হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষের ভোট চাই: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে। তাদের একটা আশা সামনে আছে। সেই আশাটা হচ্ছে কী যে, আমরা বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে একটা নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে সেইভাবে গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকল ধর্মের সকল গোত্রের মানুষের সমান মর্যাদা থাকবে। আমি একটা কথা বলতে চাই, এদেশটা আপনার, এই মাটি আপনার। একাত্তর সালে যখন আমরা যদ্ধ করি সেই যুদ্ধের সময়ে কিন্তু আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিলো না, আমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলমান, পাহাড়ী সবাই একসাথে আমরা দেশকে স্বাধীন করতে লড়াই করেছিলাম। আজকে আবার সেই মন্ত্রে উদিপ্ত হয়ে আসুন সবাই সকলের মানুষের বসবাস উপযোগী দেশে রুপান্তরীত করতে এক হই।’
ফার্মগেইটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের উদ্যোগে হিন্দু প্রতিনিধিদের এই সম্মেলন হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি তারেক রহমান যুক্ত হলে মিলনায়তনে হিন্দু সম্প্রদায়ে সদস্যরা উলু ধবনি দিয়ে স্বাগত জানায়। এই সময়ে তারেক হাত তু্লে তাদের অভিবাদনের জবাব দেন। শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকালে মতুয়া সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
মতুয়া সম্প্রদায়ের দাবির সমূহের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সবাই বিএনপি বিজয়ী করুন। আপনাদের দাবি-দাওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন আপনারা আমাদের নেতাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে পারব। আপনারা আজকে কী আমাদেরকে কথা দিচ্ছেন।’
এ সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপস্থিতরা ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে বিএনপি মহাসচিব শ্লোগান ধরেন, ‘হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষের ভোট চাই’, মতুয়া মুসলমান ভাই ভাই, ধানের শীষে ভোট চাই।”
বিএনপি সকল ধর্মের দল
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুসলমানদের দল তো বিএনপি না। এটা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সকল ধর্মের সম অধিকার নিয়ে দল, নো সংখ্যালঘু, নো সংখ্যাগুরু সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান অধিকার … সেটাকে ভিত্তি ধরে আমরা আত্বীয়তা করতে চাই। কিন্তু আত্মীয়তার বেশিদিন টিকে থাকে না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কমপক্ষে ১০টা হিন্দু সমাবেশ করছেন ….এটা আমি নিজে ছিলাম, ওনার সাথে ঘুরেছি, দেখছি, ভালো আগ্রহ দেখেছি কিন্তু কেন জানি কিছুক্ষণ পর আগ্রহের ভাড়াটা কমে যায়। সেটা কী আমাদের দোষ না আপনাদের অনাগ্রহ কেন হয় সেটা আমরা বুঝতে পারি না। সেজন্য আমি বলব আপনারা হিন্দু ধর্মের এই যে জাত মানে উত্তম, মধ্যম, অধম… একে আই হেট ইট। মানুষ জন্মের জন্য দায়ী না, মানুষ কর্মের জন্য দায়ী। ভগবানের সৃষ্টি কোন মানুষ ছোট না, বড়ও না, মধ্যও না অথবা যাদেরকে আপনারা নিকৃষ্ট মনে করেন তারা ভগবানের মূল আদর্শটা জানে না।’
গোপালগঞ্জের মানুষ হয়েও দেখা পাইনি
হরি গুরুচাঁদ মতুয়া মিশনের সভাপতি সূবর্ণা রানী ঠাকুর বলেন, ‘‘আমরা গোপালগঞ্জের মানুষ হয়েও আজ পর্যন্ত সেই গোপালগঞ্জের প্রধানমন্ত্রীর একটু পদধুলি শ্রীধামের মাটিতে বহুবার আশা করেও পাইনি। আজকে আমি সেই মমতাময়ী মায়ের খালেদা জিয়ার যেন তিনি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসতে চান। আজকে ভার্চুয়াল মিটিং এ যে মহান ব্যক্তি বসে আছেন, যে ত্যাগ-তিতীক্ষা করে আজকে শত শত মাইল দূরে যতই সুখে থাকুন না কেন আজকে তার মন পড়ে রয়েছে এই বাংলাদেশের মাটিতে জননী জন্মভূমিষ্ঠ স্বর্গারুপীতে … জননী ও জন্মভূমির চাইতে সুখকর আর এমন উপযুক্ত স্থান আর কোথাও হতে পারে না। আজকে তারেক জিয়ার মন কেজে আছে এই বাংলার মানুষের সাথে আলিঙ্গন করার জন্য। আমি আশা রাখি পরম করুণাময়ের কাছে তিনি অতি শীঘ্রই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং আমাদেরে এই সনতানী সম্প্রদায়ের সমস্ত রাবি দেওয়া সবকিছু তিনি পূরণ করবেন।’
হিন্দু সম্প্রদায় মানে আওয়ামী লীগ নয়
মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সদস্য সচিব কোপিল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আজকে সারা দেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়েরর মানুষজন এই অনুষ্ঠানে প্রমাণ করে দিচ্ছে, হিন্দু সম্প্রদায় কারো ব্যক্তিগত ভোট বাক্স নয়, হিন্দু সম্প্রদায় যেকেনো দিকে মুভ করতে পারে। হিন্দু মানে আওয়ামী লীগ নয়। কয়েকজন চাটুকার মন্ত্রী এমপি হয়েছে। কিন্তু ওরা হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো কাজে আসেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ক্রান্তি লগ্নে আপনি তারেক রহমান আমাদের এখন আশা-ভরসার প্রতীক। আমরা মতুয়া সম্প্রদায় রয়েছি, এই সম্প্রদায়ের মন্দির প্রণাম করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ ভোট ব্যাংক হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। শুধু মাত্র তিনি ওড়নাকান্দি ঠাকুরবাড়িতে একটি পুজা দিয়েছিলেন সেই পূজার সুবাদে ভারতের পশ্চিম বাংলায় ১৬টি এমপি পদ তিনি দখল করতে পেরেছিলেন একটি মাত্র পুজার কার্যেণ। আমরাও চাই, এই মতুয়া সম্প্রদায় আপনার ভোট ব্যাংক হোক। সেই ধরনের কিছু প্রত্যাশা বা ঘোষণা আশা করব।’
৯০ সাল থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের সংঘঠিত ঘটনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার, আওয়ামী লীগের নেতাদের দখলে থাকা হিন্দুদের অর্পিত ও দেবোত্ত সম্পত্তি তাদের উত্তরসুরীতে কাছে ফেরত প্রদান, ‘হিন্দু সুরক্ষা আইন’ প্রনয়ণ, মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান, আরাধ্য দেবতার শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীর দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা প্রভৃতি দাবি তুলে ধরেন তিনি।
এই সময়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন ‘জয় জয় শান্তি হরিপদ দেবানন্দ, হরি ছরি’ বলে শ্লোগান দেন।
মতুয়া বহুজন ঐক্যজোটের আহ্বায়ক সোমনাত দে‘র সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক, মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোটের সমেন সাহা, বিদুর কান্তি বিশ্বাস, রমেন্দ্র নাথ সরকার প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএম



