সাহিত্য ও সংস্কৃতি
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশ সেমিনার অনুষ্ঠিত


ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ দূতাবাস জার্মানির যৌথ উদ্যোগে একটি সেমিনার আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারে মূল বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক নাওমি হোসেইন বলেন, গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় চিন্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তবে মৌলিক এবং মানবিক অধিকার আদায়ের জন্য শত শত তরুণকে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ত দিতে হয়েছে। কোনো সভ্য সমাজে এটা কাম্য হতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের সামনে এর কোনো বিকল্প ছিল না।
অধ্যাপক নাওমি হোসাইন আরও বলেন, বাংলাদেশকে সফট পাওয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে। মানুষ যদি তার ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয় এবং এ ব্যাপারে আপস না করে তবেই কোনো সরকার আর স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারবে না। দেশি-বিদেশি শ্রোতাদের উপস্থিতিতে তিনি দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে দেখান কীভাবে রংপুরে আবু সাঈদ বুলেটের সামনে নির্ভয়ে বুক পেতে দাঁড়িয়ে ছিল।
অধ্যাপক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের ঘাড় থেকে সিন্দাবাদের ভূত নেমে গেছে। দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিতাড়িত করে একাত্তরে অর্জিত স্বাধীনতা পুনর্বাসন করেছে। আমাদের স্বপ্ন দেখার এবং উচ্চাশা পোষণ করার দিন ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকতে চায়। তারা চায় ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন। তারা চায় দেশ যেন দুর্নীতিবাজ লুটেরাদের হাতে ফেরত না যায়। আমাদের পক্ষে রাষ্ট্রসংস্কার এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ। সমাজ ও রাষ্ট্রের সংস্কার না হলে যে কোনো সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত ড. গেথার বলেন, আমি পারিবারিক অঙ্গনে ব্যক্তিগত ট্রমা নিয়ে কাজ করেছি। বাংলাদেশের মানুষ গত ১৫ বছর সামাজিক বা কালেক্টিভ ট্রমাতে ভুগেছে। কালেক্টিভ ট্রমা থেকে উত্তরণ চ্যালেঞ্জিং কাজ। যদি এই উত্তরণ সাধিত না হয় তবে যারা অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছিল এবং যারা রক্ত দিয়েছে, অত্যাচারের শিকার হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাদের মনে যে অশুভ ছায়াপথ হয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না।
অনুষ্ঠানে বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন, বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি নির্মাণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বিজ্ঞান এবং সাহিত্যক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অবদানের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, জুলাই গণজাগরণের মর্মবাণী ভবিষ্যতে উন্নততর মর্যাদাশীল এবং শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে প্রেরণা যোগাবে।
জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অধিকার সচেতন এবং প্রতিবাদী মানুষ। ১৯৭১ সালে তারা প্রতিবাদের সূত্র ধরেই রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল। পুনর্বার ২০২৪ সালে তারা প্রতিবাদ থেকে শুরু করে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে সেই স্বাধীনতার চেতনাকে পুনর্বাসিত করেছে। বাংলাদেশ নতুনভাবে তার ভবিষ্যৎ রচনা করতে চলেছে। সেভাবে আমাদের চিন্তা ও পরিকল্পনা করে যেতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবারই প্রথমবারের মতো বইমেলায় অংশগ্রহণের পাশাপাশি একটি সেমিনার আয়োজন করলো।
ভিওডি বাংলা/জা
ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক নাওমি হোসেইন: নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়।