• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বড় বাকাইলে কৃষকদল নেতার মামলা-হামলার রাজত্ব

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি    ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৫০ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের বড় বাকাইল গ্রামে কৃষকদল নেতা হোসেন মিয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। মামলাবাজি, চাঁদাবাজি, জমি ও ব্যবসা দখল, নারী কেলেঙ্কারি এবং মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এ নেতা এখন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে হোসেন মিয়া দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাসুম বিল্লাহ ও ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাৎ হোসেন শোভনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রকাশ্যে শোভনের পক্ষে কাজ করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে তদবির করে তিনি কৃষকদলের ইউনিয়ন আহবায়কের পদ বাগিয়ে নেন এবং অনুসারীদের নিয়ে গঠন করেন নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী।

পদ পাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার দখলবাজি ও চাঁদাবাজি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোসেন বাহিনী চুনের কারখানা দখল, অবৈধ গ্যাস বাণিজ্য ও মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তার লাঠিয়াল বাহিনীতে মাসুম, মাহফুজ, দুধ মিয়া, শহীদ, এমরান, কবির, রাসেদ, গিয়াসউদ্দিন, নজরুল, হেবজু মিয়া ও ফরহাদসহ অনেকে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড় বাকাইল গ্রামের বিল্লাল মিয়ার অনুপস্থিতিতে হোসেন বাহিনী তার চুন ফ্যাক্টরির প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার চুনের বস্তা সরিয়ে নেয়। বাধা দিতে গেলে বিল্লাল মিয়ার স্ত্রী সাবিনা আক্তার ও ভাতিজা তারিফকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়। আহত সাবিনা বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ফ্যাক্টরি দখলের ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও হোসেন মিয়া তা অস্বীকার করে বলেন, “এগুলো আওয়ামী লীগের দখল করা জায়গা ছিল, আমরা উদ্ধার করছি।” কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো অনুমতি বা আইনি পদক্ষেপ না নিয়েই তিনি দখল করেন।

এছাড়া হোসেন মিয়া তার আত্মীয় রাশেদুল ইসলাম বাবু ও একই গ্রামের জরিনা বেগমের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। জরিনা বেগম বলেন, “আমি তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে আমার নামে মিথ্যা চেক মামলা দিয়েছে।”

অন্যদিকে ভুক্তভোগী বিল্লাল মিয়া জানান, “চাচাতো ভাই হোসেন আমাদের ব্যবসা দখল করে নিয়েছে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।”

সোহেল মিয়া নামের আরেকজন বলেন, “হোসেন মিয়া আমাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে হয়রানি করেছে। পরে মুক্তির বিনিময়ে টাকাও নিতে হয়েছে।”

এদিকে এক অডিও রেকর্ডে হোসেন মিয়ার ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কথাও প্রকাশ পেয়েছে। রেকর্ডে তাকে নিজের ছেলেকে হত্যা করে প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করতে শোনা যায়, যাতে প্রতিপক্ষের পরিবার এলাকা ছাড়া হয়।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীরা বলেন, “এ ঘটনা গ্রামীণ সমাজের জন্য একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।” তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

ভুক্তভোগী রাশেদুল ইসলাম বাবুর মা জোসনা ইসলাম বাদী হয়ে হোসেন মিয়াসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় অভিযোগ দাখিল করেছেন, যা বর্তমানে তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে হোসেন মিয়া বলেন, “জরিনা বেগমের সঙ্গে আমার আর্থিক লেনদেন আছে, তাই মামলা করেছি। বাবু আমাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চেয়েছিল।”

তবে উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক এমরান আহমেদ রনি বলেন, “ঘটনাগুলো পারিবারিক কোন্দল বলেই শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ এলে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষক দল কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে না।”

এলাকাবাসী হোসেন মিয়ার অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়তে চাই : সাভার ইউএনও
জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়তে চাই : সাভার ইউএনও
মাদারীপুরে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা
মাদারীপুরে নবাগত জেলা প্রশাসকের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভা
সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে আ.লীগের নেতা বাচ্চুর মৃত্যু
সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে আ.লীগের নেতা বাচ্চুর মৃত্যু