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে।
ইতিহাসের আলোকে খাদ্য নিরাপত্তা: বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি স্থাপনের কথা স্মরণ করেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তাঁর নেতৃত্বে সেচ সম্প্রসারণ, খাল পুনঃখনন এবং বহুবর্ষজীবী ফসল চাষের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষপীড়িত জাতিকে খাদ্যে স্বনির্ভরতার পথে নিয়ে যাওয়া হয়। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সময়ে সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন এবং 'কাজের বিনিময়ে খাদ্য' কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও মানবিক দায়বদ্ধতা: তারেক রহমান বর্তমান সময়ে দেশের বাড়তি খাদ্যমূল্য, পানির সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির—১১.৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিবারগুলোর চরম খাদ্য সংকটে পড়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদের জরুরি যৌথ পদক্ষেপের দাবি জানান। তিনি গাজা, সুদান ও ইয়েমেনসহ বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
বাণীতে তারেক রহমান কৃষি নিরাপত্তা মডেলকে মানবিক, উদ্ভাবনী ও অংশীদারিত্বভিত্তিক করার জন্য কৃষক ক্ষমতায়ন ও কৃষি উন্নয়নে ছয়টি মূল পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন-
১.ফার্মার্স কার্ড উদ্যোগ: প্রতিটি কৃষককে একটি নিরাপদ ডিজিটাল পরিচয়পত্র দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে মধ্য-স্বত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি ভর্তুকি, ন্যায্য দাম, ঋণ, ফসল বিমা ও সরকারি ক্রয় সুবিধা নিশ্চিত হবে। এর মাধ্যমে কৃষক হবেন জাতীয় অর্থনীতির সমান অংশীদার এবং শোষণের অবসান হবে।
২.জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও পানি নিরাপত্তা ২০,০০০ কিলোমিটার নদী ও খাল পুনরুদ্ধার, সম্প্রদায়ভিত্তিক সেচ ব্যবস্থা পুনর্প্রবর্তন এবং আধুনিক তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে পানির প্রবাহ সুরক্ষিত করা হবে।
৩.পানি-সংরক্ষণমূলক কৃষি অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং' (Alternate Wetting and Drying) ধান চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পানির অপচয় কমানো হবে, যা বাংলাদেশকে কার্বন ক্রেডিট থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করতে সহায়তা করবে।
৪.পুষ্টি ও মানব উন্নয়ন ফ্যামিলি কার্ড’ ও 'সবার জন্য স্বাস্থ্য' কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের গৃহপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার নেত্রী হিসেবে ক্ষমতায়ন করা হবে।
৫.কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান স্টোরেজ, প্রক্রিয়াজাত শিল্প ও রপ্তানিমুখী খাদ্যশিল্পকে কেন্দ্র করে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাতে *১৩ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান* সৃষ্টি করা হবে। আধুনিক গুদাম ও কোল্ড স্টোরেজের মাধ্যমে খাদ্য অপচয় কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো হবে। তরুণদের কৃষি উদ্যোগে ফেরাতে মেকানাইজেশন, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্টার্ট-আপ ফান্ডিং করা হবে।
৬. টেকসই উন্নয়ন একটি জাতীয় 'সার্কুলার ইকোনমি' মডেলে বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র ও গ্রামীণ বায়োগ্যাস সিস্টেমের মাধ্যমে কৃষি বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করে উৎপাদনে রূপান্তর করা হবে।
তারেক রহমান দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশের শক্তি সবসময় ছিল সেই হাতেই, যারা এই মাটিকে চাষ করে। বিএনপি সেই হাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করবে, যাতে তারাই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচপি/ এমপি