দ্রুত চার্জিং: সময় বাঁচায়, নাকি ব্যাটারির ক্ষতি বাড়ায়?

স্মার্টফোন জগতে দ্রুত চার্জিং বা ‘ফাস্ট চার্জিং’ এখন অন্যতম আলোচিত ফিচার। ব্যস্ত জীবনে হাতে সময় কম, তাই কয়েক মিনিটে ফোন পূর্ণ চার্জ হয়ে গেলে স্বস্তি মেলে। এই কারণেই বড় বড় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো এখন চার্জিং গতির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কে কত দ্রুত চার্জ দিতে পারে—এ নিয়েই চলছে প্রযুক্তির দৌড়।
গত বছরের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে (MWC) শাওমি দেখিয়েছিল চমকপ্রদ এক প্রযুক্তি—মাত্র ৫ মিনিটে ৪৩০০ এমএএইচ ব্যাটারির ফোন ৩০০ ওয়াট গতিতে পুরোপুরি চার্জ! তবে প্রশ্ন উঠেছে, এত দ্রুত চার্জিং কি ব্যাটারির জন্য নিরাপদ?
চার্জিংয়ের সময় আসলে কী ঘটে
বর্তমানের প্রায় সব স্মার্টফোনেই ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম-আয়ন বা লিথিয়াম-পলিমার ব্যাটারি। এ ধরনের ব্যাটারিতে থাকে ধনাত্মক (অ্যানোড) ও ঋণাত্মক (ক্যাথোড) ইলেকট্রোড এবং তাদের মাঝে ইলেকট্রোলাইট।
চার্জ দেওয়ার সময় লিথিয়াম আয়নগুলো এক ইলেকট্রোড থেকে অন্য ইলেকট্রোডে গমনাগমন করে, এতে তাপ উৎপন্ন হয় এবং শক্তি সঞ্চিত হয়। ব্যাটারির শুরুতে চার্জ দ্রুত হয়, তবে পূর্ণ হওয়ার দিকে গতি কমে আসে—যেমন স্পঞ্জ প্রথমে দ্রুত পানি শোষণ করে, পরে ধীরে।
সময়ের সঙ্গে ব্যাটারির ক্ষয়
দ্রুত চার্জিং হোক বা ধীরে—প্রতিবার চার্জ-ডিসচার্জ প্রক্রিয়ায় সামান্য তাপ উৎপন্ন হয়, যা সময়ের সঙ্গে ব্যাটারির রাসায়নিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্যাটারি যখন প্রায় পূর্ণ থাকে, তখনই সবচেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয়।
অতএব, ফোনে অনেকক্ষণ ধরে চার্জ দেওয়া বা অতিরিক্ত গরম অবস্থায় চার্জ করা ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়।
দ্রুত চার্জিং কি সত্যিই ক্ষতিকর?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসম্মত চার্জার ও মূল কোম্পানির প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে দ্রুত চার্জিং তেমন ক্ষতিকর নয়। আধুনিক স্মার্টফোনে এখন ব্যাটারি সুরক্ষায় তাপ নিয়ন্ত্রণ চিপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
তবে অরিজিনাল চার্জার ছাড়া অন্য ‘ফাস্ট চার্জার’ ব্যবহার করলে ব্যাটারির ক্ষয় দ্রুত হয়। অর্থাৎ, দ্রুত চার্জিং নয়—ভুল চার্জিং অভ্যাসই ফোনের ব্যাটারির বড় শত্রু।
ব্যাটারি ভালো রাখার সহজ নিয়ম
- ফোনের চার্জ ২০% এর নিচে নামলে চার্জে দিন
- একদম ১০০% না হলেও চলবে, ৮০-৯০% পর্যন্ত যথেষ্ট
- অতিরিক্ত গরম অবস্থায় ফোন চার্জে দেবেন না
- সবসময় মূল কোম্পানির চার্জার ব্যবহার করুন
উপসংহার
দ্রুত চার্জিং প্রযুক্তি সময় বাঁচায়, কিন্তু ফোনের ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে হলে প্রয়োজন সঠিক অভ্যাস। প্রযুক্তি যত উন্নতই হোক না কেন, সচেতন ব্যবহারই স্মার্টফোনের দীর্ঘজীবনের আসল রহস্য।





