অসহনশীল আচরণকারীদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না: আমীর খসরু

যারা অসহনশীল আচরণ করবে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে, সেই রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ ভালো হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, কাউকে (সরকার) জিম্মি করে কিছু আদায় করার কোনো দলেরই সুযোগ নেই।।একটি গণতান্ত্রিক দেশে সরকারকে জিম্মি করে জনগণের অধিকার কেড়ে নেবে, তাদের ভোটাধিকার বা নির্বাচনের অংশগ্রহণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো দলেরই সুযোগ নেই। যে দল এভাবে জিম্মি করার পথে যাবে, তারা জনগণ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন সহনশীলতা চায়, স্থিতিশীলতা চায়, শান্তি চায়। তারা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের নতুন রাষ্ট্রদূত জ্যঁ-মার্ক সেরে-শার্লেট সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
বৈঠকের আলোচনা বিষয়বস্তু তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে কয়েকটা দিক দিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটা হচ্ছে নতুন সরকার আসলে বাংলাদেশ ফ্রান্সের সম্পর্ক কি হবে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের কোঅপারেশন কোথায় কোথায় পাবে। সেটা হচ্ছে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি অর্থাৎ ফ্রান্সের ফিল্ম, তাদের মিউজিক-কালচার, তাদের ফ্রেঞ্চ পেইন্টিংস এবং ব্যবসা বাণিজ্য বিনিয়োগ এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রিতে আগামী দিনের অর্থনীতিতে সংস্কৃতিতে কালচারের উপর আমাদের একটা বড় প্রোগ্রাম রেখেছে। আমরা আলোচনা করেছি, আমরা যদি নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি তাহলে আমরা ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি ফ্রান্সের সঙ্গে কাজ করার সহযোগিতার বিষয়ে।
তিনি বলেন, এছাড়া নির্বাচন তো স্বাভাবিক ব্যাপার। তারা যত তাড়াতাড়ি একটা নির্বাচনকে চায়। যত তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা হয়, তত তাড়াতাড়ি ফ্রান্সের সঙ্গে এগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে। তারা আশা করছে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হয়ে গেলে আগামী দিনের বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের সম্পর্কের মধ্যে যে বিষয়গুলোতে সম্ভাবনা আছে এগুলোকে ত্বরান্বিত করবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনার ট্রাইবুনালের রায়ের তারিখ ঘোষণাকে আপনারা আসলে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের উত্তরের আমীর খসরু বলেন, এসবের সঙ্গে নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই। দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে এটার সঙ্গে বাংলাদেশকে একটা গনতান্ত্রিক উত্তরণে আমরা সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছি এবং নির্বাচনের সময়সীমার সঙ্গে কিন্তু কোন সম্পর্ক নেই। প্রত্যেকটা ঘটনা ভিন্নভাবে সরকার সমাধান করবে। এগুলোকে নির্বাচনের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। অনেকে চেষ্টা করছে একটা কনফিউশন সৃষ্টি করার জন্য। নির্বাচনী কার্যক্রমের সঙ্গে এরকম ঘটনা আরো অনেক কিছু ঘটতে পারে। এটার সঙ্গে নির্বাচনী কার্যক্রমের কোন সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের সম্গে লিংক করার কোন কারণ নেই।
আরেক প্রশ্নের উত্তরের তিনি আরও বলেন, এখানে এটা নির্বাচনের পরিস্থিতি ঘোলাটে করা চেষ্টা চলছে। এই সমস্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচনি কার্যক্রম ঘোলাটা হবে কেন? এটা তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ। যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারা বাংলাদেশে জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় না। পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যারা নির্বাচনকে পিছিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে, তারা গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তি হতে পারে না। বিশ্বসহ বাংলাদেশের মানুষ আজকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অপেক্ষা করছে অধীর আগ্রহ। ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়। যে প্রতিনিধি তার কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোও চায় বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে একটা গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরে আসুক। তাহলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে সুবিধা হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনের সময় উৎসবমুখর পরিবেশে থাকে। নির্বাচন তাদের কাছে একটি উৎসব। এই নির্বাচনের সঙ্গে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক নেই। লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রে ভোট হবে বাংলাদেশে। শুধু ঢাকা শহরের রাস্তায় তো ভোট হয় না সারা বাংলাদেশে ৩০০টি আসনে লক্ষ লক্ষ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুতরাং দুই-চারটা স্থানে কোনো ঘটনা ঘটলে, তার সঙ্গে পুরো নির্বাচনী কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে—এমনটা বলা ঠিক নয়। এমনকি নির্বাচনের দিনও কিছু ঘটনা ঘটে থাকে। এ ধরনের সহিংসতাকে নির্বাচনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যারা এভাবে অপচেষ্টা চালায়, তারা আসলে নির্বাচন চায় না; তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।
আরেক প্রশ্নের উত্তরের আমীর খসরু বলেন, আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি শুধু যাচ্ছিই না, এখন পর্যন্ত ২৩৭ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাকি মনোনয়নও কয়েক দিনের মধ্যেই দেওয়া হবে। সুতরাং বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে এটা পরিষ্কার। যাওয়া বা না যাওয়া এখন কোনো প্রশ্নই নয়। বিএনপি নয়, দেশের মানুষের পক্ষেও নির্বাচনে না যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। কিছু লোকের প্রশ্ন থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা ঐক্যমতের ভিত্তিতে যে চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেছি, সেগুলো আমরা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করব। আগামী সংসদে তা পাস করব। এখন প্রধান উপদেষ্টা কী করবেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে যদি সেটি আমাদের চুক্তির ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে থাকে, তাহলে তাতে কোনো সমস্যা দেখি না। কিন্তু কেউ যদি সেই ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে কিছু করতে চান প্রধানমন্ত্রীসহ তাহলে তার জন্য বিএনপি দায়বদ্ধ থাকবে না।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ




