• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

এনসিপি নেতার অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও-ছবি ফাঁস

মাদারীপুর প্রতিনিধি    ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫৬ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুর জেলা এনসিপি সদস্য মেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য, নারীদের কুপ্রস্তাব, পরকীয়া, পুলিশ দিয়ে হয়রানিসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ফাঁস হয়েছে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অশ্লীল কথোপকথনের ভিডিও কল রেকর্ড ও ছবি। মেরাজুলের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

এদিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক, ব্লাকমেইল করে টাকা আত্মসাৎ ও হুমকির অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এক ভুক্তভোগী নারী।

মেরাজুল ইসলাম মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের ফার্নিচার পলিশ মিস্ত্রি সিরাজ বেপারীর ছেলে। এক সময় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন তিনি।

ফাঁস হওয়া ৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও কল রেকর্ডে শোনা যায়, এক নারীর সঙ্গে নিজের গড়ে তোলা অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন অশ্লীল কথা প্রকাশ করেন এনসিপির সদস্য মেরাজুল ইসলাম। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওই নারীকে কথা বলতে বাধ্য করেন এবং হুমকিও দেন তিনি। একপর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে কলটি কেটে দেন ওই নারী।

খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  টাকা চুরি ও নারী কেলেঙ্কারি অপকর্মে জড়িত থাকায় বহিষ্কার হয়েছেন পরপর চারটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক পদ থেকে। বর্তমানে এনসিপিতে যোগ দিয়ে চালাচ্ছেন অবৈধ বালু ব্যবসার সিন্ডিকেট। থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুল, ইকরা স্কুল, কিডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও মডেল স্কুল থেকে প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ ও নারীদের কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ অনৈতিক সম্পর্কে জড়িত থাকার অপরাধে বহিষ্কার করা হয় মেরাজুলকে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সুযোগ বুঝে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিতে যোগ দেন মেরাজুল। ভাগিয়ে নেন মাদারীপুর জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য পদ। ধীরে ধীরে পরিচালনা শুরু করেন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সিন্ডিকেট। অবৈধ ড্রেজার বালু বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় হামলার ঘটনাও ঘটান তিনি। বর্তমানে রাজৈর উপজেলার তাতিকান্দা, শংকরদী, হোসেনপুর ও পাইকপাড়াসহ বিভিন্ন নদী বেষ্টিত এলাকায় চলছে তার আধিপত্য।

এছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় মিথ্যা অভিযোগপত্রে নাম লিখে মামলার ভয় দেখিয়ে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা দাবির অভিযোগ পাওয়া গেছে এনসিপি নেতা মেরাজুল ইসলাম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। নাম কাটানোর কথা বলে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোখলেস মিনার কাছে দাবি করে মোটা অংকের টাকা। 

ভুক্তভোগী নারীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, এনসিপির সদস্য মেরাজুল মাদক ব্যবসা ও সেবন করেন। তার সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর দীর্ঘ ৩ বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। এ সময় তার বাসায় আসলে সুযোগ বুঝে ওই নারীর মোবাইল থেকে মেরাজুলের মোবাইলে গোপন ছবি নিয়ে যায়। পরে ব্লাকমেইল করে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর আবার ব্লাকমেইল করে টাকা দাবি করেন এবং ওই নারীকে নানা জায়গায় যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। অতিষ্ট হয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে প্রথমে রাজৈর থানায় ও পরে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেন সেই ভুক্তভোগী নারী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী আরেক নারী জানান, তার সন্তান থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুলের (কিন্ডারগার্টেন) একজন শিক্ষার্থী। মেরাজুল ওই স্কুলের শিক্ষক থাকাকালীন সময় রাতে তার মোবাইলে কল দিতেন। একদিন বিরক্ত হয়ে ওই নারী তার বাবার কাছে ফোন ধরিয়ে দেন। পরে তার বাবা স্কুল কতৃপক্ষকে বিষয়টি জানালে তারা মেরাজুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।

এ ব্যাপারে থ্রি-ডি ডিজিটাল স্কুলের পরিচালক আরিফুজ্জামান টিপু বেগ বলেন, আমাদের স্কুলের টাকা চুরি ও নারী ঘটিত কেলেঙ্কারি এই দুইটি প্রধান অপরাধের জন্য মেরাজুলকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে একই কার্যকলাপ করার অপরাধে আরও তিনটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল থেকেও তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে মেরাজুলকে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সুযোগে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা তুলে নিজের কাছে রেখে দিতো এবং হিসাব রক্ষকের কাছ থেকে হিসাবের খাতা চুরি করে লিখে রাখতো। এভাবে প্রায় ৪০ হাজার টাকা চুরি করে। পরে ধরা পড়ে গেলে আমাদের হাতে-পায়ে ধরে মাফ চায় এবং আবার তাকে চাকরিতে নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও একই কাজ করে। এছাড়া মেরাজুলের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের বিভিন্ন অভিযোগ আসে৷ যেসব ছাত্র-ছাত্রীদের বাবা প্রবাসে থাকতো, সেইসব মহিলাদের টার্গেট করত এবং তার ফাঁদে কেউ পা দিলে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলতো। 

মাদারীপুর জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী আজগর শেখ বলেন, এনসিপি দিন দিন বড় হচ্ছে। এখানে কিছু সুবিধা ভোগী লোক তার স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যোগ দিচ্ছেন। তবে মেরাজের (মেরাজুল ইসলাম) বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ পাই, তাহলে কেন্দ্রকে অবগত করা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, এনসিপি নেতার বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এর আগে একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি অবগত আছি। পাইকপাড়া থেকেও অবৈধ বালু উত্তোলনের অভিযোগ পেয়েছি। খবর পেলেই ব্যবস্থা নেব। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিথ্যা হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গৌরীপুরে প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান
গৌরীপুরে প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলায় যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
নলছিটিতে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
নলছিটিতে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ