নির্বাচনে ইশতেহারের বাইরে সাংবাদিক, চতুর্থ স্তম্ভ কি অদৃশ্য !

                                            
                                    
বাংলাদেশে নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলো নানা প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা নিয়ে হাজির হয়। দেশের জনগণের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে অগ্রগতি—সব কিছুর জন্যই থাকে দৃষ্টিনন্দন ইশতেহার। কিন্তু এই দীর্ঘ তালিকায় একটি ক্ষেত্র আজও অবহেলিত—রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সাংবাদিক সমাজ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক পার্টি (এনসিবি)সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনের আগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। কিন্তু সাংবাদিকদের জন্য নেই কোনো কার্যকর পরিকল্পনা, নেই কোনো কল্যাণমূলক নীতিমালা বা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। গণতন্ত্র রক্ষায় যাঁরা প্রতিদিন মাঠে কাজ করেন, সত্য প্রকাশে যাঁরা নিজের জীবন বিপন্ন করেন—তাঁদের জন্য রাষ্ট্র বা রাজনীতি খুব কমই ভাবে।
একটি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক, সত্য ও ন্যায়ের প্রহরী। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় সাংবাদিকদের অবস্থান ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত তাঁদের ওপর হামলা, মামলা, হুমকি ও হয়রানির ঘটনা ঘটছে। অনেক সাংবাদিক যথাযথ বেতন পান না, আবার কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা পান না।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সাংবাদিকদের কল্যাণে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা না থাকা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যায়—দলগুলো গণমাধ্যমের সহায়তা চায়, সংবাদ প্রচারে আগ্রহী হয়, কিন্তু নির্বাচনের পর সেই প্রতিশ্রুতি আর থাকে না। সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা, বা বীমা সুবিধা নিয়ে কোনো দলই বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সাংবাদিকরা সব সময় দেশ ও জাতির স্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র আন্দোলন—প্রতিটি ধাপে সংবাদকর্মীরা তাঁদের কলম ও ক্যামেরা দিয়ে অবদান রেখেছেন। কিন্তু তাঁদের সেই ত্যাগের মূল্যায়ন কোথায়? তাঁদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় কোথাও কি আছে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ?
রাষ্ট্রের অন্যান্য পেশাজীবী গোষ্ঠীর মতো সাংবাদিকদেরও একটি শক্তিশালী নীতি ও সুরক্ষা কাঠামো থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সাংবাদিকদের নামও থাকে না। এটা কেবল অবহেলা নয়, গণতন্ত্রের জন্য এক প্রকার বিপদও বটে। কারণ, গণতন্ত্র তখনই টেকে যখন সংবাদপত্র স্বাধীন থাকে, সাংবাদিকরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন।
এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবনার ধরণ পাল্টানোর। শুধু শুভেচ্ছা বা দোয়া নয়—সাংবাদিকদের জন্য দরকার বাস্তব পদক্ষেপ। প্রতিটি ইশতেহারে থাকা উচিত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, বীমা সুবিধা, প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়নের স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি। পাশাপাশি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও পেশাগত মর্যাদা রক্ষার জন্য কার্যকর আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সাংবাদিক সমাজের প্রতি সম্মান দেখানো মানে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। তাদেরকে অবহেলা করা মানে গণতন্ত্রকে দুর্বল করা। তাই আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের কল্যাণে বিশ্বাসী হয়, তবে তাদের ইশতেহারে সাংবাদিকদের কল্যাণ ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই থাকতে হবে।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে শক্তিশালী না করে কোনো রাষ্ট্রই স্থিতিশীল থাকতে পারে না। তাই শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, সাংবাদিকদের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখাতে হবে বাস্তব পদক্ষেপে। রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে—দোয়া বা প্রশংসা নয়, সাংবাদিকরা চান ন্যায্য অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
                            
                        
                
                




                

