আমেরিকায় শিক্ষায় বিপর্যয় : এআই কি সমাধান দেবে


করোনা মহামারি আমেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থায় গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে নিচে নেমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, মনোযোগের ঘাটতি এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই সংকট থেকে শিক্ষার্থীদের টেনে তুলতে অনেকেই ভরসা রাখছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ওপর।
শিক্ষায় এআই : নতুন আশা নাকি নতুন ভয়?
মিসিসিপি ও লুইজিয়ানাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করছে এআই টিউটর—যা শিক্ষার্থীর ভুল ধরিয়ে দেয়, উচ্চারণ ঠিক করে এবং দক্ষতা অনুযায়ী পাঠ নির্ধারণ করে।
ডেনভার পাবলিক স্কুলে গত বছর থেকে ‘আমিরা লার্নিং’ নামে একটি এআই টুল চালু হয়েছে। সফটওয়্যারটি শিক্ষার্থীর পড়া শুনে তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক দেয়। পরিচালক জেনিফার বেগলি বলেন-
“শিক্ষার্থীরা এআই-কে বন্ধুর মতো মনে করে। তারা আনন্দের সঙ্গে শিখছে, এবং যা একজন শিক্ষক ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একসঙ্গে করতে পারেন না, এআই তা মুহূর্তেই করছে।”
শিক্ষকের বিকল্প নয়, সহায়ক মাধ্যম এআই
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়িং জু’র গবেষণায় দেখা গেছে—শিশুরা যখন এআই চ্যাটবটের সঙ্গে পড়ে, তখন তারা প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষকের সমান উপকার পায়। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন-
“এআই কখনোই শিক্ষক বা অভিভাবকের বিকল্প নয়, বরং এটি একটি সহায়ক টুল।”
টেক্সাসের বয়েজ অ্যান্ড গার্লস ক্লাবের নির্বাহী পরিচালক আন্ড্রা জোন্স বলেন-
“একজন অভিভাবক যখন শিশুকে কোলে বসিয়ে গল্প পড়ে শোনায়, সেটার মানসিক প্রভাব কোনো প্রযুক্তি দিতে পারে না।”
এই প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ‘এডসোমা’ নামে একটি এআই অ্যাপ ব্যবহার শুরু করেছে, যা উচ্চারণ সংশোধন ও বই নির্বাচনে সহায়তা করে।
ডেটা প্রাইভেসি ও স্ক্রিন টাইম নিয়ে উদ্বেগ
এআই ব্যবহারে বড় দুটি উদ্বেগ হলো-
শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম
ডেটা গোপনীয়তা রক্ষা।
এই কারণে নিউইয়র্কের সরকারি স্কুলগুলো গত বছর একটি এআই-নির্ভর রিডিং প্রোগ্রামের চুক্তি বাতিল করেছিল। অন্যদিকে ডেনভার কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা শিক্ষার্থীদের তথ্য সুরক্ষায় কঠোর নীতিমালা অনুসরণ করছে।
ধনীরা বই পড়বে, গরিবরা এআই-এ নির্ভর করবে?
এআইএডু সংস্থার প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স কটরান সতর্ক করে বলেন-
“আগামী দশ বছরে হয়তো দেখা যাবে, গরিব বাচ্চারা পড়ছে শুধু এআই শিক্ষকের কাছে; আর ধনী বাচ্চারা শিখছে বাস্তব শিক্ষকের কাছে। এতে শিক্ষায় বৈষম্য আরও বাড়বে।”
পেনসিলভানিয়ার এক স্কুলপ্রধান জর্ডান ক্যাল্ডওয়েল বলেন-
“আমরা এআই ব্যবহার করছি সতর্কভাবে। প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তবে বই, গল্প ও লাইব্রেরির অভিজ্ঞতা কোনো সফটওয়্যার দিতে পারবে না।”
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষার জগতে একদিকে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলছে, অন্যদিকে তৈরি করছে নতুন উদ্বেগের ক্ষেত্রও। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি ও মানবিক সংযোগ-এই দুইয়ের ভারসাম্যেই টেকসই সমাধান নিহিত।
ভিওডি বাংলা/জা