• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচন

ভুয়া তথ্যঝুঁকি নিয়ে ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় সতর্কবার্তা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৮ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভুয়া তথ্য ও বিদ্বেষমূলক প্রচারণা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা, সামাজিক স্থিতি এবং নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের জন্য অভূতপূর্ব ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। ডিজিটাল অধিকার ও তথ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ডিজিটালি রাইট'-এর এক গবেষণা থেকে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় 'ট্যাকলিং ইলেকশন ডিসইনফরমেশন ইন বাংলাদেশ: বিল্ডিং কালেকটিভ রেসপন্সেস ফর ইলেক্টোরাল ইন্টেগ্রিটি' শিরোনামে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে ডিজিটালি রাইট। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের অর্থায়নে 'প্রমোটিং ইফেকটিভ, রেসপনসিভ অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ' কর্মসূচির আওতায় গবেষণাটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

রোববার (২ নভেম্বর) ঢাকার গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যম প্রতিনিধি, ফ্যাক্ট-চেকার, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের নেতারা।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের অনলাইন তথ্যপরিবেশ এখন ভীষণভাবে ভঙ্গুর ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় গোষ্ঠী, বিদেশি ও প্রবাসী প্রভাব বিস্তারকারী সবাই যেন এক ধরনের 'ডিজিটাল প্রতিযোগিতায়' নেমেছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর কনটেন্ট, প্রোপাগান্ডা নেটওয়ার্ক ও বাণিজ্যিক কনটেন্ট নির্মাতাদের মাধ্যমে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে।

গবেষণা বলছে, ভুয়া তথ্য কেবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাতিয়ার নয়, এটি এখন জনআস্থা কমানো, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও নারীর কণ্ঠরোধের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। বিকৃত ছবি, মনগড়া ভিডিও ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি কনটেন্ট নারী প্রার্থী ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে; যা নির্বাচনের আগে ভয়ভীতি, হয়রানি ও ভোটার দমন বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ডিজিটালি রাইটের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঝুঁকির বিপরীতে প্রস্তুতি এখনো আশঙ্কাজনকভাবে দুর্বল। ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ফ্যাক্ট-চেকারের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ জন। বেশিরভাগ মূলধারার গণমাধ্যমে ফ্যাক্ট-চেকার নেই। সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট-চেকাররা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ও পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাবে ভুগছেন।

এতে আরও বলা হয়, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ও নাগরিক সংগঠনগুলো ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রায় অনুপস্থিত। সামাজিকমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করে না। নির্বাচন কমিশনেরও এই ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত নীতি-কাঠামো, দক্ষতা ও সক্ষমতা নেই।

গবেষণায় বলা হয়েছে, 'ঝুঁকি ও সক্ষমতার ব্যবধান এখন বিপজ্জনকভাবে বিস্তৃত।'

অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের মূল ফলাফল উপস্থাপনের পর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচনী অপতথ্য মোকাবিলায় গণমাধ্যম, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রথম আলো অনলাইনের প্রধান শওকত হোসেন গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, 'প্রচলিত গণমাধ্যমের তথ্য-যাচাই করার গতানুগতিক পদ্ধতি আর কাজ করবে না। এই গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের ওপর নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের দরকার আছে।'

তিনি বলেন, 'এআই এর দ্রুত অগ্রগতির কারণে আমাদের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আছে এবং সম্ভবত ফ্যাক্ট-চেকারদের পক্ষে এই অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়বে।'

ইউল্যাবের মিডিয়া স্টাডিজ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুমন রহমান বলেন, 'ভুল তথ্য মোকাবিলা করার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের জবাবদিহি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। সরকারকে প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।'

তিনি বলেন, 'দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের সরকারের প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর প্রভাব খাটানোর মতো অবস্থা নেই এবং আগের সরকারের এই সংক্রান্ত ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে তারা আলোচনার সব ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে।'

ডিজিটালি রাইটের গবেষণা প্রধান তিতির আব্দুল্লাহ মূল ফলাফল তুলে ধরে বলেন, 'নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশকিছু বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে, যেগুলোতে বিভিন্ন সংজ্ঞা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়নি বা এর অপব্যবহার রোধের জন্য কোনো সুরক্ষাব্যবস্থাও রাখা হয়নি।'

তিনি বলেন, 'এ থেকে বোঝা যায় যে, অংশীজনদের সঙ্গে যথেষ্ট আলোচনা করা হয়নি, যা আইনগুলোর যথেচ্ছ প্রয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে। এ ধরনের বিধিমালা ব্যবহার করে বৈধ সমালোচনা ও ভিন্নমতকে দমন করা হচ্ছে, যেমনটা আমরা অতীতের আইনগুলোর ক্ষেত্রেও দেখেছি। মানবাধিকারের ওপর এর প্রভাব যাচাই করতে এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য যেকোনো বিধিমালা গ্রহণের আগে অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলোচনা করা উচিত।'

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আই সোশ্যাল-এর চেয়ারপার্সন অনন্য রায়হান, এফসিডিও-এর গভর্নেন্স অ্যাডভাইজর এমা উইন্ড, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ এবং ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।

ভিওডি বাংলা/ এমপি/ এমএম
 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে মাঠে নামার নির্দেশ পরিবেশ উপদেষ্টার
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে মাঠে নামার নির্দেশ পরিবেশ উপদেষ্টার
আরপিও সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলো ইসি
আরপিও সংশোধন আইন মন্ত্রণালয়ের ওপর ছেড়ে দিলো ইসি
দেশে মোট ভোটার সংখ্যা কত, জানালেন ইসি
দেশে মোট ভোটার সংখ্যা কত, জানালেন ইসি