আগামীকাল থেকে দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু

শুক্রবার ( ১৪ নভেম্বর ) থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন দিনাজপুর জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দিনাজপুরের সদরে অবস্থিত শিশু একাডেমিতে আয়োজিত জরুরী সভায় এই ঘোষণা দেয় জেলা বিএনপি। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর সদর-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ উপলক্ষে সভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

সভায় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, এর মধ্যে একটি হলো  বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করা। ২য় টি হলো একই দিন প্রতিটি মসজিদে বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফা সম্বলিত লিফলেট বিতরণ, ৩য় টি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আরেকটি সভার আয়োজন করা।

এই সভার আগে একই দিন, জেলা সদরে অবস্থি প্যারাডাইস কমিউনিটি এন্ড কনভেনশন সেন্টারে সাংবাদিক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বেগম খালেদা জিয়ার সম্মানে প্রধান অতিথির চেয়ার ফাঁকা রেখে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। একই সঙ্গে  তার পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করার ঘোষণা দেয়ায় অনুষ্ঠানে ডা. জাহিদ হোসেন প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এটাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। এটাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। কারণ এতে জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েছে এবং জনগণের অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এটি একটি ফিজিবল উদ্যোগ। জনগণ জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে। জনগণ ভোট দিতে গেলে আলাদা ব্যালট পেপার থাকবে। এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। কাজেই এটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা বলতে চাই এটিকে (সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট) নিয়ে যারা পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছেন তারা সঠিক কাজটি করছেন না। আপনারা (জামায়াতে ইসলামী) তো কোনো প্রস্তাবই দেন নাই এতদিন। এখন আপনারা শুরু করেছেন পিআর চাই। শুরু করেছেন উচ্চকক্ষে এটা চাই, ওটা চাই। আরে বাবা আপনাদের কোনো প্রস্তাবনাই দেশের মানুষের কাছে ছিল না। এখন আপনারা হঠাৎ করে এ সমস্ত প্রস্তাব দিয়ে জল ঘোলা করে স্বৈরাচারের পথ প্রশস্ত করছেন। যাতে তারা ফিরে আসতে পারে।’

তিনি বলেন, মানুষ ১৪ সালে ভোট দিতে পারল না, ১৮ সালে রাত্রিবেলায় ভোট হল, ২৪ সালে প্রার্থী পাওয়া গেল না। মানুষ তার অধিকার প্রয়োগ করতে পারলো না। আর সেই গণতন্ত্রিক যাত্রাকে আপনার (জামায়াত) পিছিয়ে দিতে চান? সরকার সত্যিকার অর্থে জনগণের আশাঙ্খকে ধারণ করতে না পারার কারণে অনেক ক্ষেত্রে যেমন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছেন না, আইনশৃঙ্খলাও উন্নতি হচ্ছে না, অন্যদিকে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছে না। কারণ জনগণের নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিয়ে যে কাজটি করবেন সেটি অনির্বাচিত সরকার কখনোই করতে পারে না। এই অবস্থার মধ্যেও তারা যারা গণতন্ত্রকে আরো পিছিয়ে দিতে চায়। জনগণের উপর আস্থা তো রাখতে হবে। জনগণের উপর আপনাদের আস্থা নাই। আপনারা (জামায়াত( কয়েকজন বসে বলে দিলেন, আমরা এটা মানি না, ওটা করব, এটা বন্ধ করে দিব, হতে দিব না, করতে দিব না। এই যে হতে দিব না, করতে দিব দিব না, এগুলো হচ্ছে কর্তৃত্ববাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ অর্থাৎ সৈরাচার যা করত আপনাদের মধ্যেও এক ধরনের এই কর্তৃত্ববাদীতা কাজ করছে। এগুলো তো জোর, জুলুম। গণতন্ত্রের ভাষা জোর জুলুম না। গণতন্ত্রের ভাষা হবে আপনি আপনার কথা বলবেন, আমি আমার কথা বলব। তবে সিদ্ধান্ত নিবেন সাধারণ মানুষ। 

অন্যদিকে শিশু একাডেমির সভায় বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ভোট চাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ডা. জাহিদ বলেন, তরুণ ভোটারদের মধ্যে কারো ভোট দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে তরুণরাই ৪ কোটি। এই ভোটটা আমাদের খুব দরকার। তাদের কাছে কিভাবে পৌছানো যায় সেভাবে কাজ করতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে তারা (তরুন ভোটাররা) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে দেখে নাই। তার শুধু বেগম জিয়াকে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে দেখেছে। কাজের আমাদের কথাবার্তা, কাজকর্মে, চাল-চলন, অভিব্যাক্তি সব কিন্তু এই ভোটাররা খেয়াল করবে। আপনি যতই বলেন, দিনাজপুরের মেয়ে, আমাদের মেয়ে, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আপশহীন নেত্রী, সব ঠিক আছে। এখন মানুষ বাস্তবতাকে দেখে। মানুষ খালেদা জিয়াকে দেখবে না, মানুষ দেখবে আপনাকে আমাকে। আমি কী করি, আমার-আপনার ব্যাবহার কেমন, এটার বিবেচনায় কিন্তু খালেদা জিয়ার ভোট বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে। কাজেই আমাদের যাতে মানুষ পছন্দ করে সেভাবে কাজ করতে হবে। মানুষ যাতে আমাদের ভালোবাসেন, সেভাবে চলতে হবে। তাহলেই বিএনপি জয়ী হবে।

সভায় দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলালের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচির আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকছেদ আলী মঙ্গলিয়া, বিশিষ্ট নাগরিক শাহ মবিন জিন্নাহ, দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু বকর সিদ্দিক, দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আব্দুল হালিম, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মীলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসা রহমান, দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল, সাবেক সভাপতি চিত্ত ঘোষ, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রকৌশলী মঞ্জুর মোর্শেদ সুমন, দিনাজপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহেদ রিয়াজ চৌধুরী প্রমুখ।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ