মাটির ঘ্রাণ হারাচ্ছে লস্করপুর
কেন্দুয়ার শেষ মৃৎশিল্পীরা টিকে আছেন সংগ্রামে

একসময় লস্করপুর গ্রামে মাটির হাঁড়ি-পাতিলের টুংটাং শব্দে মুখর থাকত সকাল-বিকেল। সেই ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের এই গ্রামে একসময় ৩০টিরও বেশি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের তৈরি মাটির হাঁড়ি, পাতিল, থালা, বাটি—সবই ছিল স্থানীয় মানুষের প্রতিদিনের ব্যবহার্য জিনিস।
কিন্তু এখন সেই দৃশ্য বদলে গেছে। প্লাস্টিক ও সিরামিকের দাপটে মাটির শিল্প হারাচ্ছে নিজের জায়গা। বর্তমানে লস্করপুরে মাত্র পাঁচটি পরিবার এই পেশায় টিকে আছে। তাদের মধ্যে দুলাল পাল ও তাঁর স্ত্রী রিনা রাণী পাল এখনও মাটির সঙ্গে লড়ছেন সময়ের প্রতিযোগিতায়।
রিনা রাণীর হাতে তৈরি মাটির হাঁড়িপাতিল, থালা, ফুলদানি কিংবা কলস এখনো বাজারে কিছুটা চাহিদা রাখে। তবুও কাঁচামালের দাম, শ্রমের কষ্ট আর বাজারের অনিশ্চয়তা এই পেশাকে দিন দিন কঠিন করে তুলছে।
দুলাল পাল বলেন, একসময় ২০-৩০টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে ছিল। আমাদের তৈরি হাঁড়িপাতিল ছাড়া কোনো ঘর পূর্ণ মনে হতো না। কিন্তু এখন মানুষ প্লাস্টিক, স্টিল, সিরামিকে চলে গেছে। তাই আমাদের তৈরি জিনিস আর আগের মতো বিক্রি হয় না।
গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুলাল পালের বাড়ির উঠোনে সারি সারি মাটির হাঁড়িপাতিল রোদে শুকিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি পাত্রে মিশে আছে কারিগরের ঘামের গন্ধ, মাটির ঘ্রাণ। তিনি বলেন, আমি, স্বপন পাল, মতিন্ড পাল, দিলিপ পাল ও রবি পাল, আমরা এখনও এই পেশায় আছি। কিন্তু জানি না, আমাদের পর কেউ থাকবে কি না।
স্থানীয়দের মতে, মাটির জিনিসের এই অবহেলা কেবল একটি পেশার অবসান নয়; হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক লাইমুন হোসেন ভূঁইয়া বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজ যদি মৃৎশিল্প সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়, তাহলে হয়তো এই ঐতিহ্য আবারও নতুন করে বাঁচতে পারে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ






