২৪ দিয়ে যারা ৭১ মুছে দিতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে গলদ আছে

 
                                            
                                    
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, “যারা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান দিয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ মুছে ফেলতে চায়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান কবরে পাঠিয়ে দিতে চায়, তাদের কিন্তু উদ্দেশ্যের মধ্যে গলদ আছে। সেটা বোঝা দরকার।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাসদের ৫৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এক দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দিয়েছে। একটা গভীর সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ নিপতিত হচ্ছে। একটা গভীর খাদের কিনারে এসে বাংলাদেশ উপনীত হয়েছে। এই জায়গা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্যে এখানকার যে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো আছে বা ক্ষমতা প্রত্যাশী যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে বা স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের পক্ষে বাংলাদেশের এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো সুযোগ নাই, সম্ভব না। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে এখানকার বাম গণতান্ত্রিক যে প্রগতিশীল শক্তি আছে দেশপ্রেমিক শক্তি আছে তাদেরকেই ঐক্যবদ্ধভাবে একটা পথ এবং পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা লাগাতার যে সংগ্রাম সেই সংগ্রামের পথে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।”
তিনি বলেন, “২৪ এর গণঅভ্যূত্থানের পরে ব্যাপকভাবে আমরা সবার মধ্যেই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম। সেই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ছিল বলেই এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে গণঅভ্যূত্থানের পরে। কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউই কিন্তু এই অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। এই ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তাদের কোনো টিকিটাও দেখা যায় নাই। তাদের অনেকেই ওই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সুবিধাভোগী। তারাই কিন্তু এখানে এসে এই অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হয়ে বসলো।”
“ছাত্রনেতারা যারা এই যে কিংস পার্টি করলো, তারা শিক্ষার বৈষম্য দূর করার জন্য শিক্ষাক্ষেত্রের বৈষম্য, সেই বৈষম্য দূর করার জন্য কোন বক্তব্য তাদের আছে...কোনো কথা আছে? তারা বলে সংবিধান ছুড়ে ফেলে দিবে মুক্তিযুদ্ধকে বাতিল করে দিবে, তারপরে রিসেট বাটন টিপে দিবে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা নাকি অর্জন হয়েছে এই সমস্ত বকাওয়াজ বক্তব্যগুলো তারা দিচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায় যে এদের উদ্দেশ্যটা কি। বাস্তবে এদের উদ্দেশ্য...যারা ২৪ এ গণঅভ্যুত্থান দিয়ে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ মুছে ফেলতে চায় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধান কবরে পাঠিয়ে দিতে চায় তাদের কিন্তু উদ্দেশ্যের মধ্যে যে গলদ আছে। সেটা বোঝা দরকার।”
বাসদের এই সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “আমরা বলতে চাই বাংলাদেশে যদি জনমতকে উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে এখানে নতুন করে যদি কোন ষড়যন্ত্র হয়, কমিশনের যে জুলাই সনদ নিয়ে যেই ধরনের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত... তাহলে এই সমস্ত ঐকমত্য কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের মীরজাফর হিসেবে আখ্যায়িত হবে।”
এসময় সভাপতির বক্তব্যে শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, “সমাজ বদলের জন্য লড়াই করতে হবে। সেই লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এই দল গঠিত হয়েছে। জাসদ নেতারা ঐকবদ্ধ হবো এরকম আকাঙ্খা আমাদের আছে। কিন্তু, এটা বাস্তবসম্মত নয়।”
তিনি বলেন, “আমরা মূল রাজনীতিধারায় নেতৃত্ব দিয়েছি অথবা সাহায্য করেছি। এর বাইরে অন্য কিছু করিনি।”
“দেশটা এখন জটিল সময় পার করছে। এই সরকার বিদেশি মনোনীত সরকার। এই সরকারের কাছ থেকে আমরা খুব কিছু আশা করি না। তবে আমরা বলতে চাই— উনি যাতে এখন একটা নির্বাচন দিয়ে চলে যায়।”
গভমেন্টকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য আমরা জাতীয় ঐকমত্যে অংশগ্রহণ করেছি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, “নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে যেটা করা হয়েছে, এটা প্রতারণা। নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট বাংলাদেশে হবে না। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নির্বাচন।”
“গণভোট এখন বিতর্কিত। এই বিতর্কিত গণভোট নির্বাচনের আগে হতে পারবে না। ড. ইউনুসের প্ল্যান অনুযায়ী জামায়াত এবং এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে। সরকারকে বলবো— আপনার প্রতিশ্রুতি মোতাবেক নির্বাচন দেন। দেশে এখন নির্বাচন খুব প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়ার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধানসহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ভিওডি বাংলা/ আরিফ
 
                             
                         
                 
                





