• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিশ্বে মদ্যপান কমলেও ভারতে উল্টো চিত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৪ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে মদ্যপানের প্রবণতা কমলেও ভারতে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ভারতের মাথাপিছু মদ্যপানের হার দ্রুত বাড়ছে।   

২০০৫ সালে ভারতে মাথাপিছু মদ্যপান ছিল বছরে গড়ে মাত্র ২.৫ লিটার। এক দশক পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয় ৫.৭ লিটার। একই বৃদ্ধির হার বজায় থাকলে ২০৩০ সালে মাথাপিছু মদ্যপান দাঁড়াবে ৬.৭ লিটারে। ভারতের অ্যালকোহল বাজারের আকার বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা, যা দ্রুতই আরও বাড়ছে।

ব্লুমবার্গ বলছে, অতীতে মদ্যপানে উন্নত দেশের তুলনায় ভারত অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকায় মদের চাহিদা কমলেও ভারতে বিপরীত প্রবণতা। গত চার বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫০টি মদ কোম্পানির শেয়ারদর অর্ধেকে নেমে এলেও ভারতীয় বাজারে মদের চাহিদা ক্রমবর্ধমান।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মধ্যবিত্তের আয় বৃদ্ধি, তরুণদের লাইফস্টাইল পরিবর্তন, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও উৎসবকেন্দ্রিক ব্যয়ের চাপ-সবকিছু মিলেই ভারতের মদ খরচ দ্রুত বাড়িয়েছে।

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভারতীয় সমাজ

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়লেও ভারতে সেই সচেতনতা যথেষ্ট গড়ে ওঠেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই অতিরিক্ত মদ্যপানের কুফল সম্পর্কে সতর্ক করে আসছে।

ডা. সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ভারতে মদ্যপান বাড়ার ফলে ফ্যাটি লিভার, সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ৩০ বছরের নিচে এসব রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত।

সামাজিক বাস্তবতা ও নীতির ফাঁকফোকর

মনোসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, “মদ্যপানকে ট্যাবু হিসেবে দেখানো হলেও এর ঝুঁকি নিয়ে যথাযথ শিক্ষা বা সচেতনতা নেই। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় অপ্রাপ্তবয়স্করাও সহজে মদ পাচ্ছে।”

সমাজবিজ্ঞানী সুহৃতা সাহা মনে করেন, পাশ্চাত্য অনুকরণে লাইফস্টাইল পরিবর্তনের ফলে নারীদের মধ্যেও মদ্যপানের প্রবণতা বাড়ছে। তার মতে, ‘‘যেখানে ইউরোপ স্বাস্থ্যঝুঁকি বুঝে মদ কমাচ্ছে, সেখানে ভারতে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।’’

পশ্চিমবঙ্গের চিত্র

আবগারি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ২০২২–২৩ অর্থবছরে মদ বিক্রি হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকার, যা আগের বছরের ১৮ হাজার কোটি টাকার তুলনায় অনেক বেশি।

রাজস্ব আদায়ে বিপুল বৃদ্ধিও লক্ষণীয়-২০১৪–১৫ সালে যেখানে মদ থেকে রাজস্ব ছিল প্রায় ৩,৫০০ কোটি টাকা, ২০২২–২৩ সালে তা বেড়ে দেড় লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

উৎসবের মৌসুমে-বিশেষত দুর্গাপুজো, ৩১ ডিসেম্বর ও পয়লা জানুয়ারি-বিক্রি রেকর্ড ছাড়ায়। জেলাগুলোর মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর শীর্ষে রয়েছে।

দেশজুড়ে মদ্যপানের হার

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (NFHS–5) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ২৫.৭% মদ্যপান করেন। গোয়ায় এর হার ৬০%, আর অরুণাচল প্রদেশে ৫৬%।
বিহারে মদ নিষিদ্ধ থাকায় হার কম, মাত্র ১৭%।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমীক্ষার পর বাস্তবতা বদলেছে-এখন আরও বেশি মানুষ মদ্যপান করছেন।

ভিওডি বাংলা/জা
 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গাজার স্থায়ী শান্তির দাবি তুরস্কের
গাজার স্থায়ী শান্তির দাবি তুরস্কের
পেরুতে বাস খাদে পড়ে মৃত্যু ৩৭
পেরুতে বাস খাদে পড়ে মৃত্যু ৩৭
অভিবাসী গ্রহণ থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে জার্মানি
অভিবাসী গ্রহণ থেকে অব্যাহতি চাইতে পারে জার্মানি