• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিতর্কিত উপদেষ্টা চিনিব কেমনে?

ভিওডি বাংলা ডেস্ক    ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:২২ পি.এম.
দৈনিক আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক এহ্সান মাহমুদ। ছবি-সংগৃহীত

এহ্সান মাহমুদ
সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের আয়োজন হয়ে গেল ঢাকা ও কুষ্টিয়ায়। লালনের গানে মুখর হয়ে উঠেছিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ। লালন শুধু সংগীতজ্ঞ নন; তিনি দার্শনিক ও ভাবগুরুও। তাঁর গান আজও মানুষকে ভাবায়। লালন সাঁইয়ের একটি গানের কথা রয়েছে এমন- ‘যদি ছুন্নত দিলে হয় মুসলমান/নারীর তবে কী হয় বিধান?/বামন চিনি পৈতা প্রমাণ/বামনী চিনি কিসে রে।’ ‘জাত’ চেনার প্রশ্নে লালন সাঁইয়ের যে জিজ্ঞাসা, সেটি চিরকালীন। তবে সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি চর্চিত বিষয় লালনের মতো প্রশ্নের মুখোমুখি আমাদের দাঁড় করিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ চিনিব কেমনে?

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেছে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে বিএনপি সুনির্দিষ্ট কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। সেই সাক্ষাতের পরদিন জামায়াতে ইসলামী প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করে কয়েকজন উপদেষ্টার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নেতারাও কয়েকজন উপদেষ্টার বিষয়ে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বিতর্কিত উপদেষ্টা কারা? কেন দলগুলো এমন অভিযোগ তুলছে?

কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করে আসছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা। এই অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। তারা কখনও তাদের চোখে নিরপেক্ষ নয় বা বিতর্কিত, এমন উপদেষ্টাদের নাম সামনে আনেনি। তবে দলগুলো তাদের প্রতিপক্ষ দলকে জড়িয়ে এই অভিযোগ তুলছে। বিএনপি অভিযোগ করছে, কয়েকজন উপদেষ্টা একটি বিশেষ দলের (জামায়াতের) পক্ষে কাজ করছে। আবার জামায়াতও একইভাবে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করে আসছে। দেখা যাচ্ছে এনসিপির অভিযোগ বিএনপি ও জামায়াতকে টার্গেট করে। রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের সারকথা হচ্ছে- জনপ্রশাসনে বদলি-পদায়নে দলগুলো ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ করছে।

স্বাভাবিকভাবেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উপদেষ্টাদের নিরপেক্ষতার প্রশ্নে এমন অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে হাজির হয়েছে। সামনে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে, এই অভিযোগ ততই প্রকট হতে থাকবে।

আমরা এখানে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বিভিন্ন দলের চোখে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ কারা, এটা জানতে পারছি। বিএনপি বলছে- বিতর্কিতদের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। এই কমিটির আরেকজন সদস্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব শেখ আব্দুর রশিদের নাম উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও একটি বিশেষ দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছে খোদা বখস চৌধুরীর বিরুদ্ধেও একটি দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছে। আবার কোনো কোনো উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, এই অভিযোগও বিএনপি জানিয়েছে। এই অভিযোগের ক্ষেত্রে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার দিকে আঙুল তুলেছে বিএনপি।

এদিকে জামায়াত অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন উপদেষ্টার ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। আবার অন্তর্বর্তী সরকারের কলেবর নিয়ে চিন্তা এনসিপির। সাম্প্রতিক সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয় কিনা, এটা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে এনসিপি।

পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ খুঁজে বের করা এবং তাদের একটা বিহিত করাই নির্বাচনের মাঠ গরমের মহড়া হতে যাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে একে অপরকে প্রতিপক্ষ ভাবা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ খুঁজে পাওয়া নিয়ে যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে তার ফলাফল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক করে তুলতে পারে। দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এক ধরনের আস্থার অভাব এবং রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা ডেকে নিয়ে আসতে পারে।

অন্তর্বর্তী সরকারে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে শপথ নেওয়া তিন উপদেষ্টার মধ্যে বর্তমানে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা, তা নিয়ে আলোচনা আছে। চলমান আলাপ-আলোচনার মধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এমনিতে পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে- নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর সরকারের ওপর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ নড়বড়ে। তাই নির্বাচনের আগে কেবল শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের থেকে হওয়া দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন এনসিপি নেতারা।

রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দুজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি এবং সরকার থেকে তাদের পদ ছাড়ার পরামর্শকে পরিকল্পিত বলেই মনে করছেন তারা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে- অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি যুক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নানা ইস্যুতে এক ধরনের ভারসাম্যও দেখা গেছে। দল গঠনের জন্য নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর সরকারের ওপর শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ কমে গেছে। অনেকটাই নড়বড়ে। এরই মধ্যে এগিয়ে আসছে নির্বাচন। অভিযোগ উঠছে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি দুই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। এমন বাস্তবতায় নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগ্রহ থাকলেও আরও লম্বা সময় ক্ষমতা ধরে রাখার উদ্দেশ্যে দুই উপদেষ্টা এখনই পদত্যাগ করবেন না, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

তাই সবকিছু ছাপিয়ে ‘বিতর্কিত উপদেষ্টা’ খুঁজে বের করা এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এটাই এখন রাজনীতির ময়দানের আগামী কয়েক দিনের খেলা।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, আমাদের সময়; কথাসাহিত্যিক

ভিওডি বাংলা/ এমপি/এমএইচপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনে নারী-শিশুর কান্না কি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে না
ফিলিস্তিনে নারী-শিশুর কান্না কি বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে না
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে প্রয়োজন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
পিআর পদ্ধতি এবং আওয়ামী লীগের ফিরে আসা
পিআর পদ্ধতি এবং আওয়ামী লীগের ফিরে আসা