ওই সাহস কোথায় ছিল গত ১৫ বছরে? প্রশ্ন তথ্য উপদেষ্টার

অনেকে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী বা বিভিন্ন পরিচয়ে টেলিভিশন টক শোতে বসে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ‘বড় বড় কথা বলছেন’ উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ওই সাহস কোথায় ছিল গত ১৫ বছরে?
রোববার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। ডিআরইউ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা রোধে আইন করা যায় কি না? জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকতার পরিমণ্ডল থেকে যদি ‘ব্যাড অ্যাপল’ (খারাপ মানুষ) না সরানো যায়, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন যদি থেকে যায়, তাহলে অবশ্যই সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ হবে।
এ প্রসঙ্গে আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘যারা ভায়োলেন্স করবে, আজকে যদি সুযোগ পায়, আজকেই আমাদের মেরে ফেলবে, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে সাংবাদিক পরিচয়ে বা বিভিন্ন পরিচয়ে, বুদ্ধিজীবী পরিচয়ে। টেলিভিশন টক শোতে বসে বসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলতেছে। ওই সাহস কোথায় ছিল গত ১৫ বছরে?’
এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে ‘খুব বেশি’ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়নি উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য যে আমরা চাই না যে আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করি।’
সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে আলোচনায় বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ এসেছে জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, তারা প্রশ্ন তুলেছে যে এমন আইন ফ্যাসিস্টের দোসর ছিল, এখন বিভিন্ন হাউসে রয়েছে, তাদের সুরক্ষা দেবে। স্থানীয় পর্যায়ে যারা বিভিন্ন দলের দালালি করে, তারা সুরক্ষা পাবে।
গত ১৫ বছরে ‘অপসাংবাদিকতা’র জন্য কেউ অ্যাপোলজি (ক্ষমা প্রার্থনা) করেনি উল্লেখ করে মাহফুজ আলম বলেন, তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। তাহলে কাকে ভরসা করে আইনটা করা হবে?
নতুন দুটি গণমাধ্যমের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে লেখালেখি হওয়ার কথা তুলে ধরে এ ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয় কী ভাবছে, তা জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশে বিকল্প গণমাধ্যম ছাড়া ‘বাকশালি ইকোসিস্টেম’ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি বিকল্প মিডিয়া দেবেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আমরা মালিকানার ফাইলগুলো দেখি, অধিকাংশ মালিক এখনো আওয়ামী লীগের। এখনো আওয়ামী লীগের মালিকানা পরিবর্তন করা হয় নাই। ওনারা বিদেশ থেকে বসে বসে এখনো এখানে টেলিভিশন চ্যানেলে যে আয় হয়, সেটার থেকে ওনারা পাচ্ছেন। পত্রিকা অফিস থেকে ওনারা পাচ্ছেন।’
মাহফুজ আলম বলেন, পুরোনো বন্দোবস্তের লোকেরা, পুরোনো বড় বড় মিডিয়া হাউস যারা আছে, তারা চায় না যে দেশে কোনো অলটারনেটিভ মিডিয়া (বিকল্প গণমাধ্যম) হোক। সে জায়গা থেকে বিভিন্নভাবে এটাতে (দুই গণমাধ্যমের অনুমোদন) ‘ফ্রেমিংয়ের’ চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনের কারণে যদি তাঁকে পদ থেকে সরেও যেতে হয়, তাহলেও তিনি নতুন মিডিয়ার লাইসেন্স দেবেন বলে উল্লেখ করেন তথ্য উপদেষ্টা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মিডিয়ায় ‘ফ্রেশ ব্লাড’ দরকার। যেহেতু তাঁরা কোনো মিডিয়া বন্ধ করছেন না, তাই নতুন মিডিয়া দেবেন।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের যে প্রস্তাব, তার মধ্যে মোট ২৩টি প্রস্তাব ছিল আশু করণীয়, যেটা এই সরকারের সময়সীমার মধ্যে করা সম্ভব। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আমলারা পর্যালোচনা করে মোট ১৩টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা খুব শিগগির দেখা যাবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো যে খুব বড় কিছু, এ রকম নয়। কিন্তু আমাদের যে সময়সীমা আছে, তখন তো ছিল তিন মাস। এখন তো আর হয়তো এক মাস আছে। কারণ, এই যে জিনিসগুলো করা হবে, সেটা ক্যাবিনেটেই করতে হবে। অথবা নীতিমালা বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে করতে হবে। সেটা আমরা নভেম্বরের পরে আর করতে পারব না। কারণ, নভেম্বরেই ক্যাবিনেট ক্লোজ হয়ে যাবে, ক্যাবিনেট মিটিংটা। এরপর নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেবে। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আর সম্ভবত ক্যাবিনেট মিটিং বসে না।’
মিট দ্য রিপোর্টার্সে নামসবর্স্ব সংবাদ পত্রিকা, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, নির্বাচনে এআই প্রপাগান্ডাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকেরা। নামসবর্স্ব পত্রিকার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় এসব পত্রিকার তালিকা তৈরি করেছে। সাংবাদিকদের সমর্থন পেলে গত এক বছরে এক দিনও ছাপা হয়নি, এমন পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় তথ্য উপদেষ্টা বলেন, সরকার সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা কমানো এবং বিজ্ঞাপনের হার বাড়ানোর পক্ষে। বিজ্ঞাপনের হার যেটা আছে, সেটার দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে সত্যিকারের প্রচারসংখ্যা দেখাতে হবে।
তিনি বলেন, এই সুবিধা পেতে সংবাদপত্রকে সাংবাদিকদের জন্য সরকারের নির্ধারিত বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। এই বেসিক স্যালারি (মূল বেতন) না দেওয়া হলে কোনো পত্রিকা সুবিধা (বিজ্ঞাপনের হার) পাবে না।
মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
ভিওডি বাংলা/ এমপি







