ট্রাইব্যুনালে অ্যাটর্নি জেনারেল
সাহস থাকলে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হতেন শেখ হাসিনা


সাহস থাকলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের মুখোমুখি হতেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কোনো শাসক-শোষক বা ফ্যাসিস্টকে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম শেখ হাসিনা ন্যায়বিচারের সামনে আসবেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।”
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে যুক্তিতর্ক খণ্ডনের শেষ দিনে এসব কথা বলেন দেশের এই সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্কের শেষ দিন ছিল এটি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা এক রাজনৈতিক নেতাকে বলেছিলেন, সাহস থাকলে বাংলাদেশের মাটিতে এসে বিচারের মুখোমুখি হোন। আমি ভেবেছিলাম তিনি মন থেকে এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু দেখলাম তা নয়। তার যদি সাহস থাকতো, তিনিও এই বিচারের মুখোমুখি হতেন।”
তিনি শুরুতে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসাসহ দুটি আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, “আজ আমি ন্যায়বিচারের সাক্ষী হতে এসেছি। এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষ সব ধরনের দালিলিক ও মৌখিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। কিন্তু আসামিপক্ষ কোনো যুক্তিযুক্ত বক্তব্য দিতে পারেনি।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, “১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বিচার যত কঠিনই হোক, যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে জাতি হিসেবে আমরা এগোতে পারব না।”
তিনি ১৯৫১ সালের মার্কিন আদালতের রোজেনবার্গ দম্পতির বিচার উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। সারা বিশ্ব প্রতিবাদ করলেও আমেরিকা ন্যায়বিচার সম্পন্ন করেছিল। আমাদেরও সেই মানদণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”
আসাদুজ্জামান বলেন, “ন্যায় শাস্তি নিশ্চিত না করলে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষ ভবিষ্যতেও গুলিতে মরবে, শিশু ও তরুণরা রাজপথে প্রাণ দেবে। তাই এই বিচারে আমরা যা প্রমাণ করেছি তা বিয়ন্ড অল রিজনেবল ডাউট।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “আসামিরা হয়তো রোজেনবার্গ দম্পতির মতো সাহসিকতার সঙ্গে রায় মেনে নেবেন। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়া যায়।” সবশেষে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এদিন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়। আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এই মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণাদি এবং দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা শহীদদের তালিকার বিবরণ। সাক্ষ্য দিয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
ভিওডি বাংলা/জা