২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা ও আ'লীগের কালো অধ্যায়

এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া
২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর ঢাকার পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাকে "লগি-বৈঠার পৈশাচিকতা" হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যেখানে উভয় আওয়মী লীগের ভয়াবহ লগি-বৈঠার তান্ডব, প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার ও মানুষ হত্যা করে লাশের উপর পৈচাশিকতার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। এই ঘটনাটি "লগি-বৈঠার পৈশাচিকতা" হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, কারণ এতে হিংস্রতা ও সহিংসতার চরম রূপ দেখা গিয়েছিল। ২০০৬ সালের এই দিনে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে লগি বৈঠা দিয়ে সাপ মারার মতো পিটিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শুধু তাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর লাশের ওপর নৃত্য করে তারা- যা সভ্য দুনিয়ায় অকল্পনীয়। স্বাভাবিক কারণেই তখন ওই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছিল দেশে-বিদেশে। আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সেই তাণ্ডবের ১৯ বছর হতে চললো।
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে একটি প্রহসনের যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। সেই থেকেই শুরু হয় বাংলার স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম আর লড়াই। দীর্ঘ প্রায় দু'শত বছরের সংগ্রাম আর লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। কিন্তু বৃটিশ মুক্ত স্বাধীন দেশ অর্জন হলেও স্বাধিকার ও অধিকার অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশের জনগণ। আবারো শুরু হয় সংগ্রাম আর লড়াই। এবার স্বাধিকার-অধিকার ও স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই।
'৫২ ভাষা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, '৭০-এর নির্বাচন সর্বশেষ ১৯৭১ সালের রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ আর লাল-সবুজের পতাকা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরও মুক্ত হলো না, আবারো শুরু হয় লড়াই ও সংগ্রাম। যে গণতন্ত্র ও বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য ১৯৪৭-এর পর থেকেই পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম ছিল যারই চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, সেই আকাঙ্ক্ষা আবারো ভূলুণ্ঠিত হলো।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একটি জাতীয় সরকার গঠনের আহবানকে পাশ কাটিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার। সরকার প্রতিষ্ঠার পর পরই শুরু হলো পুরোনো সেই লুণ্ঠন আর একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার খেলা। স্বাধীনতার পর পরই ভারতীয় মিত্রবাহিনী যখন বাংলাদেশের সম্পদ লুণ্ঠন শুরু করলো তখন তাদের এই অপকর্মের বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম.এ জলিল। দুঃখজনক তার এই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন সরকার তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠালো। বঞ্চিত করলো মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বীর উত্তম থেকে। স্বাধীনতার পর পরই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজবন্দী হলেন মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল। আওয়ামী সরকার এখানেই ক্ষান্ত হলো না, সেই শুরু তারপর কমরেড সিরাজ শিকদারসহ প্রায় ৩৬ হাজার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর রক্তে রঞ্জিত করলো তাদের হাত। ৪টি সংবাদপত্র বাদে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করা হলো, সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ২৫ জানুয়ারি ৭৫ মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ও চেতনা বহুদলীয় রাজনীতিকে গলা টিপে হত্যা করে প্রতিষ্ঠিত করলো একদলীয় বাকশাল।
আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক চরিত্র বহন করে যে, তারা কখনো তাদের সমালোচকদের সহ্য করতে চায় না। তারাই তাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী যখন রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ প্রতিষ্ঠা করতে গেলো তখন এই সম্মেলনে আক্রমণ করতে একটুকুও দ্বিধা করলো না। তৎকালীন সংসদের স্পীকার শাহেদ আলী পাটোয়ারীকেও সংসদের ভেতর হত্যা করলো। এটাই হচ্ছে আওয়ামী চরিত্র। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর হচ্ছে আওয়ামী লীগের সেই পুরনো ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ২০০৬ সালেরর এই দিনে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ঘটনা ঘটেছে। যা জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আমাদের করেছে লজ্জিত, অপমাণিত। সমগ্র বিশ্বের সভ্য মানুষের মনে আমাদের সভ্যতা ও মানবতা সম্পর্কে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর কোন আন্দোলনে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাসের ঘটনা অতীতে ঘটেছে কিনা তা সচেতন মানুষই ভালো বলতে পারবেন। ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের জন্য একটি কলংকিত অধ্যায়।
শান্তিকামী মানুষের জন্য এই দিনটি ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত, বীভৎস ও নিন্দনীয়। এই ঘটনা '৭২-৭৫-এর আওয়ামী দুঃশাসনকেই দেশবাসীকে মনে করিয়ে দেয় বারবার। সরকার পরিবর্তন কিংবা সরকারবিরোধী আন্দোলন কিংবা দাবি আদায়ের আন্দোলন, হরতাল-অবরোধ, অসহযোগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক পদ্ধতি অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু দাবি আদায়ের নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা করে প্রকাশ্যে তাদের লাশের ওপর এভাবে পৈশাচিক তান্ডব-নৃত্য পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে ঘটেছে বলে কোন বিবেকমান মানুষ বলতে পারবে না। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দাবিদার দলের পক্ষে এ ধরনে ঘটনা ঘটানো হলো কেন কিংবা কেনই বা তারা এই ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়ন করলো এবং কেনই তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে লগি-বৈঠার এই অশুভ কর্মসূচি গ্রহণ করলো? ৪ দলীয় জোটের মেয়াদ শেষ হবার মাত্র একদিন পূর্বে সরকারের শরীক জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের ৬ জন নেতাকর্মীকে এভাবে লগি-বৈঠার মাধ্যমে প্রকাশ্যে রাজপথে হত্যা করে আবার সেই লাশগুলোর ওপর পৈশাচিকতার নৃত্য কেন?
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের ভুল-ত্রুটিগুলো জনসম্মুখে প্রচার করে তার মাধ্যমে ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে মহাজোট ক্ষমতায় যাবে এটাইতো রাজনীতি হওয়া উচিত ছিল। তা না করে কেন এই পৈশাচিকতা? জনমনে তখন এই প্রশ্নগুলোর উদ্বেগ হলেও উত্তর ছিল না। কিন্তু এখন মনে হয় উত্তর খোঁজার জন্য জনগণকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না। উত্তর আজ দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট। এই ঘটনার মাত্র একদিন পরই তৎকালীন ৪ দলীয় সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তা গ্রহণ করে নিতে পারেনি। তারা আবারো বিভিন্ন নন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। সেই সময় একদিন দেশের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক মরহুম আনোয়ার জাহিদের বাসায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ১০০% গ্যারান্টি চায়। এছাড়া তারা দেশে কোন নির্বাচন হতে দিবে না। আর অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি তাদের পদলেহনকারী একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেই ক্ষেত্রে তারা আওয়ামী লীগকেই বেশি পছন্দ করে। সেই শক্তি মনে করে দেশবাসীর জনমত দেশপ্রেমিক-জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে চলে যেতে পারে আর তাই আন্দোলন অব্যাহত রেখে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার অনূকূল পরিশে সৃষ্টি করতে হবে।’’
আজকে আমার কাছে মনে হয় প্রাজ্ঞ রাজনীতিক মরহুম আনোয়ার জাহিদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২০০৮সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে। ২৮ অক্টোবরের পরে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অকার্যকর করার ফলে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তি এবং আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের নীল-নকশার অংশ হিসেবেই ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জেনারেল মইন উ আহমদ পরোক্ষ নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হলো ড. ফখরুদ্দিন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। শুরু হলো সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির নতুন নাটক। দুর্নীতি দমনের নামে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার প্রক্রিয়া, গ্রেফতার করা হলো দেশের প্রধান দুই দলের প্রধান ও সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। বিভিন্ন অজুহাতে গ্রেফতার করা হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলসহ বহু রাজনীতিকদের। সেই সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের এবং সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমদের মুখ থেকে দেশবাসী নানা ধরনের ওয়াজ-নসিহত শুনতে থাকলো। সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির কারখানার কথাও শুনতে পেয়েছিল দেশবাসী। তাদের এই ওয়াজ-নসিহতে অনেক বিজ্ঞ রাজনীতিকরাও বিভ্রান্ত হয়ে নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারে কালিমা লেপন করলো। অবশ্য তাদের এই ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চাপও প্রয়োগ করা হয়েছিল বলে শোনা যায়। মাইনাস দু'ফরমুলার কথাও প্রচারিত হলো দেশবাসীর নিকট।
মাইনাস দু'ফরমুলার অংশ হিসেবেই নাকি আজকের শেখ হাসিনা সেই সময় প্যারোলে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন বলে সচেতন মানুষ মনে করে। অন্যদিকে এ বিষয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আপোস করেননি বলেই নাকি আজকে তার এই পরিণতি। জেনারেল মইন উ আহমদের শাসনামলেই সাম্রাজ্যবাদী-আধিপত্যবাদী শক্তির সাথে আওয়ামী লীগসহ যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল তারই সফল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বলেই রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
নির্বাচনের পরপরই জাতীয় সংসদে মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের বক্তব্য, ‘‘সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া কখনো ক্ষমতায় আসা সম্ভব ছিল না।’’ রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলের ধারণা অনেকটাই পরিষ্কার করে দিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রবীণ রাজনীতিক আব্দুল জলিলের বক্তব্যে দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ৪ দলীয় জোট সরকারের পতনের ট্রাম কার্ড, ২৮ অক্টোবর নির্মম হত্যাকান্ড, মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মেনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের আন্দোলন অব্যাহত রাখা, ১/১১-এর মাধ্যমে একটি অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে জেনারেল মইন উ আহমদের আশীর্বাদে ড. ফখরুদ্দিন আহমদের সরকার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির নামে দেশকে রাজনীতি শূন্য করার প্রক্রিয়া এবং পরিশেষে ২৯ ডিসেম্বরের ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে মহাজোট সরকারকে ক্ষমতায় বসানো এক সুতোয় গাঁথা।
২৮ অক্টোবর পৈশাচিক, নারকীয় ভয়াবহ ঘটনায় হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট যারা ছিল তারা এ দেশেরই মানুষ। আর যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারাও এদেশেরই মানুষ। তারা একটি গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যেই রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়েছিল। তারপরও কেন তারা এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের শিকার তা তারা যেমন জানতো না, তেমনই তাদের পরিবারও হয়তো জানে না। ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে এভাবে মেধাবী রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করা হলে আগামীতে রাজনীতি হয়ে পড়বে মেধাশূন্য। মেধাহীনরাই নিয়ন্ত্রণ করবে রাজনীতির ময়দান। রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রতিপক্ষকে হত্যা করার এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে না পারলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে না। বুলেট মানুষকে হত্যা করে আর ব্যালট মানুষের অধিকার আদায়ের সুষ্ঠু মাধ্যম।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসার পর পরই তারা ২৮ অক্টোবর হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে সমগ্র জাতিকে হতবাক ও বিস্মিত করেছে। সরকারের এই কর্মকান্ডে দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে তারা মুখে আইনের শাসনের কথা বললেও বাস্তবে তারা তা বিশ্বাস করকো না। তারা আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে বাধা সৃষ্টি করে আইনের গতিপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে বার বার। বাংলাদেশের জনগণ আর কোন ২৮ অক্টোবর দেখতে চায় না। ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতা বিশ্ব বিবেককে আঘাত দিয়েছে। নাড়া দিয়েছে বিবেকবান সকল মানুষকে। রাজনৈতিক সমাবেশ ভণ্ডুল করার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বিরল। যা এখনো হাজার হাজার মানুষকে কাঁদায়।
৫ আগস্ট ২০২৪ ফ্যাসীবাদী শাসকের পতনের পর জনগন আশা করতেই পারে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকান্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং সেই ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে দেশবাসী আশা করলেও এখন অনেকটাই হতাশ হচ্ছে। ২০২৪'এর গণ-অভু্যত্থানের পর জনগন আশায় বুক বাঁধলেও সেই আশার আয়নায় ধুলা পড়তে শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। জনগন চায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। যাতে আর কোন ফ্যাসীবাদী শাসক প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে বাংলাদেশে। ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের বিচার করার একটি দায়বদ্ধতা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারসহ আমাদের সকলেরই রয়েছে। রক্তের ঋণের দায় থেকে এ সরকার মুক্ত হতে প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে। একইসাথে, শেখ হাসিনাসহ যেসব নেতারা এই সন্ত্রাসীদেরকে লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় আসার হুকুম দিয়েছিলেন, তাদেরও হুকুমের আসামী হিসেবে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাহলেই ২৮ অক্টোবরের শহীদদের প্রতি এত বছরের দায় থেকে জাতি মুক্ত হতে পারবে। পতিত আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনে যেসব কালাকানুন ও আইন তৈরি করা হয়েছিল, সেই আইন দিয়েই পতিত ফ্যাসীবাদী ২৮ অক্টোবরের পৈচাশিকতার কালো অধ্যায় রচনাকারী খুনি আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই দিনের শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এই প্রত্যাশায় ২৮ অক্টোবর শহিদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি এবং হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
লেখক: রাজনীতিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ভিওডি বাংলা/ এমএইচপি
নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়।