• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

‘আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় দেখে কিছুটা হলেও তৃপ্তি পেয়েছি'

আদালত প্রতিবেদক    ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:২৩ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি, আসামিদের চূড়ান্ত বিচারের প্রথম ধাপ আজ অতিক্রম হয়েছে। হৃদয় শীতল হয়েছে, কিছুটাও হলেও তৃপ্তি পেয়েছি আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় দেখে। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর আজকে পর্যন্ত বেঁচে আছি, এবং অন্যায়-অবিচারের বিচার দেখতেছি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা।

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আদালতে তোলা হয়েছে গুম, খুনে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে। এদিন আদালতে উপস্থিত হন গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ইকবাল চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান ও ব্যারিস্টার আরমানসহ কয়েকজন।

তারা বলেন, জোরপূবর্ক গায়েব করে দেয়ার বিভীষিকা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করেছেন গুমের শিকার ব্যক্তিরা। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য হাসিনার শাসনামলে তাদের গুম করা হয়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, বলেন, ‘হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আজ আমরা কিছুটা হলেও তৃপ্তি পেয়েছি আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় দেখে। আমাকে ১৬ মাস গুম করে রাখা হয়েছে। আল্লাহর কাছে হাজার শোকর আজকে পর্যন্ত বেঁচে আছি। আমাদের ওপর যে অন্যায় করা হয়েছে, তা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না। একদিন কাউকে ওই আয়না ঘরে রাখলে তিনি বুঝতে পারবেন, কতটা বিভীষিকাময়।’

ইকবাল চৌধুরী বলেন, আসামিদের আদালতে আনতে পারায় সরকার ও চিফ প্রসিকিউটরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ। আশা করি, ন্যায় বিচার পাবো। পলাতকদেরও যেনো দ্রুত হাজির করা হয়।

আয়নাঘরে দীর্ঘ আট বছর ধরে গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল্লাহ হিল আমান আল আযমী বলেন, যারা অভিযুক্ত তাদের মধ্যে বাহিনীর ভেতরের কর্মচারীদের সংখ্যা সামান্যই। তাই সামগ্রিকভাবে পুরো বাহিনীকে অভিযুক্ত করে তোলা ন্যায়সংগত নয়। তবে যাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে তাদের কঠোর শাস্তি চাই আমরা। আসামিদের দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, সাবেক আইজিপি কারাগার আছেন। তাহলে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের কেন সাব জেলে রাখা হলো। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এটি ঠিক করেননি। আসামিদের সঙ্গে বৈষম্য করা ঠিক হবে না। অন্য গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মতো তাদেরকেও নির্বাচিত কারাগারে রাখা এবং প্রয়োজনে ডিভিশন প্রদানের ব্যবস্থা করা উচিত। সুস্পষ্ট আইনগত কাঠামো মেনে চললেই বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ থাকবে।

ব্যারিস্টার আরমান বলেন, ‘আজকে সেনা সদস্যদের আদালতে হাজির করা হলো। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিভাবে তারা আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হলেন। একজন ভিক্টিম হিসেবে আমার আশাবাদ, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী যেনো আর ভাড়াটে খুনির কাজ না করে। জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনীকে আর কোনো দিন যেনো জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো না হয়। সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনী যেনো আধ্যিপত্য শক্তির পুতুল যেনো না হয়, এই বিচারের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত হবে।’

তিনি বলেন, যেসব সামরিক কর্মকর্তা দেশ ত্যাগ করেছেন, তাদের নামে ওয়ারেন্ট ছিল এবং তাদের পাসপোর্ট বাতিল ছিল। এ অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টের ভেতর থেকে কীভাবে করে তারা দেশ ত্যাগ করলো? এ ঘটনায় উচ্চ পদস্থ কমিশন ঘটনের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় বাহিনীর যেসব সদস্য দায়িত্বরত ছিল, যাদের তত্বাধানে থেকে অভিযুক্তরা দেশ ত্যাগ করেছে তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিৎ। যাতে পলাতকরা বিচারকে প্রভাবিত করতে না পারে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২২ অক্টোবর) গুমের ঘটনায় দু’টি ও একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আসামিদের ঢাকা সেনানিবাসের সাব-জেলে নেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে পলাতক শেখ হাসিনা, তারেক সিদ্দিকীসহ ১৭ জনকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ
১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল
১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালেন ট্রাইব্যুনাল
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে