সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর : রিজওয়ানা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত হতে হবে, যাতে পুরো জাতির জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘রোড টু কপ৩০: হাউ ক্যান ন্যাশনাল ইন্টারেস্টস বি অ্যালাইন্ড উইথ গ্লোবাল ক্লাইমেট গোলস?’–এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘এ ওয়ার্ল্ড বিয়ন্ড ক্রাইসিস: ক্লাইমেট সলিউশনস দ্যাট ওয়ার্ক’।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘নির্গমন কমানো মানে শুধু উৎপাদন নয়, দায়িত্বশীল ভোগও নিশ্চিত করা। টেকসই ভোগ ও উৎপাদনের জন্য সব খাতে পরিবেশবান্ধব কর্মকৌশল নিতে হবে।’

তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিভিন্ন অঞ্চলে সবুজ অফিস ভবন নির্মাণ করছে এবং জ্বালানি দক্ষ ভবনের মডেল তৈরি করছে।

জলবায়ু অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দ্বৈত হিসাব ও দুর্বল বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে, যা অভিযোজন সহায়তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে।’

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‌‘যদি প্রধান অর্থনীতিগুলোর নির্গমন কমানো না যায়, তাহলে শুধু প্রযুক্তি হস্তান্তর সমস্যার সমাধান করবে না। বাংলাদেশকে জাতীয় স্বার্থ ও মানুষের জীবিকা রক্ষায় আরও সক্রিয় থাকতে হবে।’

তিনি সরকারের হালনাগাদ জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি)–এর প্রশংসা করেন, যা সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রণীত হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরকে পরিবহন, কৃষি ও শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে নির্গমন হ্রাসের জন্য সময়সীমাসহ একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেন তিনি।

উপদেষ্টা জানান, নবগঠিত বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি)–এর অধীনে চারটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়েছে, যেখানে সিভিল সোসাইটি ও অ্যাকাডেমিয়ার প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে তিনি বিকল্প নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের আহ্বান জানান। ‘উর্বর মাটির পরিবর্তে নদী খননের পলি ব্যবহার করলে ইট উৎপাদন টেকসই হবে, কৃষিজমি রক্ষা পাবে এবং পাহাড় কাটার প্রবণতাও কমবে,’ বলেন তিনি।

অভিযোজনমূলক পদক্ষেপে জোর দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “উপকূলীয় বনায়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও লবণাক্ততা অপসারণ প্রযুক্তি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সহনশীলতা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি।”

তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের বাংলাদেশে স্থানীয় সমাধান বাস্তবায়নে বেশি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।

সিপিডি ট্রাস্টির সদস্য খুশি কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন—ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সি৩ইআর উপদেষ্টা ড. আইনুন নিশাত, ইআরডির উপসচিব ড. শাহ আব্দুল সাদী, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক, জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তা উলরিশ ক্লেপম্যান, বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন সুলতানা লিরা, এবং এডিবির সিনিয়র ক্লাইমেট অফিসার মৌসুমি পারভীন।

ভিওডি বাংলা/ আরিফ