সংবাদপত্র ছাড়া মানবসভ্যতা নির্মাণ করা সম্ভব নয়: কাদের গনি চৌধুরী


বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতা নিয়ে ৫০টি নীতিমালা রয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এগুলো সবই সাংবাদিক এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। একটা থেকে রেহাই পাওয়ার পর আর একটাতে ঝোলানো হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য ‘সমন্বিত জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা’ প্রণয়ন করতে হবে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরের শহীদ সাংবাদিক গোলাম মাজেদ মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
যশোর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ ও তৌহিদ জামানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সহকারি মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন, যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি এড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল,শান্তনু ইসলাম সুমিত, যশোর প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান,নুরুল ইসলাম, এম আইউব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আনিসুজ্জামান, আবদুর রাজ্জাক রানা বক্তব্য রাখেন।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সমন্বিত জাতীয় গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন হলে এক একটি গণমাধ্যমের জন্য এক একটি আইন বা নীতিমালার দরকার পড়বে না।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরাই পারেন এদেশের সাংবাদিকতা বাঁচাতে। এজন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের সুদৃঢ় ঐক্য। প্রয়োজন দাসত্ব ছেড়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ। তাহলে সাংবাদিকরা ‘পেইডডগ’ না হয়ে সত্যিকারভাবেই ‘ওয়াচডগ’ হিসেবে জাতির বিবেকে পরিণত হতে পারবেন।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সংবাদপত্র ছাড়া মানবসভ্যতা নির্মাণ করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। সাংবাদিকতা পেশা হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সম্মানজনক পেশা। কিন্তু, আমরা কতটুকু তা ধরে রাখতে পেরেছি সেই প্রশ্ন উঠছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র যথাযথভাবে জাতির সামনে তুলে ধরা। কিন্তু, এ জায়গাতেও আমরা সঠিকভাবে থাকতে পারিনি।
বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে এদেশের অনেক গণমাধ্যম ও সাংবাদিক ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে তারা ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করেছে। যখন ফ্যাসিবাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞে পিচঢালা রাজপথ লাল হয়ে গেছে তখন গণমাধ্যম কর্মীদের একটি অংশ ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। তাদের জন্য একরাশ ঘৃণা প্রকাশ করেন তিনি।
কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, ১৬ বছর দেশে কোনো সাংবাদিকতা ছিল না। তারা দায়বদ্ধ থেকেছে ফ্যাসিস্ট ও ক্ষমতাবানদের প্রতি। এখন নতুন করে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে মালিকপক্ষ। তাদের নির্দেশ ছাড়া সাংবাদিকরা কোনো সংবাদ লিখতে পারেন না। অথচ, সাংবাদিকদের কোনো বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। চার-পাঁচ হাজার টাকায় এক একজন সাংবাদিক নিয়োগ দিচ্ছেন অধিকাংশ মালিক। এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। অধিকার আদায়ে সকল সাংবাদিককে আজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও উচ্চারণ করেন দেশের এই শীর্ষ সাংবাদিক নেতা।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্টের পতনের পর অনেক দালাল সাংবাদিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অনেকে পালানোর সময় আটক হয়েছেন। অনেককে নানা অপরাধের কারণেও আটক করা হয়েছে। এরা ফ্যাসিবাদের আমলে গণশত্রুদের মুখোশ উন্মোচন না করে উল্টো তাদের দালালি করেছেন। তার খেসারত এখন তারা দিচ্ছেন। অথচ, সেদিন সাংবাদিকরা যদি সত্যিকারভাবেই নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারতেন তাহলে এতগুলো মায়ের বুক খালি হতো না। এর দায় এদেশের সাংবাদিকরা কখনোই এড়াতে পারেন না।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গণমাধ্যম নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে না পারলে গণশক্তিতে পরিণত হবে। এটা সুস্থ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে অন্তরায়। যারা আগামীতে ক্ষমতায় যাবেন তারা যেন গণমাধমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করেন সে ব্যাপারেও তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
ভিওডি বাংলা/ এমপি