ইডিসিএল এমডির পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন

সরকারি মালিকানাধীন ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল)-এর বিনা অপরাধে চাকরিচ্যুত প্রায় সাতশ শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার পুনর্বহাল এবং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুস সামাদ মৃধার পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ইডিসিএল’র চাকরিচ্যুত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ঔষধ উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমান এমডি আব্দুস সামাদ মৃধা যোগদানের পর থেকেই কোম্পানিতে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন।
মানববন্ধনে তারা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চাকরিচ্যুত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি কোম্পানিতে যোগদানের পর এমডি আব্দুস সামাদ মৃধা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গোপন করে দ্রুত পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করেন। যোগদানের পরপরই তিনি তার ব্যক্তিগত পিএস নাজমুল হুদা, ভাগিনা শওকত ও জিএম (চলতি দায়িত্ব) মনিরুল ইসলামের সহযোগিতায় নিয়োগ ও স্থায়ীকরণে ব্যাপক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য চালু করেন।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, ছাঁটাই হওয়া অ্যাডহক ও ক্যাজুয়াল কর্মীদের পুনরায় নিয়োগ দিতে প্রতি জনের কাছ থেকে ৫-১০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছে।
স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ৭৫-৮০ জনকে স্থায়ী করা হয়েছে এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩-৫ লাখ টাকা করে ঘুষ আদায় করা হয়।
পদোন্নতিতে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ৫০ জনের বেশি কর্মকর্তা পদোন্নতি পান, এবং অনেকের কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
৩ কোটি টাকার কমিশনের বিনিময়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হয়, যা বোর্ডের সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
অভিযোগে আরও বলা হয়, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুকুল ইসলামকে বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ঘুষ নেওয়া হয়।
এছাড়া, কোম্পানির নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে টোল প্রক্রিয়ায় ওষুধ উৎপাদন করিয়ে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম করা হচ্ছে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বিভিন্ন সরকারি পর্যায়ের কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে এতসব দুর্নীতি, অনিয়ম ও ধর্ষণ মামলা থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তারা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নং-৮, ঢাকা-তে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা (পিটিশন মামলা নং ১০২/২০২৫) দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু এখনো এমডির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চাকরিচ্যুত কর্মীরা আরও বলেন, এমডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশনে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সচিবালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এমনকি গঠিত তদন্ত কমিটিও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন চাকরিচ্যুত কর্মী রানা, কাউসার মিয়া, জামিল, কাউসার আহমেদ, সজীব, মাসুদ প্রমুখ।
বক্তারা এমডি আব্দুস সামাদ মৃধার দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নিয়োগ বাণিজ্যের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার ও অপসারণের দাবি জানান।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ



