জনঅংশগ্রহণের ঘাটতি ও দুর্নীতিতে থমকে স্থানীয় উন্নয়ন

বরগুনার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে স্বচ্ছতা ও জনঅংশগ্রহণের ঘাটতির কারণে স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেখা দিচ্ছে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বরাদ্দ সংকট। ফলে সরকার ঘোষিত সেবা ও প্রকল্পের সুফল ঠিকভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম, প্রকল্প ও বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে যথাযথভাবে প্রকাশ করা হয় না। ওয়ার্ড পর্যায়ে বাজেট পর্যালোচনা বা উন্মুক্ত আলোচনা সভার তেমন আয়োজন নেই। এতে জনগণের অংশগ্রহণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। অধিকাংশ মানুষ জানেন না, কোন প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে কিংবা সেই অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তথ্যের এই ঘাটতি শুধু বিভ্রান্তি নয়, বরং পরিষদের প্রতি অনাস্থা তৈরি করছে। বরগুনার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড বিতরণে ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের অভিযোগও পাওয়া গেছে। ইউপি সদস্যরা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থকরাই অধিকাংশ সুবিধা পাচ্ছেন।
বদরখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আনোয়ারা ও তার বোন আকলিমা অভিযোগ করে বলেন, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন সুবিধা পেত, এখন বিএনপির কিছু স্থানীয় লোকজন পাচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা বাদ পড়ে যাচ্ছি।
সদর উপজেলার জেলে নাসির খান ও ইদ্রিস খান জানান, আমরা নিবন্ধিত জেলে হলেও সরকারের কোনো প্রণোদনা পাই না। ভোট না দেওয়ার কারণে তৎকালীন চেয়ারম্যান আমাদের নাম বাদ দিয়েছেন।
অপরদিকে সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা মোসাঃ রানী আক্তার বলেন, সভায় শুধু পুরুষদের ডাকা হয়। আমাদের মতামত কেউ নেয় না। নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়ছে।
শিক্ষক মরিয়ম বেগমের ভাষায়, নারীর মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
এদিকে পর্যাপ্ত তহবিল ও লজিস্টিক সহায়তার অভাবে সাইক্লোন শেল্টার সংস্কার, পানি সংরক্ষণ ট্যাংক নির্মাণসহ বহু প্রকল্প ঝুলে আছে। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও কাজ হয়নি, আবার অনেক প্রকল্পে অর্থ সময়মতো না পৌঁছানোর কারণে বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউটের অর্থায়ন ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে বাংলাদেশে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু সুশাসন শক্তিশালীকরণ (এসসিজিজিপি) প্রকল্প বরগুনার কয়েকটি ইউনিয়নে জনগণকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প ও বরাদ্দ সংক্রান্ত তথ্য নিয়মিতভাবে জনগণের সঙ্গে শেয়ার করা, সুবিধা বণ্টনে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা এবং নারী-পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণ বাড়ানো ছাড়া এ সংকট দূর করা সম্ভব নয়।
তাদের মতে, ইউনিয়ন পরিষদে জবাবদিহিতা বাড়াতে নিয়মিত উন্মুক্ত সভা, কর্মশালা ও তথ্যপ্রকাশ কার্যক্রম চালু করা জরুরি। পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও লজিস্টিক সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে স্থানীয় উন্নয়নে গতি আসবে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ







