বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধার বাগান থেকে গাছ কাটার অভিযোগ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুর এলাকার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের বাগানে ৫০০ গাছের উপর নজর পড়েছে স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদক কারবাররীদের। সম্প্রতি দিনেদুপুরে একদিন তারা গাছ কেটে গাড়িতে তোলে। এসময় স্থানীয় লোকজন বাধা দেয়। বিষয়টি থানা পুলিশ পযর্ন্ত গড়ায়। পুলিশ এসে সন্ত্রাসী মাদক কারবারিদের থামিয়ে দেয়। গাছগুলো নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয়।
এরপর অনেক শালিস বৈঠক, দেনদরবারের পর কর্তনকৃত গাছগুলো মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এরপর থামে না চক্রটি। তারা সম্প্রতি ওই বাগান থেকে আবারও গাছ কেটে নিয়ে যায়। এই ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের সন্তানরা থানা পুলিশের শরণাপন্ন হলে এই যাত্রায় তারা মামলা করার পরামর্শ দেয়।
তথ্যমতে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান দীর্ঘ ১৫ বছর বাঁশখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। ২০১৩ সালে মারা যান। বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের পূর্ব বৈলগাও গ্রামের নতুনপাড়া এলাকায় পাহাড়ি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের বাগান গড়ে তোলেন তিনি। আবদুল মান্নানের সন্তানরা চাকরির সুবাদে এলাকায় না থাকায় স্থানীয় সন্ত্রাসী, মাদক চোরাকারবারী, একাধিক মামলার আসামী ও স্ত্রী হত্যার অপরাধে সাজা ভোগকারী আসামী কামাল এবং মিজান মোল্লা গত কয়েক মাস ধরে গাছগুলো কাটার চেষ্টায় ছিল।
এরই অংশ হিসেবে আবদুল মান্নানের পরিবারের কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অপরাগ হওয়ায় কামাল ও মিজানের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী গত ৯ অক্টোবর বাগানের প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার গাছ কেটে ফেলে। পুলিশকে খবর দিলে তাৎক্ষণিক পুলিশ এসে গাছকাটা বন্ধ করে এবং কাটা গাছগুলো জব্দ করে। এই পর্যায়ে পুলিশ গাছ কাটতে শক্তভাবে নিষেধ করে। কিন্তু পুলিশের কথা অমান্য করে তারা ১১ অক্টোবর আবার গাছ কাটতে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ এসে আবার গাছকাটা বন্ধ করেন। এই অবস্থায় ১১ অক্টোবর উল্লিখিতদের নামে বাশঁখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের পরিবারের পক্ষ থেকে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনায় ইন্সপেক্টর তপন বাগচির নেতৃত্বে ১৬ অক্টোবর দুইপক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর গাছগুলো মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের সন্তানদের বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। অবৈধভাবে মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলের পায়তারা ও গাছ কেটে নেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনীতিবীদ, শিক্ষক, মুক্তিযোদ্ধারা বিষয়টি নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।
মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, গত ২ নভেম্বর এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি আমাদের বাগানে গেলে মিজান ও কামাল তাদের হুমকি দেয় এবং তারা বাগান থেকে আরও কয়েকটি গাছ অবৈধভাবে কেটে নিয়ে যায়। পুলিশ প্রশাসনকে এক প্রকার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সন্ত্রাসীরা বারবার এই ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত থাকার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা মান্নানের পরিবার ও স্থানীয়রা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
এই বিষয়ে ইন্সপেক্টর তপন বাগচির সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছি। এরপরও কাজ না হলে ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থার দিকে যাওয়ার জন্য বলেছি। তারা আইনগত ব্যবস্থা নিলে আমরা সেভাবে কাজ করবো।
একই বিষয়ে ভূক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানের ছেলে সরকারি কর্মকর্তা মুনতাসির আহমেদ জানান, আমাদের বাগানের গাছ দিনেদুপুরে কেটে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদককারবারীরা। পুলিশের নির্দেশও মানছে না তারা। এই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন আমার বাবা। কোথায় যাই? কার কাছে যাই?
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ






